0 / 0

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়াবলী

প্রশ্ন: 11356

ইহরাম অবস্থায় মুহরিমকে কোন কোন বিষয় থেকে বিরত থাকতে হবে?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়াবলী: ইহরামের কারণে ব্যক্তিকে যে বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে হয়। যেমন:

১. মাথার চুল মুণ্ডন করা। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী: “আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুণ্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবানীর পশু যথাস্থানে পৌঁছে যাবে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৬] আলেমগণ মাথার চুলের সাথে শরীরের সমস্ত পশমকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অনুরূপভাবে নখ কাটা ও ছোট করাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

২. ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা; কাপড়ে হোক কিংবা শরীরেহোক; খাবারদাবারে হোক কিংবা গোসলের সামগ্রীতে হোক কিংবা অন্য যে কোন কিছুতে হোক। অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম। দলিল হচ্ছে- যে ব্যক্তিকে একটি উট পায়ের নীচে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে সে ব্যক্তি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও। দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তার মাথা ঢাকবে না। তাকে হানুত দিবে না”। হানুত হচ্ছে- এক জাতীয় সুগন্ধির মিশ্রণ যা মৃত ব্যক্তির গায়ে লাগানো হয়।

৩. সহবাস করা: দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “অর্থ- হজ্বের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে নিজের উপর হজ্ব অবধারিত করে নেয় সে হজ্বের সময় কোন যৌনাচার করবে না, কোন গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না।”[সূরা বাকারা, আয়াত ২: ১৯৭]

৪. উত্তেজনাসহ স্ত্রীকে ছোঁয়া। যেহেতু এটি আল্লাহ তাআলার বাণী: فَلَا رَفَثَ (অর্থ- যৌনাচার নেই) এর অধীনে পড়বে। কারণ মুহরিম ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা কিংবা বিয়ের প্রস্তাব দেয়া জায়েয নেই। সুতরাং ছোঁয়া জায়েয না হওয়াটা আরও স্বাভাবিক।

৫. কোন শিকার হত্যা করা। দলিল আল্লাহ তাআলার বাণী: “অর্থ- হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৯৫] গাছ কর্তন করা মুহরিম ব্যক্তির জন্য হারাম নয়; তবে মক্কার হারামের সীমানার ভেতরের কোন গাছ হলে হারাম হবে এবং সেটি মুহরিম ব্যক্তি, মুহরিম নয় এমন ব্যক্তি- সবার জন্য হারাম। তাই আরাফার মাঠে মুহরিম ব্যক্তির জন্যেও গাছ উপড়ানো জায়েয। কারণ গাছ কর্তনের বিষয়টি হারাম এলাকার সাথে সম্পৃক্ত; ইহরামের সাথে নয়।

৬. ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য খাস নিষিদ্ধ বিষয়াবলীর মধ্যে রয়েছে- জামা, টুপি, পায়জামা, পাগড়ি ও মোজা পরিধান করা। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে মুহরিম কী পরিধান করবে; তখন তিনি বলেন: “মুহরিম ব্যক্তি জামা, টুপি, পায়জামা, পাগড়ি ও মোজা পরিধান করবে না। তবে যে ব্যক্তির পরার মত লুঙ্গি নেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পায়জামা পরার অনুমতি দিয়েছেন এবং যার জুতা নেই তাকে মোজা পরার অনুমতি দিয়েছেন।

আলেমগণ এ পাঁচটি পরিধেয়কে একত্রে ‘مخيط’ (মাখিত অর্থ- সেলাইকৃত) বলে থাকেন। অনেক সাধারণ মানুষ مخيط (সেলাইকৃত) বলতে যে পোশাকে خياطة (সেলাই) আছে সেটা বুঝে থাকে; আসলে বিষয়টি এমন নয়। বরং এর দ্বারা আলেমগণ উদ্দেশ্য করে থাকেন এমন পোশাক যা মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবয়ব অনুযায়ী কেটে তৈরী করা হয়েছে; যেমন- জামা, পায়জামা। এটাই তাদের উদ্দেশ্য। তাইতো কোন মুহরিম যদি তালি দেয়া চাদর পরিধান করে কিংবা তালি দেয়া লুঙ্গি পরিধান করে তাতে কোন অসুবিধা নেই। অথচ তিনি যদি সেলাইবিহীন জামা পরিধান করে সেটা হারাম হবে।

৭. ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য খাস নিষিদ্ধ বিষয়াবলীর মধ্যে রয়েছে- নেকাব। নেকাব হচ্ছে এমনভাবে মুখ ঢাকা যাতে চোখ দুটো ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। অনুরূপভাবে স্কার্ফ পরাও নিষিদ্ধ। ইহরাম অবস্থায় নারীগণ নেকাব বা স্কার্ফ পরবে না। নারীর মুখ খোলা রাখা শরিয়তসঙ্গত। তবে বেগানা পুরুষের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে মুখ ঢেকে নিবে; যে কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকবে সেটা যদি মুখ স্পর্শ করে তাতে কোন অসুবিধা নেই।

যে ব্যক্তি ভুলে গিয়ে, কিংবা অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা জোরজবরদস্তির শিকার হয়ে এ নিষিদ্ধ কাজগুলোর কোনটিতে লিপ্ত হয় তাহলে তার উপর কোন দায় বর্তাবে না। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “কোন বিষয়ে তোমাদের বিচ্যুতি ঘটে গেলে তাতে কোন গুনাহ নেই, তবে আন্তরিক ইচ্ছাসহ হলে ভিন্ন কথা।[সূরা আহযাব, আয়াত: ৫] শিকার বধ করা ইহরাম অবস্থায় একটি নিষিদ্ধ কাজ; সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “মুমিনগণ, তোমরা ইহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না। তোমাদেরমধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে শিকার বধ করবেতার উপর বিনিময় ওয়াজিব হবে, যা সমান হবে ঐজন্তুরযে জন্তুকে সে বধ করেছে।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৯৫] এ দলিলগুলো থেকে জানা যায় যে, যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কিংবা অজ্ঞতাবশতঃ এ নিষিদ্ধ কাজগুলোতে লিপ্ত হবে তার উপর কোন দায় বর্তাবে না।

অনুরূপভাবে কাউকে যদি জবরদস্তি করে এর কোনটিকে লিপ্ত করানো হয় তার উপরও কোন দায় বর্তাবে না। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “যারা ঈমান আনার পর কুফরি করেছে; -তবে যাকে কুফরি করতে জবরদস্তি করা হয়েছে, অথচ তার অন্তর ঈমানে ভরপুর সে নয়- কিন্তু যে ব্যক্তি কুফুরির জন্য হৃদয়ের দুয়ার খুলে দিয়েছে; তাদের উপর আল্লাহর গযব; তাদের জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি।”[সূরা নাহল, আয়াত: ১০৬] কাউকে জবরদস্তি করে কুফুরি করালে যদি এ বিধান হয় কুফুরির চেয়ে নিম্ন ক্ষেত্রে তো অবশ্য এ বিধান প্রযোজ্য।

তবে বিস্মৃত হয়ে যে ব্যক্তি কোন নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হয়েছে সে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা থেকে বিরত হবে। অনুরূপভাবে অজ্ঞ ব্যক্তি জানার সাথে সাথে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত হওয়া তার উপর ফরজ। একইভাবে জোরজবরদস্তি থেকে মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে সে ব্যক্তির নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকা ফরজ। উদাহরণতঃ কোন মুহরিম যদি ভুলক্রমে মাথা ঢেকে ফেলে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে সে মাথা থেকে সে আবরণ দূর করবে। কেউ যদি সুগন্ধিযুক্ত কিছু দিয়ে তার হাত পরিস্কার করে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে হাত ধুয়ে সে সুগন্ধি দূর করা তার উপর ফরজ।

সূত্র

শাইখ উছাইমীনের ‘মানারু ইসলাম ফতোয়াসমগ্র’ খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৯১-৩৯৪

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android