আমাদের তিউনিশিয়ায় এমন কিছু কোম্পানি ছড়িয়ে পড়েছে যেগুলো নিজেদেরকে rent-to-own কোম্পানি বলে পরিচয় দেয়। এগুলোর মূল সেবা হল কাস্টমার যে পণ্যটা (গাড়ি বা জমি) চায় সেটা ক্রয় করে কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা, তারপর পূর্ব-নির্ধারিত একটা মূল্যে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তিতে সেটা কাস্টমার ভাড়া দেওয়া। মেয়াদ অতিক্রম হলে সেটি বিক্রিতে পর্যবসিত হবে। উল্লেখ্য, ঐ কোম্পানি এই জিনিসগুলোতে লাভ করে এবং যিনি ভাড়া নিয়েছেন তিনি নিজ হাতে মূল্য হস্তগত করেন না। বরং কোম্পানি নিজের নামে পণ্য কিনে। কাস্টমার কর্তৃক ভাড়ার চুক্তিতে উল্লেখিত শেষ কিস্তি পরিশোধের আগে এর মালিকানা তার নামে হস্তান্তর করা হয় না। এ ধরনের কেনাবেচা কি হালাল? নাকি এটা ছদ্মবেশধারী সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে?
যদি কোনো কোম্পানি তার কাস্টমারকে rent-to-own চুক্তির মাধ্যমে গাড়ি বা স্থাবর সম্পত্তি ভাড়া দেয়
প্রশ্ন: 125909
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
আপনি যে লেনদেনের কথা উল্লেখ করেছেন সেটা ‘মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে সমাপ্ত ভাড়া’ (rent-to-own) এর অন্তর্ভুক্ত। এর কিছু জায়েজ রূপ আছে; আর কিছু হারাম রূপ আছে।
উদাহরণস্বরূপ কোম্পানি যদি গাড়িটি কাস্টমারকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভাড়া দেয়, তারপর কোন নতুন ক্রয়বিক্রয়ের চুক্তি ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়িটি কাস্টমারের মালিকানা স্থানান্তরিত হয়, অর্থাৎ সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর ভাড়ার চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিক্রয়ের চুক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়; তাহলে লেনদেনের এই রূপটি হারাম।
অনুরূপভাবে কোম্পানি যদি কর্মচারীর সাথে ভাড়ার চুক্তি করে এবং একই সময়ে বিক্রয়ের চুক্তি করে; তাহলে এটাও জায়েয হবে না। কারণ একই পণ্যের ওপর একই সময়ে পরস্পর বিরোধী দুটি চুক্তি একত্রিত হতে পারে না।
জায়েয লেনদেনের রূপগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ভাড়ার চুক্তির সাথে বিক্রয়ের ওয়াদা দেয়া। ভাড়া শেষ হলে দুই পক্ষ একটা মূল্যের ব্যাপারে সম্মতিতে পৌঁছে বিক্রয়ের চুক্তি করবে। এটা জায়েয।
আরেকটি রূপ হলো: ভাড়ার চুক্তির সাথে বস্তুটা (যেমন: গাড়ি) উপহার হিসেবে প্রদান করার একটা চুক্তি করা; তবে পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করার শর্তে উপহারের চুক্তিকে ঝুলিয়ে রাখা হবে কিংবা পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করার পর উপহার দেওয়ার ওয়াদা থাকবে। এটাও জায়েয।
সকল জায়েয রূপের ক্ষেত্রে শর্ত হলো: ভাড়াপ্রদান আসল হওয়া; বিক্রয়কে আড়ালকারী না হওয়া। ভাড়ার ক্ষেত্রে ভাড়া-প্রদত্ত পণ্য তথা গাড়ি বা স্থাবর সম্পত্তির যে কোন ক্ষতিপূরণের দায় ভাড়া প্রদানকারীর (কোম্পানির) ওপর বর্তায়; ভাড়াটিয়ার ওপর নয়। অনুরূপভাবে ভাড়া চলাকালীন রক্ষণাবেক্ষণের খরচপাতি ভাড়া প্রদানকারী ওপর; ভাড়াটিয়ার ওপর নয়। এটাই বিক্রয়ের সাথে ভাড়ার ভিন্নতা। কারণ বিক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে পণ্যের ক্ষতিপূরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায় ক্রেতার উপর। যেহেতু বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের সাথে সাথে ক্রেতা পণ্যের মালিক হয়ে যায়।
‘আল-মাওসূয়াতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়াইতিয়্যা’-তে (১/২৮৬) এসেছে:
“ভাড়াপ্রদত্ত বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ভাড়াটিয়া কর্তৃক বহন করার শর্তারোপ করা জায়েয নেই। কেননা এতে করে ভাড়ার পরিমাণ অস্পষ্ট হয়ে যায়। চার মাযহাবের ঐকমত্যে উক্ত শর্ত করার মাধ্যমে ভাড়াচুক্তি বাতিল হয়ে যায়।”[সমাপ্ত]
‘মালিকানার মাধ্যমে সমাপ্ত ভাড়া’-র জায়েয ও হারাম রূপগুলোর বিবরণ দিয়ে ইসলামী ফিকহ একাডেমি একটা সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছে। ইতিপূর্বে 97625 নম্বর প্রশ্নোত্তরে আমরা সেটি উল্লেখ করেছি।
কোম্পানি যদি অগ্রিম ডাউন পেমেন্টের শর্ত করে যা মূল ভাড়া থেকে কাটা যাবে; তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু ভাড়াগ্রহীতা ভাড়ার মেয়াদ পূর্ণ না করার ক্ষেত্রে কোম্পানি ডাউন পেমেন্ট হস্তগত করা জায়েয নয়। তবে ভাড়ার যতটুকু মেয়াদ অবশিষ্ট আছে ততটুকুর অংশ ছাড়া।
আমাদের উপদেশ হচ্ছে আপনি ঐ কোম্পানির চুক্তিপত্রের একটি কপি নিয়ে সেটি বিশেষজ্ঞ আলেমদের কাছে পেশ করবেন।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব