যে ব্যক্তি কাযা পালন করতে ভুলে গেছে এবং আরেক রমযান চলে এসেছে
প্রশ্ন: 107780
যে ব্যক্তি কাযা পালন করতে ভুলে গেছে এবং আরেক রমযান চলে এসেছে তার হুকুম কী?
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
ফিকাহবিদগণ এই মর্মে একমত যে, ভুলে যাওয়া একটি ওজর; যে ওজরের কারণে সব ধরণের সীমালঙ্ঘনের পাপ ও শাস্তি মওকুফ করা হয়— এ সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহ্র অনেক দলিলের কারণে। তবে তারা এ নিয়ে মতভেদ করেছেন যে, ভুলে যাওয়া ব্যক্তির উপর ফিদিয়া দেয়া বা এ জাতীয় কিছু কি বর্তাবে?
রমযানের রোযা কাযা পালনের কথা এমনভাবে ভুলে যাওয়া যে, অন্য রমযান চলে আসা সংক্রান্ত সবিশেষ এ মাসয়ালায় আলেমগণ একমত যে, পরবর্তী রমযানের পর কাযা পালন করা তার উপর ওয়াজিব। ভুলে যাওয়ার কারণে সেটি মওকুফ হবে না। তবে কাযা পালনের সাথে ফিদিয়া দেয়া (মিসকীন খাওয়ানো) ওয়াজিব কিনা এ ব্যাপারে তারা দ্বিমত করেছেন। এক অভিমত মতে: তার উপর ফিদিয়া দেয়া ওয়াজিব নয়। কেননা ভুলে যাওয়া এমন ওজর যার কারণে গুনাহ ও ফিদিয়া প্রদান মওকুফ হয়। শাফেয়ি মাযহাবের অধিকাংশ আলেম ও মালেকি মাযহাবের কিছু কিছু আলেমের অভিমত এটি।
দেখুন: ইবনে হাজার হাইতামি-র ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ (৩/৪৪৫), নিহায়াতুল মুহতাজ (৩/১৯৬), মিনাহুল জালিল (২/১৫৪), এবং শারহু মুখতাছারি খলিল (২/২৬৩)।
দ্বিতীয় অভিমত: তার উপর ফিদিয়া প্রদান ওয়াজিব। ভুলে যাওয়া এমন একটি ওজর যার কারণে কেবল গুনাহ মওকুফ হয়। এটি শাফেয়ি মাযহাবের আলেম খতবী শারবানী এর অভিমত। তিনি ‘মুগনিল মুহতাজ’ গ্রন্থে (২/১৭৬) বলেন: “তিনি বলেন: বাহ্যতঃ এর মাধ্যমে তার পাপ মওকুফ হবে; ফিদিয়া নয়”। কিছু মালেকী আলেম এটি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেছেন।
দেখুন: মাওয়াহিবুল জালিল শারহু মুখতাছারি খলিল (২/৪৫০)।
অগ্রগণ্য অভিমত: ইনশা আল্লাহ্প্রথম অভিমত। নিম্নোক্ত দলিলের কারণে:
এক. ভুলে যাওয়া ব্যক্তির শাস্তি মওকুফ সংক্রান্ত আয়াত ও হাদিসসমূহের সার্বিকতা। যেমন আল্লাহ্র বাণী: “হে আমাদের প্রভু, যদি আমরা ভুল যাই কিংবা ভুল করি তাহলে আমাদেরকে শাস্তি দিবেন না।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৮৬]
দুই. মূল অবস্থা হল ব্যক্তির দায় মুক্ততা। তাই কোন দলিল ছাড়া তার উপর কাফ্ফারা কিংবা ফিদিয়ার দায় বর্তানো জায়েয নয়। কিন্তু এই মাসয়ালাতে এমন কোন শক্তিশালী দলিল নেই।
তিন. মূলতঃ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কাযা পালনে বিলম্ব করেছে তার উপরই এই ফিদিয়া ওয়াজিব কিনা সেট মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়। হানাফী মাযহাব ও জাহেরী মাযহাবের মতে এটি ওয়াজিব নয়। শাইখ উছাইমীন ফিদিয়া দেয়া মুস্তাহাব হওয়ার মতকে নির্বাচন করেছেন। কারণ এই ফিদিয়ার বিধান সাব্যস্তের ক্ষেত্রে কেবল কিছু কিছু সাহাবীর আমল ছাড়া অন্য কোন দলিল উদ্ধৃত হয়নি। আর এ দলিলটি দিয়ে মানুষকে ফিদিয়া দিতে বাধ্য করার মত শক্তি এতে নেই; তাহলে ওজরগ্রস্ত ব্যক্তিকে কিভাবে এই দলিল দিয়ে ফিদিয়া দিতে বাধ্য করা হবে; যে ওজরটি আল্লাহ্র কাছে গ্রহণযোগ্য এমন ওজরের ক্ষেত্রে।
দেখুন: 26865 নং প্রশ্নোত্তর।
জবাবের সারসংক্ষেপ: তার উপর শুধু কাযা পালন ওয়াজিব। তাকে খাদ্য খাওয়াতে হবে না। বর্তমান রমযানের পর সে রোযাগুলো কাযা পালন করবে।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
![answer](/_next/image?url=%2F_next%2Fstatic%2Fmedia%2Fanswer.91a384f1.png&w=64&q=75)
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ