আমরা একদল যুবক গতকাল দাবা খেলছিলাম। তারা আমার বাসায় ছিল। একবার এক ভুলের প্রেক্ষিতে এক যুবক বলল: যদি আসমান থেকে আল্লাহ্ হাযির হয় এবং এখানে নামে তদুপরি তুমি চালটা দিবে না। যদি স্বয়ং আল্লাহ্ আসেন তদুপরি তুমি এ চালটি দিবে না। তখন আমি উঠে গেলাম এবং বললাম: ওহে অমুক! তুমি এ ধরণের কথা বলা হারাম। তখন সে এ কথাটি আরও কয়েকবার বলল। আমি বললাম: যেহেতু তুমি এ কথা বলার ব্যাপারে নাছোড়বান্দা; তাহলে দ্বিতীয়বার তুমি আমার বাসায় আসবে না। সে ঠিক আছে বলে আমার বাসা থেকে বের হয়ে গেল। তখন যুবকেরা আমাকে বলল: তোমার আচরণটি সঠিক হয়নি। লোকটা যেহেতু তোমার বাসায় তাই তোমার উচিত ছিল না তার সাথে এইভাবে আচরণ করা। কিন্তু আমার গাইরত ছিল আল্লাহ্র জন্য। প্রশ্ন হলো: আল্লাহ্র সাথে তাচ্ছিল্য শুনেও আমি যা করেছি এমনটি না করা কি আমার জন্য জায়েয? কেবল আমি অন্তর দিয়ে ঘৃণা করব; যা ঈমানের দুর্বলতম অধ্যায়। যে ব্যক্তি কুফরি শব্দ উচ্চারণ করেছে এবং এ ক্ষেত্রে সে নাছোড়বান্দা এর হুকুম কী? আমার আচরণের ব্যাপারে আপনাদের অভিমত কী?
কুফরি শব্দাবলী উচ্চারণের ফলে কী আরোপিত হয়?
প্রশ্ন: 131475
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
আপনার বন্ধু যে কথাটি বলেছে সেটি জঘন্য একটি কথা। কোন মুসলিমের পক্ষ থেকে এমন কথা প্রকাশ পাওয়া সঠিক নয়। এমন কথা আল্লাহ্র সাথে কুফরি; যেহেতু এতে আল্লাহ্কে অপমান করা ও তাচ্ছিল্য করা অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ তাআলা তাকে এবং এই দুনিয়ার সবকিছু নড়াতে সক্ষম এবং তাকে এবং সব মানুষকে ধ্বংস করতে সক্ষম ‘কুন’ শব্দের মাধ্যমে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তাঁর ব্যাপারটি এমন তিনি যখন কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন বলেন: ‘কুন’ (হও); ফলে তা হয়ে যায়।”[সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৮২]
তিনি আরও বলেন: “আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন তাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আসমানসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ- করা অবস্থায় থাকবে। পবিত্র ও মহান তিনি। তারা তাঁর সাথে যা কিছু শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৬৭]
তিনি আরও বলেন: “যারা বলে: ‘আল্লাহ্ তো মারিয়মের পুত্র মাসীহ’ তারা অবশ্যই কুফরী করেছে। বলুন: ‘তাহলে আল্লাহ যদি মারিয়ামের পুত্র মসীহ ও তাঁর মাকে এবং পৃথিবীতে যারা আছে তাদের সকলকে ধ্বংস করতে চান তাহলে কে আছে যে আল্লাহ্র ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা রাখে? আসমান-জমিন ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুর কর্তৃত্ব আল্লাহ্রই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ১৭]
তিনি আরও বলেন: “আর আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে তারা বলবে: ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম’। বলুন: ‘তোমরা কি আল্লাহ্ ও তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিলে?”[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬৫-৬৬]
দুই:
এ কথা উচ্চারণকারীর উপর আল্লাহ্র কাছে তাওবা করা ও ঈমান নবায়ন করা আবশ্যক। তাকে দুই সাক্ষ্যবাণী উচ্চারণ করতে হবে এবং আল্লাহ্র মহত্ব, মর্যাদা ও গৌরবের স্বীকৃতি দিতে হবে। যদি সে ব্যক্তি নাছোড়বান্দা হয়ে এই কথা বলে যায় এবং তাওবা না করে তাহলে সে কাফের, ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদ।
তিন:
আমরা মনে করি না যে, আপনি আপনার আচরণে কোন ভুল করেছেন। কারণ মুনকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ওয়াজিব। আর সবচেয়ে জঘন্য মুনকার হচ্ছে: আল্লাহ্কে গালি দেয়া এবং তাঁর সাথে তাচ্ছিল্য করা। সুতরাং যে ব্যক্তি এ ধরণের কথা শুনেছে এবং সে এর প্রতিবাদ করতে সক্ষম; তার জন্য চুপ থাকা জায়েয নয়। বরং তার উপর ওয়াজিব তার সাধ্যানুযায়ী হাত দিয়ে বা মুখ দিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্তর দিয়ে প্রতিবাদ করা কেবল ঐ ব্যক্তির জন্য জায়েয করেছেন যে ব্যক্তি হাত কিংবা মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করতে অক্ষম। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীতে এসেছে: “তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন মুনকার দেখে তার উচিত এটাকে হাত দিয়ে পরিবর্তন করে। যদি তা না পারে তাহলে মুখ দিয়ে পরিবর্তন করা। আর যদি সেটাও না পারে তাহলে অন্তর দিয়ে। এটি ঈমানের দুর্বলতম অবস্থা।[সহিহ মুসলিম (৪৯)]
আপনার বন্ধুদের উচিত ছিল এই বাতিল কথা ও স্পষ্ট কুফরীর প্রতিবাদ করা। কিন্তু অন্তরে আল্লাহ্র মহত্বের কমতির কারণে আল্লাহ্কে গালি দেয়া ও আল্লাহ্র সাথে কুফরী করা তাদের কাছে মামুলি মনে হয়েছে।
হ্যাঁ, হতে পারে আপনি তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে না দেয়াটা হয়তো উত্তম ছিল; যাতে করে আপনি নিজেকে তার সাথে উত্তম উপায়ে বিতর্ক করার সুযোগ দিতে পারতেন এবং তাকে তাওবা করা, অনুতপ্তত হওয়া ও ইস্তিগফারের দিকে আহ্বান জানাতে পারতেন।
কিন্তু আপনার বন্ধু যে অপরাধ করেছে সেটার সম্মুখে এই ভুল কিছুই না। কিভাবে আপনার বন্ধুরা ছোট ভুলের প্রতিবাদ করতে পারে; আর বড় অন্যায়ের ব্যাপারে চুপ থাকতে পারে?
চার:
দাবা খেলা যদি নামায বা অন্য কোন ওয়াজিব আমল থেকে বিরত রাখে কিংবা মিথ্যা বলা, গালি-গালাজ করা ইত্যাদি অন্য কোন হারাম এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহলে আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে এটি হারাম।
আর যদি এটি কোন ওয়াজিব থেকে ব্যক্তিকে বিরত রাখে না এবং এর সাথে অন্য কোন হারাম সংঘটিত হয় না; সেক্ষেত্রে এর হুকুম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি এবং কিছু শাফেয়ি আলেম তথা জমহুর ফুকাহার দৃষ্টিতে এটি হারাম। সাহাবায়ে কেরাম এই ফতোয়াই দিতেন। বিস্তারিত 14095 নং ফতোয়াতে দেখুন। আরও লক্ষ্য করুন: কিভাবে দাবা খেলা ব্যক্তিকে কুফরের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। আল্লাহর কাছেই আমাদের আশ্রয়।
আপনাদের উপর আবশ্যক হলো: এই খেলা ছেড়ে দেয়া। আল্লাহ্র কাছে তাওবা করা। আমরা আল্লাহ্র কাছে আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য তাওফিকের প্রার্থনা করছি।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব