প্রশ্ন :
রমজান মাসে ফজরের আযানের আগ থেকে আমি আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করছিলাম। আযান চলাকালীন সময়েও আমি সহবাসরত ছিলাম। তবে আযান শেষ হওয়ার আগেই আমরা বিরত হয়েছি। আমার ধারণা ছিল যে, মুয়াজ্জিনের আযান শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত সহবাস করা জায়েয। এখন আমার করণীয় কি?
মুয়াজ্জিন ফজরের আযান দিচ্ছিলেন সে সময় যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত ছিলেন
প্রশ্ন: 124290
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
যদি ফজরেরওয়াক্ত শুরু হওয়ারসাথে সাথেমুয়াজ্জিনআযান দেন, তাহলেওয়াজিব হলফজরের ওয়াক্তথেকেসূর্যাস্তপর্যন্ত রোযাভঙ্গকারীবিষয়সমূহ(মুফাত্তিরাত)থেকে বিরতথাকা। তাই মুয়াজ্জিন‘আল্লাহুআক্বার’(আল্লাহমহান) বলারসাথে সাথেখাদ্য, পানীয়,সহবাস ও সকলরোযাভঙ্গকারীবিষয়(মুফাত্তিরাত)থেকে বিরতথাকা আবশ্যকহয়ে যায়।
ইমামনববী (রাহিমাহুল্লাহ)বলেন :
“যদিফজরের ওয়াক্তহওয়ার সময়কারও মুখেখাবার থাকে, তবে সেযেন তা ফেলেদেয়।(খাবার) ফেলেদিলে – তার রোযাশুদ্ধ হবে, আর গিলেফেললে – তার রোযাভঙ্গ হয়েযাবে। আর যদিফজরের ওয়াক্তহওয়ার সময় সে সহবাসরতঅবস্থায় থাকে, তবে সেঅবস্থা থেকেতাৎক্ষণিকসরে গেলে – তার রোযাশুদ্ধ হবে। আরযদি ফজরেরওয়াক্ত হওয়ারসময় সে সহবাসরতঅবস্থায় থাকেএবং ফজরেরওয়াক্ত হয়েছেজেনেও সহবাসেলিপ্ত থাকে, তবে তাররোযা ভঙ্গহবে- এব্যাপারে ‘আলেমগণেরমাঝে কোন দ্বিমতনেই। আর সেঅনুসারে তারউপর কাফ্ফারাআবশ্যক হবে।”সমাপ্ত।[আল-মাজ্মু‘(৬/৩২৯) ]
তিনিআরও বলেন:“আমরাউল্লেখ করেছিযে, ফজরউদিত হওয়ারসময় যদি কারোমুখে খাবারথাকে,তবে সে তাফেলে দিবে ওতার রোযাসম্পন্ন করবে।আর যদি ফজরহয়েছে জেনেওসে তা গিলেফেলে, তবে তাররোযা বাতিলহয়ে যাবে। এব্যাপারে কোনমতভেদ নেই”।আল-মাজ্মু‘ (৬/৩৩৩)এর দলীলহচ্ছে ইবনেউমর ও আয়েশারাদিয়াল্লাহু‘আনহুম এরহাদিস।রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহ ‘আলাইহিওয়া সাল্লামবলেছেন:
( إنبلالايؤذنبليل, فكلواواشربواحتىيؤذنابنأممكتوم)رواهالبخاريومسلم, وفيالصحيحأحاديثبمعناه
“বিলাল(রাদিয়াল্লাহু‘আনহু) রাতথাকতে আযানদেন।তাইআপনারা খেতেথাকুন ও পানকরতে থাকুনযতক্ষণ নাইবনে উম্মেমাকতূম (রাদিয়াল্লাহু‘আনহু) আযানদেন।”[হাদিসটিইমাম বুখারীও মুসলিমসংকলনকরেছেনএবং সহীহ গ্রন্থেএই অর্থেরআরও হাদিস রয়েছে]সমাপ্ত
এপ্রেক্ষিতেবলা যায়, যদি আপনারএলাকারমুয়াজ্জিনফজরের ওয়াক্তহওয়ার পর আযান দেয়, তাহলেআযানের প্রথমতাকবীর শোনারসাথে সাথে আপনাকেসহবাসথেকে বিরত হয়েযেতে হবে। আরযদি আপনি জেনেথাকেন যে, মুয়াজ্জিনফজরের ওয়াক্তহওয়ার আগেইআযান দেয়অথবা এব্যাপারেআপনি সন্দিহানথাকেন যে, তিনি কিসুবহে সাদিকহওয়ার আগেআযান দেন,নাকি পরে আযানদেন-সেক্ষেত্রেআপনার উপর করণীয়কিছু নেই।কারণ আল্লাহ তা’আলা ফজর পরিস্ফুটহওয়াপর্যন্তখাওয়া, পান করা ও সহবাসকরা বৈধকরেছেন। আল্লাহতা‘আলা বলেন :
(فَالْآَنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوامَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىيَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَالْفَجْرِ)
“অতএব এখনতোমরাতোমাদেরস্ত্রীদের সাথেসহবাসকরতে পার এবংআল্লাহতোমাদের জন্যযা (সন্তান)লিখে রেখেছেনতা কামনা করতেপার। আর তোমরাপানাহারকর যতক্ষণকালোসুতা(রাতের কালোরেখা) হতেঊষার সাদাসুতা (সাদারেখা)স্পষ্টরূপেতোমাদের নিকটপ্রতিভাত নাহয়।” [সূরাবাকারাহ, ২ :১৮৭]
ফতোয়া বিষয়কস্থায়ীকমিটির ‘আলেমগণকেপ্রশ্ন করাহয়েছিল:“কোনব্যক্তি আগেইসেহেরীখেয়েছে।কিন্তু ফজরেরআযান চলাকালীন সময়ে অথবাআযান দেওয়ার১৫ মিনিট পর পানি পান করেছে-এরহুকুম কী?
তাঁরাউত্তরে বলেন: “প্রশ্নেউল্লেখিত ব্যক্তিযদিজেনে থাকেন যে, সেইআযান সুবহেসাদিকপরিষ্কারহওয়ার আগেদেওয়া হয়েছিলতবে তার উপরকোন কাযা নেই।আরযদি তিনি জেনেথাকেন যে, সেআযানসুবহেসাদিকপরিষ্কার হওয়ারপরে দেওয়াহয়েছেতবে তার উপর উক্তরোযা কাযাকরা আবশ্যক।আরতিনি যদি নাজানেন যে, তার পানাহারফজরেরওয়াক্ত হওয়ারআগে ঘটেছে,না পরে ঘটেছেসেক্ষেত্রেতাকেকোন রোযা কাযাকরতে হবে না।কারণ এক্ষেত্রে মূলঅবস্থা হচ্ছে-রাত বাকিথাকা। তবেএকজন মু’মিনেরউচিত তার সিয়ামেরব্যাপারেসাবধান থাকাএবং আযানশোনার সাথেসাথে রোযাভঙ্গকারীসমস্ত বিষয়থেকে বিরতথাকা। তবে তিনিযদি জেনেথাকেন যে, এই আযানফজরের ওয়াক্তহওয়ার আগেদেওয়া হয়েছে তাহলেভিন্ন কথা।”সমাপ্ত
[ফাতাওয়াইসলামিয়াহ :(২/২৪০) ]
দুই:
যদি আপনি এইহুকুমেরব্যাপারে নাজেনে থাকেন এবং মনেকরে থাকেন যে, আযানের শেষপর্যায়েরোযাভঙ্গকারীবিষয়াদি(মুফাত্তিরাত)থেকে বিরত হওয়াঅনিবার্যহয়, তবে আপনারউপর কোন কাফ্ফারাবর্তাবে না।তবে সাবধানতাবশতঃআপনাকে সেরোযাটির কাযাআদায় করতে হবে। সেইসাথে দ্বীনেরযেসব বিষয় জানাআপনার জন্যওয়াজিব ছিল, সেব্যাপারেঅবহেলার জন্যতওবা ওইস্তিগফার করতেহবে ।
আরওদেখুন (93866)ও (37879)নং প্রশ্নেরউত্তর।
আল্লাহ্ইসবচেয়ে ভালজানেন ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব