আমার স্বামী আমাকে ‘রেদোয়ান’ নামক দরজার সংবাদ দিয়েছেন; যে দরজাটি শুধু রমজান মাসে খোলা হয়। আমাকে আরও জানানো হয়েছে যে, যখন এ দরজাটি খোলা হয় তখন আল্লাহ এ দরজা দিয়ে সম্পদ ঢেলে দেন। আপনি যদি এ উক্তিটি নিশ্চিত করতেন/স্পষ্ট করতেন এবং আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান দিতেন; যাতে করে আমরা এ মাসয়ালাটি আরও ভালভাবে জানতে পারি।
রোজাদারগণকে ‘রাইয়্যান’ নামক দরজা দিয়ে ডাকা হবে
প্রশ্ন: 13934
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের উপর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন এবং রোজাদারদের জন্য বিপুল সওয়াবের ওয়াদা করেছেন। রোজার প্রতিদান যেহেতু সুমহান তাই আল্লাহ তাআলা এর প্রতিদানকে সুনির্দিষ্ট করেননি। হাদিসে কুদসিতে এসেছে- “রোজা আমার জন্য; আমিই রোজার প্রতিদান দিব।”
রমজান মাসের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। এ ফজিলতের মধ্যে রয়েছে-
আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের জন্য ‘রাইয়্যান’ নামক জান্নাতের দরজা প্রস্তুত রেখেছেন। বুখারি ও মুসলিমে সাহল (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসে নামটি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “জান্নাতের একটি দরজা আছে; যার নাম হচ্ছে- ‘রাইয়্যান’কেয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদারগণ প্রবেশ করবে; অন্য কেউ নয়। এই বলে ডাকা হবে- রোজাদারগণ কোথায়? তখন রোজাদারগণ উঠে প্রবেশ করবে; অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তারা প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।” [সহিহ বুখারি (১৭৬৩) ও সহিহ মুসলিম (১৯৪৭)]
যে হাদিসগুলো রোজার ফজিলত বর্ণনা করে এর মধ্যে রয়েছে-
আবু সালামা (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি আমল তারই; শুধু রোজা ছাড়া। রোজা আমার জন্য; আমিই এর প্রতিদান দিব। রোজা হচ্ছে- ঢালস্বরূপ। যেদিন তোমাদের কেউ রোজা রাখে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে, চেঁচামেচি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় সে যেন বলে, আমি রোজাদার। ঐ সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুবাসের চেয়ে উত্তম। রোজাদারের জন্য রয়েছে দুইটি খুশি। যখন রোজা ইফতার করে তথা রোজা ভাঙ্গে তখন একবার খুশি হয়। আবার যখন তার রবের সাক্ষাত পাবে তখন একবার খুশি হবে।”[সহিহ বুখারি (১৭৭১)]
দুই:
একথা সুবিদিত যে, জান্নাতের অনেক দরজা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বসবাসের বহু জান্নাত (বাগান)। তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্মশীল বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানেরা। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে।”[সূরা আল-রাদ, আয়াত: ২৩] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উন্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর।”[সূরা আল-যুমার, আয়াত: ৭৩]
সহিহ হাদিসে জান্নাতের আটটি দরজার কথা এসেছে। সাহল বিন সাদ (রাঃ) বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। একটি দরজার নাম হচ্ছে- রাইয়্যান। এ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না।”[সহিহ বুখারি (৩০১৭)]
উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই; তাঁর কোন অংশীদার নেই। আরও সাক্ষ্য দিবে যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল, তাঁর বাণী যা মরিয়মের প্রতি ঢেলে দিয়েছেন এবং তাঁর প্রেরিত রূহ। আরও সাক্ষ্য দিবে যে, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য- আল্লাহ তাকে তার আমলের ভিত্তিতে জান্নাতের আটটি দরজার যে কোন একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করাবেন।[সহিহ বুখারি (৩১৮০) ও সহিহ মুসলিম (৪১)]
এ উম্মতের উপর আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহ যে, তিনি রমজান মাসে একটি নয়; জান্নাতের সবগুলো দরজাখুলে দেন। যে ব্যক্তি বলেন যে, জান্নাতের একটি দরজার নাম হচ্ছে- ‘রেদোয়ান’ তাকে এই মর্মে দলিল পেশ করতে হবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “যখন রমজান মাস প্রবেশ করে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়; জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলাবদ্ধ করা হয়।”[সহিহ বুখারি (৩০৩৫) ও সহিহ মুসলিম (১৭৯৩)]
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
সূত্র:
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ