এটা কি সঠিক যে, মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করা ইবাদতের মত?
মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করা কি ইবাদত?
প্রশ্ন: 103390
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা করার মানে আল্লাহর সৃষ্টিকুল নিয়ে চিন্তা করা। এতে তিনি যে অভিনব সৃষ্টি করেছেন তা নিয়ে ভাবা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর মহত্ত্ব ও কুদরতের পক্ষে দলিল পেশ করা। এটি এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে ঈমান বাড়ে, একীন পূর্ণতা লাভ করে। এ কারণে আল্লাহ্র কিতাবে পুনঃপুনঃ এই চিন্তাভাবনার প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ্ তাআলার এ বাণীতে: “বলুন, ‘তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর অতঃপর প্রত্যক্ষ কর, কিভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? তারপর আল্লাহ্ সৃষ্টি করবেন পরবতী সৃষ্টি। নিশ্চয় আল্লাহ্ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”[সূরা আনকাবুত, আয়াত: ২০] এবং আল্লাহ্ তাআলার এ বাণীতে: “তারা কি তাহলে উটগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং (তাকিয়ে দেখে না) আসমানের দিকে, কিভাবে তা উঁচু করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে সেগুলো স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, কিভাবে তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে।”[সূরা গাশিয়া, আয়াত: ১৭-২০]
এবং তাঁর এ বাণীতে: “আসমান-জমিনের সৃষ্টিতে, রাত-দিনের আবর্তনে, মানুষের উপকারী সামগ্রী নিয়ে জলপথে চলমান নৌযানে, আল্লাহ্ আকাশ থেকে যে পানি (বৃষ্টি) বর্ষণ করে তার সাহায্যে মৃত ভূমিকে জীবিত করেন তাতে, তিনি ভূমিতে যে সব পশু-প্রাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে, বাতাসের দিক-পরিবর্তনে এবং আকাশ আর ভূমির মাঝে ভাসমান মেঘরাশিতে অবশ্যই বুঝমান লোকদের জন্য নির্দশন রয়েছে।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৬৪]
যখন কোন মানুষ এই সৃষ্টিগুলোকে নিয়ে চিন্তা করবে, এগুলোকে সৃষ্টি করার হেকমত নিয়ে ভাববে, সৃষ্টির নিপুণতা নিয়ে কল্পনা করবে এবং এগুলোকে আল্লাহ্ অনুগত করে দেয়া নিয়ে চিন্তা করবে; এতে করে তার ঈমান ও একীন বৃদ্ধি পাবে এবং এই চিন্তার জন্য সে সওয়াব প্রাপ্ত হবে।
অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী উম্মত ও তাদের রাজ্যগুলোর পরিণতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। তাদের কুফরী ও অবাধ্যতার কারণে যে রাজ্যগুলোর পতন হয়েছে এবং এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করা। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা সালেহ আলাইহিস সালামের কওম ও তাদের রাজ্য সম্পর্কে এবং ছামুদদের রাজ্য সম্পর্কে বলেন: “অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণতি কেমন ছিল। তা এই ছিল যে, আমি তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। ঐ যে তাদের ঘরবাড়ি, তাদের অপকর্মের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। এতে জ্ঞানী লোকদের জন্য অবশ্যই একটি নিদর্শন আছে।”[সূরা আন-নামল, আয়াত: ৫১-৫২]
কিন্তু কেবল আনন্দ ও উপভোগের জন্য মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে সেটি ইবাদত নয়। বরং সেটি মুবাহ (বৈধ); তবে এই শর্তে যে, এটি যেন কোন ফরয ইবাদত পালনে প্রতিবন্ধক না হয় কিংবা কোন হারামে পতিত না করে।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব