কিছু মানুষ দাবি করে তারা রমযানের চাঁদ দেখেছে। এদিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করে ঐ রাতে চাঁদ দেখা সম্ভব না। আমার কাছে এটা সমস্যা না; কারণ হিসাব ভুল হতে পারে, গণনায় এদিক-সেদিক হতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করে তারা তাদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে চাঁদের খোঁজ করেও সে রাতে চাঁদ দেখতে পায়নি। সুতরাং আধুনিক ও উন্নত যন্ত্রপাতি দিয়ে না দেখা গেলে খালি চোখে কী করে দেখা সম্ভব? বিষয়টা যদি বিষয়টি উল্টা হত অর্থাৎ যন্ত্রপাতি দিয়ে দেখা গিয়েছে কিন্তু চোখে দেখা যায়নি তাহলে মতভেদ করা বৈধ হত যে, রোযা রাখা যাবে নাকি যাবে না? মানুষজন কি ঈদ উদযাপন করবে; নাকি উদযাপন করবে না? কিন্তু সমস্যা হলো মানুষজন কীভাবে খালি চোখে দেখতে পায় অথচ যন্ত্রপাতি দিয়ে দেখা যায় না? আসলে আমি আপনাদের কাছে বিশদ বিবরণ চাই যাতে আমার মন থেকে সংশয় ও দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। আমার মনে হয় না এই প্রশ্নটা আমার একার।
মাসের সূচনা ও সমাপ্তি নির্ণায়ক হলো চাঁদ দেখা
প্রশ্ন: 110350
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
রমযান মাসের সূচনা সাব্যস্ত করার নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো চাঁদ দেখা কিংবা শা‘বান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ হওয়া; যদি চাঁদ দেখা না যায়। সহিহ সুন্নাহ এটাই প্রমাণ করে এবং আলেমগণ এর উপর ইজমা করেছেন। বুখারী (১৯০৯) ও মুসলিম (১০৮১) গ্রন্থদ্বয়ে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ; চাঁদ দেখে রোযা ভাঙ (ঈদ পালন কর)। আর যদি আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শা’বান মাসের দিনসংখ্যা ত্রিশ পূর্ণ করবে।”
জ্যোতির্বিদদের হিসাব বিবেচ্য নয়। দেখার ক্ষেত্রে মূল অবস্থা হল খালি চোখে দেখা। কিন্তু যদি আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নতুন চাঁদ দেখা যায় তাহলে সেই দেখার ভিত্তিতে আমল করা যাবে; যেমনটি ইতিপূর্বে 106489 নং প্রশ্নোত্তরে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে খালি চোখে দেখা যায়; অথচ দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যায় না— সেটা কীভাবে হতে পারে? এর জবাব হলো: চাঁদ দেখার স্থান-কালের ভিন্নতার কারণে এমনটা হতে পারে।
যাই হোক, হুকুমটি নতুন চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল; যদি নির্ভরযোগ্য একজন বা দুইজন মুসলিম নতুন চাঁদ দেখে থাকে তাহলে সেই দেখার ভিত্তিতে আমল করা ওয়াজিব।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রধান শাইখ সালিহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান হাফিযাহুল্লাহ বলেন: “আব্দুল্লাহ আল-খুদাইরী নামে এক ভাই আছেন, নতুন চাঁদ পর্যবেক্ষণে প্রসিদ্ধ একজন ব্যক্তি। তিনি চাঁদের বহুবিধ অবস্থা অবলোকন করেছেন; এমনকি নতুন চাঁদ নয় এমন অবস্থাগুলোও। কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী তার কাছে গিয়েছিল এবং তারা সবাই ‘হুতা সুদাইর’ এলাকা (সৌদিতে চাঁদ দেখার জন্য নির্ধারিত এলাকা) একত্র হয়েছিল। তিনি আমাকে জানান যে তারা তাদের কম্পিউটারের হিসাব ও নির্ধারণ অনুযায়ী ঐ রাতের চাঁদ উঠার একটি জায়গা নির্ধারণ করে। তিনি তাদেরকে বলেন যে তারা যে জায়গা থেকে চাঁদ উঠার কথা বলছে সেখান থেকে উঠবে না। কারণ তিনি তাদের আগেই গত রাতে চাঁদ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি প্রতিরাতে চাঁদের উদয়স্থলগুলো জানতেন; পূর্ববর্তী রাতের পরবর্তী রাতের উদয়স্থল। এরপর যখন চাঁদ উদিত হল তখন তার নির্ধারণকৃত স্থান দিয়ে উদিত হল; তাদের (জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের) নির্ধারণ অনুযায়ী নয়। তিনি এই বলে তাদের পক্ষে কৈফিয়ত দেন যে, তারা চাক্ষুষ দেখে স্থানটি নির্ধারণ করেনি। বরং নিজেদের কাছে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্ধারণ করেছিল।”[আর-রিয়াদ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকার থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ