সুন্নাহ অনুযায়ী জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়ার সঠিক সময় কোনটি? আমরা কি ফজরের পর থেকে জুমার নামাযের আগ পর্যন্ত সময়ে পড়ব? নাকি ঐ দিন যে কোন সময়ে পড়ব? অনুরূপভাবে জুমার দিন সূরা আলে-ইমরান পড়া কি সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত? যদি উত্তর হয়: হ্যাঁ; তাহলে আমরা কখন সূরা আলে-ইমরান পড়ব?
জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়ার সময়
প্রশ্ন: 10700
উত্তরের সংক্ষিপ্তসার
জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়ার সময় বৃহষ্পতিবার সূর্য ডোবা থেকে জুমাবারের সূর্য ডোবা পর্যন্ত।
Table Of Contents
জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়ার ফযিলত
জুমার দিনে বা রাতে সূরা কাহাফ পড়ার ফযিলত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিছু সহিহ হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি জুমার রাতে সূরা কাহাফ পড়বে এটি তার জন্য তার মাঝে ও আল-বাইতুল আতীকের মধ্যবর্তী (স্থান) আলোকিত করে দিবে।”[এই উক্তিটিকে আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৬৪৭১) সহিহ বলেছেন]
২। “যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে এটি তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী (সময়) নূরে আলোকিত করে দিবে।”[মুসতাদরাকে হাকেম (২/৩৯৯) ও বাইহাকী (৩/২৪৯)] ইবনে হাজার ‘তাখরিজুল আযকার’ গ্রন্থে বলেন: হাসান হাদিস। তিনি আরও বলেন: সূরা কাহাফ পড়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদিসগুলোর মধ্যে এটি সর্বাধিক শক্তিশালী। দেখুন: ফাইযুল ক্বাদির (৬/১৯৮), আলবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (৬৪৭০) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
৩। ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে তার জন্য তার পায়ের নীচ থেকে আসমানের মেঘমালা পর্যন্ত একটি আলো বিচ্ছুরিত হবে এবং দুই জুমার মধ্যবর্তী তার যা (গুনাহ) আছে সেটা থেকে তাকে মাফ করে দেয়া হবে।”
মুনযিরি বলেন: আবু বকর ইবনে মারদাওয়াইহ তাঁর তাফসিরে হাদিসটি এমন এক সনদে সংকলন করেছেন যাতে কোন সমস্যা নেই।[আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (১/২৯৮)]
জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়ার সময়:
সূরা কাহাফ জুমার রাত বা জুমার দিনে পড়া হবে। জুমার রাত শুরু হয় বৃহষ্পতিবার সূর্য ডোবা থেকে এবং শেষ হয় জুমাবারের সূর্য ডোবার মাধ্যমে। অতএব, সূরা কাহাফ পড়ার সময় হচ্ছে: বৃহষ্পতিবার সূর্য ডোবা থেকে শুরু করে জুমাবারের সূর্য ডোবা পর্যন্ত।
মুনাওয়ি বলেন: হাফেয ইবনে হাজার তাঁর ‘আমালীতে’ বলেছেন: এভাবে কিছু রেওয়ায়েতে ‘জুমার দিন’ উদ্ধৃত হয়েছে। আর কিছু রেওয়ায়েতে ‘জুমার রাত’ উদ্ধৃত হয়েছে। উভয়টির মাঝে সমন্বয় এভাবে যে, উদ্দেশ্য হচ্ছে: রাতসহ দিন এবং দিনসহ রাত।[ফাইযুল কাদির (৬/১৯৯)]
মুনাওয়ি আরও বলেন:
অতএব, জুমার দিনে সেই সূরা পড়া মুস্তাহাব; অনুরূপভাবে জুমার রাতেও— যেমনটি ইমাম শাফেয়ি দ্ব্যর্থহীন ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন।[ফাইযুল কাদির (৬/১৯৮)]
জুমার দিন সূরা আলে-ইমরান পড়া কি মুস্তাহাব:
জুমার দিন সূরা আলে ইমরান পড়ার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস উদ্ধৃত হয়নি। যা কিছু উদ্ধৃত হয়েছে সবগুলো খুবই দুর্বল কিংবা মাওযু (বানোয়াট)।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি জুমার দিন ঐ সূরাটি পড়বে যাতে ইমরান পরিবারের উল্লেখ রয়েছে তার প্রতি আল্লাহ্ রহমত নাযিল করেন ও ফেরেশতারা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত।[তাবারানীর সংকলিত ‘আল-মুজামুল ওয়াসাত’ (৬/১৯১) ও ‘আল-মুজামুল কাবির’ (১১/৪৮)]
হাদিসটি খুবই দুর্বল কিংবা মাওযু (বানোয়াট)। হাইছামী বলেন: তাবারানী ‘আল-আওসাত’ ও ‘কাবীর’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। এর সনদে তালহা বিন যায়েদ আর্-রাক্বী রয়েছে। যিনি (খুবই) দুর্বল।[মাজমাউয যাওয়ায়েদ (২/১৬৮)]
ইবনে হাজার বলেন: তালহা খুবই দুর্বল। আহমাদ ও আবু দাউদ তাকে হাদিস বানানোর জন্য অভিযুক্ত করেছেন। দেখুন: ফাইযুল ক্বাদির (৬/১৯৯)
শাইখ আলবানী বলেন: মাওযু (বানোয়াট)। দেখুন: যায়িফুল জামে; হাদিস নং (৫৭৫৯)।
এই ধরণের আরেকটি হাদিস হচ্ছে যা তাইমী ‘আত্-তারগীব’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার রাতে সূরা বাক্বারা ও সূরা আলে ইমরান পড়বে তার জন্য এমন সওয়াব অর্জিত হবে; যা বাইদা (অর্থাৎ সপ্ত জমিন) থেকে উরুবান (সপ্ত আকাশ) এর মধ্যবর্তী।
মুনাওয়ি বলেন: এটি গরীব (বিরল) ও যয়ীফ জিদ্দান (খুবই দুর্বল)।[ফাইযুল ক্বাদির (৬/১৯৯)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আরও জানতে দেখুন: জুমার সুন্নত ও আদবসমূহ।
সূত্র:
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ