উটপাখির মাংস খাওয়া কি জায়েয?
হ্যাঁ, আপনাদের জন্য উটপাখির মাংস খাওয়া জায়েয। কারণ আল্লাহ তাআলা আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব কিছুকে বান্দাদের সেবায় নিয়োজিত করার মাধ্যমে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
যে সমস্ত প্রাণী খাওয়া হালাল সেগুলোকে সীমাবদ্ধ করা কঠিন। সমস্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে মূল বিধান হলো: সামগ্রিক বিবেবচনায় হালাল হওয়া; কেবল যেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বিধান দেয়া হয়েছে সেগুলো ছাড়া। তাই হারাম প্রাণীগুলোকে নিম্নোক্ত তালিকায় সীমাবদ্ধ করা যায়:
এক: শূকর। কুরআন ও সুন্নাহর দ্ব্যর্থহীন দলিলের মাধ্যমে এটি হারাম এবং এটি হারাম হওয়ার সপক্ষে ইজমা সংঘটিত হয়েছে।
দুই: প্রত্যেক তীক্ষ্ণ দাঁতধারী হিংস্র প্রাণী। যেমন: সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ, নেকড়ে, কুকুর প্রভৃতি।
তিন: প্রত্যেক থাবাধারী পাখি। যেমন: চিল, বাজপাখি, শকুন, ঈগল ইত্যাদি।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক তীক্ষ্ণ দাঁতধারী হিংস্র প্রাণী এবং প্রত্যেক থাবাধারী পাখি থেকে নিষেধ করেছেন।”[হাদীসটি মুসলিম (১৯৩৪) বর্ণনা করেন]
চার: গৃহপালিত গাধা।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের বছর মুত’আ বিবাহ ও গৃহপালিত গাধার মাংস নিষিদ্ধ করেছেন।[হাদীসটি বুখারী (৫২০৩) ও মুসলিম (১৪০৭) বর্ণনা করেন]
পাঁচ: যে সব প্রাণী হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন: সাঁপ, বিচ্ছু ও ইঁদুর।
ছয়: নিকৃষ্ট প্রাণীসমূহ। কারণ হালাল বা হারাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য মূলনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উত্তম হওয়া বা নিকৃষ্ট হওয়া। শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ এটাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মূলনীতি গণ্য করেছেন। এক্ষেত্রে দলীল হলো আল্লাহর বাণী:
وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ
“তিনি তাদের জন্য খারাপ জিনিসগুলো হারাম করেন।”[সূরা আল-আ’রাফ: ১৫৭]
এবং আল্লাহর বাণী:
يَسۡـَٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰت
“তারা আপনার কাছে জানতে চায়, তাদের জন্য কী হালাল করা হয়েছে, আপনি বলুন: তোমাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল করা হয়েছে।”[সূরা মায়েদা: ৪]
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, উটপাখির মাংস হালাল। ফকীহরা বেশ কয়েকটি স্থানে উটপাখির মাংস হালাল হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে:
ক. জবাই। কিভাবে জবাই করা প্রাণীর জন্য আরামদায়ক সেটি উল্লেখ করতে গিয়ে তারা বলেছেন: যে প্রাণীর গলা ছোট তার গলায় জবাই করা হবে। আর যে প্রাণীর গলা লম্বা, তার গলদেশে জবাই করা হবে। যেমন: উট, উটপাখি ও রাজহাঁস। কারণ এভাবে জবাই করা রূহ বের হওয়ার জন্য সহজতর।
খ. ইহরাম অবস্থায় শিকারকৃত প্রাণীর বদলা দান। শাফেয়ী বলেন: ‘ইহরামরত ব্যক্তি যদি একটি উটপাখি শিকার করে তাহলে তার উপর একটি উট ওয়াজিব হবে।’[আল-উম্ম: (২/২১০)]
গ. উটপাখির নানান অংশ হালাল হওয়া। ইবনে হাযম বলেন: “যে ব্যক্তি শপথ করেছে যে সে ডিম খাবে না, সেক্ষেত্রে তার শপথ কেবল মুরগীর ডিম খেলেই ভঙ্গ হবে। উটপাখি ও অন্য সকল পাখির ডিম খেলে ভঙ্গ হবে না। মাছের ডিম খেলেও শপথ ভঙ্গ হবে না। এর কারণ যা আমরা ইতঃপূর্বে উল্লেখ করেছি। এটি আবু হানীফা, শাফেয়ী ও আবু সুলাই্মানের মত।”[আল-মুহাল্লা: (৬/৩২৭)]
একটি ফায়দা:
ফাইয়ুমী বলেন:
نعامة শব্দটি নর-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, বহুবচনে نعام।[আল-মিসবাহুল মুনীর: (পৃ. ৬১৫)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।