আমি বিশ বছর বয়সী মুসলিম মেয়ে। আমি একজন বিদেশী খ্রিস্টান ছেলেকে ভালবাসি, সে আরবী বলতে পারে না। আমার জন্যে খ্রিস্টান ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া কি জায়েয; যদি আমার ধর্ম নিরাপদে থাকে। আমি পরিপূর্ণ নিশ্চিত যে, আমার ইসলামের উপর তা কোন প্রভাব ফেলবে না। এ প্রশ্নের উত্তর যদি ‘না-বোধক’ হয়; তাহলে আমি কিভাবে তাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতে পারি? আপনাদের নিকট কি ইসলামের দিকে আহ্বান করার সংস্থা আছে; যাতে আমি তাকে সেসব সংস্থাতে যোগ দিতে বলতে পারি।
মুসলিম মেয়ে খ্রিস্টান ছেলেকে ভালবাসে এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়
প্রশ্ন: 100148
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
মুসলমানদের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে- কোন মুসলিম নারীর জন্য কাফেরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নেই। সে কাফের ইহুদী হোক, খ্রিস্টান হোক, কিংবা অন্য কিছু হোক। আল্লাহ তাআলা বলেন: “ঈমান না আনা পর্যন্ত মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিও না। মুশরিক পুরুষ তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও অবশ্যই মুমিন ক্রীতদাস তার চেয়ে উত্তম। ওরা জাহান্নামের দিকে ডাকে; আর আল্লাহ তোমাদেরকে নিজ ইচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে ডাকেন এবং তিনি মানুষের জন্য তাঁর আয়াতমালা (নিদর্শনাবলি) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা শিক্ষা নিতে পারে।” [সূরা বাকারা, আয়াত: ২২১] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন নারী, তবে তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিও না। মুমিন নারীগণ কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিরগণ মুমিন নারীদের জন্য বৈধ নয়।”[সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ১০]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: “মুসলমানগণ একমত যে, কোন কাফের মুসলমান থেকে মিরাছ (পরিত্যক্ত সম্পত্তি) পাবে না। কোন কাফের মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।”[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা (৩/১৩০) থেকে সমাপ্ত]
এছাড়াও এটি নাজায়েয হওয়ার কারণ হচ্ছে- “ইসলাম মাথা উঁচু করতে এসেছে; মাথা নত করতে নয়” যেমনটি বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।[হাদিসটি দারাকুতনী বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহিহ জামে গ্রন্থে (নং ২৭৭৮) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]
স্ত্রীর উপর স্বামীর কর্তৃত্ব রয়েছে। তাই কোন মুসলিম নারীর উপর কাফেরকে কর্তৃত্ব দেয়া নাজায়েয। কারণ ইসলাম সত্য ধর্ম; ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম বাতিল। যদি এ বিধান জেনেশুনে কোন মুসলিম মেয়ে কাফেরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাহলে সে মেয়ে ব্যভিচারী গণ্য হবে। তার শাস্তি হচ্ছে- ব্যভিচারিনীর শাস্তি। আর যদি না জেনে বিয়েতে জড়িয়ে যায় তাহলে সে নারীর অপারগতা গ্রহণযোগ্য; তবে তালাক ছাড়াই তাদের দুজনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা ফরজ। কারণ এ বিয়ে বাতিল।
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলতে চাই, যে মুসলিম নারীকে আল্লাহ তাআলা ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন তার উপর ফরজ ও তার অভিভাবকের উপর ফরজ এ ধরণের সম্পর্ক করা থেকে সাবধান হওয়া, আল্লাহ তাআলার দেয়া সীমারেখা লঙ্ঘন না করা, ইসলামকে নিয়ে গৌরববোধ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যে কেউ সম্মান-প্রতিপত্তি চায়, তবে সকল সম্মান-প্রতিপত্তির মালিক তো আল্লাহ্ই।”[সূরা ফাতির, আয়াত: ১০]
আমরা এই নারীকে উপদেশ দিচ্ছি তিনি যেন এ খ্রিস্টান ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কারণ কোন নারীর জন্য বেগানা কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক করা নাজায়েয। ইতিপূর্বে নং 23349 প্রশ্নোত্তরে সে বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।
আর যদি সে খ্রিস্টান ছেলে নিজের মন থেকে আগ্রহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে তখন সে ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে কোন আপত্তি নেই; যদি তার অভিভাবক এতে রাজী হন।
আমরা এ নারীকে সে উপদেশ দিচ্ছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নির্দেশ দিয়েছেন, সে যেন দ্বীনদার ও চরিত্রবান ছেলে নির্বাচন করে।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, তার দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করে দেন, তাকে প্রজ্ঞা দান করেন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব