প্রশ্ন: আমি জেনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ( ليس من البر الصوم في السفر) অর্থ- “সফর অবস্থায় রোজা রাখা নেকীর কাজ নয়”। এর মানে কি মুসাফির ব্যক্তি রোজা রাখলে সে রোজা সহিহ হবে না?
( ليس من البر الصوم في السفر) হাদিসের অর্থ
প্রশ্ন: 12481
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
ইতোপূর্বে 20165নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সফর অবস্থায় রোজা রাখার তিনটি অবস্থা:
১. যদি রোজা রাখাটা কষ্টকর না হয় তাহলে রোজা রাখা উত্তম।
২. যদি রোজা রাখা কষ্টকর হয় তাহলে রোজা না-রাখা উত্তম।
৩. যদি রোজা রাখলে শারীরিকভাবে ক্ষতি হয় অথবা মৃত্যুর আশংকা হয় তাহলে রোজা রাখা হারাম; রোজা না-রাখা ফরজ। এ সংক্রান্ত হাদিসের দলিলগুলো সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুই:
প্রশ্নকারী যে হাদিসটির প্রতি ইশারা করেছেন সে হাদিসটি তৃতীয় অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট। যদি হাদিসটির প্রাসঙ্গিকতা ও বর্ণনা করারপ্রেক্ষাপট আমরা জানতে পারি তাহলে এ বিষয়টি পরিস্কার হবে। ইমাম বুখারি (১৯৪৬) ও মুসলিম (১১১৫) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে ছিলেন। তখন তিনি এক জটলার মধ্যে এক ব্যক্তিকে ছায়া দিতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন: এখানে কি? সাহাবীরা বললেন: ইনি রোজাদার। তখন তিনি বললেন: সফরের মধ্যে রোজা রাখা সওয়াবের কোন কাজ নয়।
সিন্দি বলেন:
তাঁর কথা: (ليس من البر) অর্থাৎ আনুগত্যের ও ইবাদতের কাজ নয়। সমাপ্ত
নববী বলেন:
এর অর্থ হচ্ছে- যদি তোমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায় এবং তোমরা ক্ষতির আশংকা কর। হাদিসটির সিয়াক বা প্রাসঙ্গিকতা এ ধরনের ব্যাখ্যার দাবী করে…। সুতরাং রোজা রেখে যে ব্যক্তি ক্ষতির সম্মুখীন হবে হাদিসটি তাদের প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। সমাপ্ত
ইমাম বুখারী হাদিসটির এ অর্থ বুঝেছেন। তাইতো তিনি এ হাদিসটির শিরোনাম দিয়েছেন, “যাকে ছায়া দিতে হয়েছে এবং তিনি তীব্র গরমের শিকার হয়েছেন তার প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:‘সফর অবস্থায় রোজা রাখা নেকীর কাজ নয়’।” সমাপ্ত
হাফেয ইবনে হাজার বলেন:
এ শিরোনাম দিয়ে তিনি এ দিকে ইশারা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক “সফর অবস্থায় রোজা রাখা সওয়াবের কাজ নয়” বাণী উচ্চারণ করার কারণ হচ্ছে- যে কষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ‘তাহযিবুস সুনান’ গ্রন্থে বলেন: ‘সফরে রোজা রাখা সওয়াবের কোন কাজ নয়’ এটি ব্যক্তি বিশেষের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু নিজ চোখে দেখেছেন যে, এ ব্যক্তিকে ছায়া দেয়া হচ্ছে; রোজা রাখার কারণে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন তিনি এ কথা বলেছেন। অর্থাৎ সফরের মধ্যে নিজেকে এ পর্যায়ের কষ্ট দিয়ে রোজা রাখাতে সওয়াবের কিছু নেই। যেহেতু আল্লাহ তাআলা রোজা না-রাখার সুযোগ রেখেছেন। সমাপ্ত।
তিন:
এ হাদিসটিকে এর সাধারণ অর্থ (যে কোন প্রকারের সফরে রোজা রাখা সওয়াবের কাজ নয়) এ অর্থে গ্রহণ করা যাচ্ছে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত আছে যে, তিনি সফরে রোজা রাখতেন।
এ কারণে খাত্তাবী বলেছেন:
এ বক্তব্যটি এসেছে বিশেষ একটি প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে। এ উক্তিটির বিধান সংশ্লিষ্টসাহাবীর মত যাদের অবস্থা তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় রোজা রাখা সওয়াবের কাজ নয়; যদি সফরে রোজারাখার কারণে রোজাদারের অবস্থা এ ব্যক্তির মত হয়। এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর নিজে সফর অবস্থায় রোজা রেখেছেন।[আউনুল মাবুদ থেকে সংকলিত]
আল্লাহই ভাল জানেন।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব