মুসলমানদেরকে উদ্ধার করার জন্য মাহদী কবে বের হবেন; সেটা কি কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে?
মাহদীর আবির্ভাব
Soru: 10301
Allah'a hamdolsun ve peygamberine ve ailesine salat ve selam olsun.
এক:
একজন মুসলিমের জানা আবশ্যক যে, দলিল প্রদান ও অনুসরণ করা আবশ্যক হওয়ার দিক থেকে কুরআন-হাদিস একই মর্যাদায়। কুরআন-সুন্নাহ উভয়টি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ওহী; যা অনুসরণ করা আবশ্যকীয়। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবী সম্পর্কে বলেন: “আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। সেটা ওহী ছাড়া আর কিছু নয়, যা তার কাছে প্রেরণ করা হয়।”[সূরা নাজম, আয়াত: ৩-৪]
মিকদাদ বিন মা’দী কারিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “জেনে রাখুন, আমাকে কিতাব ও কিতাবের সাথে কিতাবের অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখুন, অচিরেই এমন লোক আসবে যার উদর-পরিপূর্ণ, সে তার গদিতে বসে বলবে: আপনাদের উপর এই কুরআন মানা আবশ্যক। কুরআনে যেটাকে হালাল পাবেন সেটাকে হালাল জানবেন। আর যেটাকে হারাম পাবেন সেটাকে হারাম জানবেন।”[সুনানে আবু দাউদ (৪৬০৪), আলবানী ‘সহিহু সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (৩৮৪৮) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
দুই:
আল্লাহ্ তাআলা স্বতন্ত্রভাবে রাসূলের আনুগত্যের আদেশ করেছেন। তিনি বলেন: “ওহে যারা ঈমান এনেছ; তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর, আল্লাহ্র রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা নেতা তাদের”।[সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯] তিনি আরও বলেন: “রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন সেটা আঁকড়ে ধর এবং যা থেকে বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাক”।[সূরা হাশর, আয়াত: ৭]
তিন:
মাহদীর আবির্ভাব কবে ঘটবে কুরআন-সুনাহতে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে উদ্ধৃত হয়নি। তবে মাহদী শেষ যামানায় আত্মপ্রকাশ করবেন। কিন্তু এখানে কিছু বিষয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত:
১। মাহদীর আবির্ভাব কিয়ামতের সর্বশেষ ছোট আলামত।
২। অনেক মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য-লক্ষ্য ও তাদের ভ্রষ্ট আকিদা-বিশ্বাসকে সমর্থন করার জন্য মাহদী আত্মপ্রকাশ করেছেন কিংবা শীঘ্রই আত্মপ্রকাশ করবেন মর্মে দাবী করেছে। যেমন- কাদিয়ানীরা, বাহাই সম্প্রদায়, শিয়ারা এবং অন্যান্য পথভ্রষ্ট গোষ্ঠীগুলো। যার ফলে সাম্প্রতিক যামানার কিছু ব্যক্তি মাহদীর হাদিসগুলোকে অস্বীকার করেন কিংবা ভিন্নার্থে ব্যাখ্যা (তা’বীল) করেন যে, মাহদী দ্বারা উদ্দেশ্য শেষ যামানায় ঈসা বিন মারিয়াম আলাইহিস সালামের অবতরণ এবং তাদের কেউ কেউ একটি মারফু হাদিস দিয়ে দলিল দেন। যে হাদিসটির ভাষ্য হলো: “ঈসা বিন মারিয়াম ছাড়া কোন মাহদী নেই”।
এই হাদিসটি দুর্বল; এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ নয়।
[দেখুন: আল্লামা আলবানীর ‘আস-সিলসিলাতুয যায়ীফা’ (১/১৭৫)]
৩। অনেক আলেম মাহদীর আবির্ভাবকে সাব্যস্ত করে কিতাব লিখেছেন এবং তারা এটাকে একজন মুসলিমের আকিদার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন: হাফেয আবু নুআইম, আবু দাউদ, আবু কাছীর, আস-সাখাওয়ি, আশ-শাওকানী প্রমুখ।
৪। সুন্নাহতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, মাহদী ঈসা বিন মারিয়াম আলাইহিস সালামের সাথে মিলিত হবেন এবং ঈসা আলাইহিস সালাম মাহদীর পেছনে নামায আদায় করবেন।
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একদল সত্য দীনের উপর অটল থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে। তিনি বলেন: অবশেষে ঈসা বিন মারিয়াম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবতরণ করবেন। তখন তাদের (ঐ দলের) আমীর বলবেন: আসুন আমাদের নামাযের ইমামতি করুন। কিন্তু তিনি বলবেন: না; আপনারা একজন অন্যজনের উপর নেতা। এটা এই উম্মতের জন্য আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত সম্মান।”[সহিহ মুসলিম (১৫৬)]
এই হাদিসে উল্লেখিত আমীরই হলেন মাহদী; যা আবু নুআইম ও আল-হারিছ বিন উসামার বর্ণনায় এই ভাষ্যে উদ্ধৃত হয়েছে: “তখন তাদের আমীর মাহদী বলবেন…”। ইবনুল কাইয়্যেম বলেন: এই হাদিসের সনদ জায়্যিদ (ভালো)।
৫। একজন মুসলিমের মাহদীর অপেক্ষায় বসে থাকা উচিত নয়। বরং তার উচিত দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য উদ্যম-উৎসাহ নিয়ে প্রাণান্তকরভাবে অবিলম্বে চেষ্টা করা এবং দ্বীনের জন্য নিজের যা সাধ্যে আছে সেটি পেশ করা এবং মাহদী বা অন্য কারো আবির্ভাবের উপর নির্ভর না করা। বরঞ্চ ব্যক্তি নিজেকে, নিজের পরিবারকে এবং তার চারপাশে যারা আছে তাদেরকে সংশোধন করবে। পরপর সে আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাত করলে তখন সে নিজের পক্ষে ওজর পেশ করতে পারবে।
দেখুন: শাইখ মুহাম্মদ বিন ইসমাইলের ‘আল-মাহদী হাকীকাহ; না খুরাফাহ’।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
Kaynak:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব