আমার এক বান্ধবীর নিফাসজনিত স্রাব নয় মাস অব্যাহত ছিল। এ সময়কালে সে কদাচিৎ নামায আদায় করেছে। এখন তিনি কী করবেন? যদি আমরা বলি যে, নিফাসের সর্বোচ্চ সময় ৬০ দিন তাহলে তো তাকে ছয় মাসের নামায কাযা পড়তে হবে। এখন সে কিভাবে কাযা পড়বে?
যে নারীর নিফাসজনিত স্রাব নয়মাস অব্যাহত ছিল এবং এ সময়ে তিনি নামায পড়েননি
প্রশ্ন: 146190
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
ইতিপূর্বে 104589 নং প্রশ্নোত্তরে নিফাসের সর্বাধিক সময়সীমার ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ এবং অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে নিফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪০ দিন; সেটা উল্লেখ করা হয়েছে।
দুই:
এ সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পর যে রক্তস্রাব নির্গত হয় যদি সেটা হায়েয হওয়ার দিনগুলোতে নির্গত হয় তাহলে সেটা হায়েযের রক্ত; সুতরাং এ সময়ে সে নারী নামায পড়বেন না, রোযা রাখবেন না এবং তার স্বামী তার সাথে ঘনিষ্ঠ হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হায়যের অভ্যাসগত সময় শেষ হয়। যেভাবে সবসময় ঘটে থাকে। আর যদি হায়েযের সময় ব্যতীত অন্য সময় এ রক্তস্রাব নির্গত হয় তাহলে এটা ইস্তিহাযার রক্ত। ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারী: রোযা রাখবেন ও নামায পড়বেন এবং তার স্বামী তার সাথে সহবাসও করতে পারবে। তবে, তার উপর অনিবার্য হল– প্রত্যেক ফরয নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করার পর ওযু করা এবং সে ওযু দিয়ে যা খুশি নফল নামাযও আদায় করা।
আরও জানতে দেখুন: 106464 নং প্রশ্নোত্তর।
তিন:
যদি ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারী অজ্ঞতাবশতঃ নামায বর্জন করেন তাহলে কাযা পালন করা তার উপর আবশ্যক কিনা– এ ব্যাপারে আলেমদের দুটো অভিমত রয়েছে।
১। কাযা পালন করা তার উপর অনিবার্য।
২। কাযা পালন করা তার উপর অনিবার্য নয়। এটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার নির্বাচিত অভিমত।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: "যদি ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারী এ বিশ্বাস থেকে কিছুকাল নামায আদায় না করে যে, তার উপর নামায ফরয নয় তাহলে তার ব্যাপারে দুটো অভিমত রয়েছে: এক. তাকে কোন নামায পুনরায় পড়তে হবে না। যেমনটি ইমাম মালেক ও অন্যান্য আলেম থেকে বর্ণিত আছে। কেননা ইস্তিহাযাগ্রস্ত যে নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছেন যে, 'আমি তীব্র ও জটিল ইস্তিহাযাগ্রস্ত হয়েছি; যা আমাকে নামায ও রোযা থেকে বিরত রেখেছে।' তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ভবিষ্যতে তার উপর কি ওয়াজিব সে নির্দেশ দিয়েছেন। অতীতের নামাযগুলো কাযা করার ব্যাপারে কোন আদেশ দেননি।"[মাজমুউল ফাতাওয়া (২১/১০২)]
শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) বলেন: "উত্তম হচ্ছে– প্রথম দিনগুলোতে যে নামাযগুলো ত্যাগ করেছে সেগুলোর কাযা পড়া। যদি না পড়েন তাতেও কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারীকে সে নির্দেশ দেননি; যে নারী বলেছিলেন যে, তিনি তীব্র ইস্তিহাযার শিকার হচ্ছেন এবং নামায বর্জন করছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ছয়দিন বা সাতদিন হায়েয গণনা করার এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যে নামাযগুলো বর্জন করেছিলেন সেগুলোর কাযা পড়ার নির্দেশ দেননি। কিন্তু তিনি যদি সেগুলোরও কাযা পালন করেন তাহলে সেটা ভাল। কেননা হতে পারে তার পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করার ক্ষেত্রে অবহেলা ঘটেছে। আর যদি সে নামাযগুলোর কাযা পালন না করে সেক্ষেত্রেও কোন অসুবিধা নেই।"[মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (১১/২৭৬) থেকে সমাপ্ত]
আপনার বান্ধবীর ক্ষেত্রে সতর্কতা রক্ষামূলক অভিমত হচ্ছে– তার যে নামাযগুলো ছুটে গেছে তিনি তার সাধ্যানুযায়ী সেগুলোর কাযা পালন করবেন। এ সময়কালে যে নামাযগুলো তার ছুটে গেছে সেগুলো থেকে প্রতিদিন যতটুকু পারেন তিনি কাযা পালন করবেন। কেননা এ দীর্ঘ সময় জিজ্ঞেস না করে নামায বর্জন করায় প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে তার অবহেলা পরিলক্ষিত হয়; যে সময়কালে সাধারণত নামায বর্জন করা হয় না। তাছাড়া সে মাঝে মাঝে নামায আদায় করত। এটি প্রমাণ করে যে, হয়তো সে জানত যে, তার উচিত নামায পড়া।
আরও জানতে দেখুন: 31803 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ