কোন ধরনের রোগ রমজান মাসে একজন মানুষের জন্য রোযা ভঙ্গ করা বৈধ করে? যে কোন রোগ সেটা যদি হালকাও হয় তবে কি রোযা ভঙ্গ করা জায়েয?
কি ধরনের রোগ হলে একজন রোযাদারের জন্য রোযা ভঙ্গ করা বৈধ?
প্রশ্ন: 12488
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
অধিকাংশ আলেমের মতে,এঁদের মধ্যে চার ইমামআবুহানীফা,মালেক,শাফেয়ীওআহমাদরয়েছেন-একজন রোগীর জন্য রমজান মাসে রোযা ভঙ্গকরা জায়েযনয় যদি না তার রোগ তীব্রহয়।
রোগের তীব্রতার অর্থ হলো :
১.রোযার কারণে যদি রোগ বেড়েযায়।
২.রোযার কারণে যদি আরোগ্য লাভে বিলম্ব হয়।
৩.রোযার কারণে যদি খুব বেশি কষ্ট হয় যদিওবা তার রোগ বেড়ে না যায় বা সুস্থতা দেরিতে না হয়।
৪.এর সাথে আলেমগণ আরও যোগ করেছেন এমন কোন ব্যক্তি সিয়াম পালনের কারণে যার অসুস্থ হয়ে পড়ার আশংকা আছে।
ইবনে ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ)‘আলমুগনী গ্রন্থে’ (৪/৪০৩) বলেছেন:
“যে রোগ রোযা ভঙ্গকরা বৈধ করে তা হলো তীব্র রোগ যা রোযা পালনের কারণে বেড়ে যায় অথবা সে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ বিলম্বিত হওয়ার আশংকা থাকে।”একবার ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হল, “একজন রোগী কখন রোযা ভঙ্গ করতে পারবে?”
তিনি বললেন, “যদি সে রোযা পালন করতেনা পারে।”
তাঁকে বলা হলো : “যেমন জ্বর?”
তিনি বললেন,“জ্বরের চেয়ে কঠিনতর কোন রোগ আছে কি!…”
আর যে সুস্থ ব্যক্তি রোযা রাখলে তার রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় রোযা ভাঙ্গার ক্ষেত্রে তার হুকুম ঐ অসুস্থ ব্যক্তির ন্যায় রোযা রাখলে যার রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। কেননা সে রোগীর জন্য রোযা ভঙ্গ করা এ কারণে বৈধ করা হয়েছে যে রোযা রাখলে তার রোগ বেড়ে যেতে পারে, রোগ বিলম্বে সারতে পারে। অনুরূপভাবে নতুন কোন রোগ সৃষ্টি হওয়াও একই অর্থবোধক।”(উদ্ধৃতি সমাপ্ত)
ইমাম নববী (রহঃ) “আল-মাজমূ গ্রন্থে” (৬/২৬১)বলেছেন :
“যে রোগীর রোগ মুক্তির আশা করা যায়, কিন্তু তিনি রোযা পালনে অক্ষম এক্ষেত্রে রোযা পালন করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়…. যদি রোযার কারণে রোগীর কষ্ট হয় সেক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। রোযা ভঙ্গ করার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের অক্ষমতা শর্ত নয়। বরং আমাদের আলেমদের অনেকে বলেছেন: “রোযা ভঙ্গকরার ক্ষেত্রে শর্ত হলো রোযার কারণে এমন কষ্ট হওয়া যা সহ্য করা কষ্টসাধ্য।”(উদ্ধৃতি সমাপ্ত)
আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন: যে কোন রোগীর জন্যই রোযা ভাঙ্গা জায়েয;যদিওবা রোযার কারণে কষ্ট না হয়।তবে এটি একটি বিরল অভিমত। জমহুর আলেমগণ এই অভিমতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইমাম নববী বলেছেন:
“হালকা রোগ যার কারণে বিশেষ কোন কষ্ট হয় না সে ক্ষেত্রে রোযা ভাঙ্গা জায়েযনয়। এ ব্যাপারে আমাদের আলেমদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই।”[আল-মাজমূ‘(৬/২৬১)]
শাইখ ইবনে উছাইমীন বলেছেন :
“রোযা পালনের কারণে যে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাবপড়ে না, যেমন- হালকা সর্দি, হালকা মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। যদিও আলেমগণের কেউ কেউ নিম্নোক্ত আয়াতের দলীলের ভিত্তিতে বলেছেন যে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয।
( ومن كان مريضاً… ) [ 2 البقرة: 185]
“আর কেউ অসুস্থ থাকলে…” [সূরা বাক্বারাহ, ২ : ১৮৫]
তবে আমরা বলবো- এই হুকুমটি একটি ইল্লত (কারণ)এর সাথে সম্পৃক্ত।আর তা হলো রোযা ভঙ্গকরাটা রোগীর জন্য বেশি আরামদায়ক হওয়া। যদি রোযা রাখার কারণে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাব না পড়ে তবে তার জন্য রোযা ভঙ্গকরা জায়েয নয়।বরং তার উপর রোযা রাখা ওয়াজিব।”[আশ্-শারহুলমুমতি (৬/৩৫২)]
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব