প্রশ্ন :
প্রায় দেড় বছর ধরে আমার দাদী/নানী অসুস্থ। তাঁর হুঁশ নেই, তিনি কথা বলতে পারেন না এবং খাবারদাবারও চান না। যদি আমরা তাঁকে কোন খাবার দেই তবে তিনি খান। তাঁর সাথে কেউ কথা বললে তিনি কদাচিৎ তাকে চিনতে পারেন। তাঁর যা প্রয়োজন সেটাও তিনি আমাদেরকে বলেন না।[যেমন ধরুন তিনি বলেন না যে, আমি টয়লেটে যাব। আল্লাহ আপনাদেরকে সম্মানিত করুন**] তাঁর অবস্থা হলো- তিনি কোন নড়াচড়া ছাড়া বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকেন। তাঁর ছেলেরা তাঁকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। আমি তাঁর সিয়াম ও সালাতের ব্যাপারে জানতে চাই। আমরা কি তাঁর পক্ষ থেকে ফিদিয়া আদায় করব এবং ইতিপূর্বে গত অবস্থার জন্য আমাদের কোন করণীয় আছে কী?
[** আরবী ভাষাভাষীরা অপবিত্র জিনিস যেমন জুতো, টয়লেট ইত্যাদির কথা উল্লেখের পর সাধারণত “আল্লাহ আপনাদের সম্মানিত করুন” এই দু‘আটি উল্লেখ করে থাকে।]
এক ব্যক্তির দাদী অসুস্থ ও বেহুঁশ। রোযা পালন না করার কারণে কি তাঁকে কাফ্ফারা দিতে হবে
প্রশ্ন: 106965
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
সমস্তপ্রশংসাআল্লাহরজন্য।
যিনিবয়সের ভারেদেহ ও মনের চরম অবনতির পর্যায়েপৌঁছে গেছেন,তাঁর বিবেক-বুদ্ধিলোপ পেয়েগেছে, হুঁশ থাকেনা এমনব্যক্তিনামায-রোযারদায়িত্ব থেকেঅব্যাহতিপেয়ে যান। তাঁরউপর কোন কাফ্ফারাআদায়করাওআবশ্যক নয়।কারণমুকাল্লাফ(শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত)হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছেবিবেকবুদ্ধিসম্পন্নহওয়া।
নবীসাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়াসাল্লামবলেছেন :“তিনব্যক্তিরউপরথেকে (দায়িত্বের) কলমউঠিয়েনেয়াহয়েছেঃ (১) ঘুমন্তব্যক্তিজাগ্রতহওয়াপর্যন্ত (২) শিশুবালিগহওয়াপর্যন্তএবং (৩) পাগল বিবেকবুদ্ধিফিরেপাওয়াপর্যন্ত ।”[আবুদাউদ (৪৪০৩), তিরমিযী ( ১৪২৩), নাসা’ঈ (৩৪৩২), ইবনেমাজাহ (২০৪১)]আবুদাউদবলেছেন: “এহাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনেজুরাইজক্বাসিম ইবনে ইয়াজিদহতে, তিনি আলীরাদিয়াল্লাহুআনহুহতে,তিনি নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহিওয়া সাল্লামহতে এবং এ বর্ণনাতেতিনিوَالْخَرِفِ (বয়োবৃদ্ধ)শব্দটি যোগকরেছেন।শাইখ আলবানীএইহাদিসটিকে ‘সহীহ আবুদাউদ’গ্রন্থে সহীহ হিসেবেচিহ্নিতকরেছেন।
আউনুল মাবুদ গ্রন্থেবলেছেন:
“আলখারিফ”শব্দটি“আলখারাফ”শব্দহতে উদ্ভূত। এরঅর্থ হলোবার্ধক্যেরকারণে বুদ্ধিলোপ পাওয়া। হাদিসে এশব্দটির অর্থহলো অতিশয়বৃদ্ধব্যক্তি,বার্ধক্যেরকারণে যার বুদ্ধি-বৈকল্যঘটেছে। অতিবৃদ্ধব্যক্তির কখনো কখনোবুদ্ধিভ্রমহতে পারে। যারফলে তিনি ভালমন্দ বিচার করতেপারেন না।এমতাবস্থায়তিনি আরমুকাল্লাফ (দায়িত্বপ্রাপ্ত)বলে বিবেচিত হননা।এ অবস্থাকেপাগলামিও বলাযায় না।সমাপ্ত
শাইখইবনেউছাইমীনরাহিমাহুল্লাহবলেছেন:
“নিম্নোক্তশর্ত ব্যতিরেকেকারো উপর রোযাপালন করাওয়াজিব হয় না:
১. বিবেকবুদ্ধি সম্পন্নহওয়া
২. সাবালগহওয়া
৩. ইসলাম
৪.সক্ষমতাথাকা
৫. সংসারী(মুকিম)হওয়া,সফরেনাথাকা
৬.নারীদেরক্ষেত্রেহায়েয ওনিফাসমুক্তহওয়া
প্রথমশর্ত:
বিবেকবুদ্ধিসম্পন্নহওয়া।এরবিপরীতহলবুদ্ধি-বৈকল্যহওয়া।তাপাগলামিরকারণেহোকবাবার্ধক্যজনিতঅক্ষমতারকারণে হোকঅথবাকোন দুর্ঘটনারকারণেবোধশক্তিওঅনুভুতিশক্তিলোপ পেয়ে যাক। বিবেকবুদ্ধিলোপ পাওয়ারকারণেএব্যক্তিরউপরকোন শরয়িদায়িত্ববর্তায়না। এরউপরভিত্তিকরেবলাযায়যে, বৃদ্ধব্যক্তিযদিবার্ধক্যজনিতঅক্ষমতারচরমপর্যায়েপৌঁছেতবেতাঁরউপররোযাবাফিদিয়াপ্রদান করারদায়িত্ববর্তায়না।কারণতাঁরবিবেকবুদ্ধিঅনুপস্থিত।”সমাপ্ত[লিক্বাউলবাবিল মাফতূহ ( ৪/২২০)]
পক্ষান্তরেইতিপূর্বেযা গত হয়েছেসে সময়েরক্ষেত্রে উনারঅবস্থা যদিএমনই হয়েথাকে যে উনারকোন জ্ঞান বাউপলব্ধিছিল না তবেতাঁর উপর কোন সিয়ামবা কাফ্ফারানেই।আরযদি তাঁরজ্ঞান ওবোধশক্তিথেকে থাকেকিন্তু রোগেরকারণে সিয়ামত্যাগ করেথাকেনসেক্ষেত্রেদুটি অবস্থাহতে পারে :
(১)যদি সে সময়তাঁর রোগমুক্তিরআশা ছিল।কিন্তু তিনিসুস্থ না হয়ে রোগআরো দীর্ঘায়িত হয়। তবে তারউপর কোন কিছুবর্তায় না।কারণ তাঁরওয়াজিব ছিলসুস্থ হওয়ারপর কাযা আদায়করা।কিন্তু তিনিতো আর সুস্থহননি।
(২) আরযদিঅবস্থা এমন হয়যে,সেসময়েওতারসুস্থহওয়ার কোন আশাছিলনাতবেতারপক্ষথেকেপ্রতিদিনেরপরিবর্তেকাফ্ফারাআদায়করাওয়াজিব। কাফফরাহচ্ছেএকজন মিসকীনকেঅর্ধসা‘পরিমাণ স্থানীয়খাদ্যদ্রব্যপ্রদান করা। আপনারাযদি এ কাফফারাআদায় না করেথাকেন তবেতাঁরসম্পদথেকেতাআদায়করুন। আমরাআল্লাহতা‘আলারকাছেতাঁরসুস্থতাও রোগনিরাময়েরদোয়া করছিএবংআপনাদেরজন্যতাওফিক ওদৃঢ়তারপ্রার্থনাকরছি।
আল্লাহইসবচেয়ে ভালজানেন।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব