ঈদুল আযহার নামাযে মানুষ এভাবে তাকবীর দিয়ে থাকে: “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাছিরা। ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ। সাদাকা ওয়া’দাহ, ওয়া নাছারা আবদাহ, ওয়া আ’আয্যা জুনদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া লা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহ মুখলিসিনা লাহুদ দ্বীন; ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন।” লোকেরা ঈদের নামায আদায়কালে, মসজিদে জামাতে নামায আদায়ের পর এ তাকবীরটি বারবার উচ্চারণ করে থাকে; এ শব্দাবলী কি সহিহ? যদি ভুল হয়; তাহলে শুদ্ধ ভাষ্য কোনটি?
দুই ঈদের তাকবীরের শব্দাবলী
প্রশ্ন: 158543
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাল্লাহিল হামদ”— এ শব্দাবলী ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবী থেকে সাব্যস্ত হয়েছে— প্রথমাংশে ‘আল্লাহু আকবার’ তিনবার বলা হোক কিংবা দুইবার বলা হোক।[দেখুন: ইবনে আবি শায়বা এর ‘আল-মুসান্নাফ’ (২/১৬৫-১৬৮), ইরওয়াউল গালিল (৩/১২৫)]
পক্ষান্তরে, “আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি কাছিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা…” এর প্রসঙ্গে:
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন: কেউ যদি একটু বাড়িয়ে বলেন: ‘আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাছিরা। ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা। আল্লাহু আকবার। ওয়ালা না’বুদু ইল্লাল্লাহ মুখলিসিনা লাহুদ দ্বীন; ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ। সাদাকা ওয়া’দাহ, ওয়া নাছারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার’— তবে সেটা ভাল।[সমাপ্ত; আল-উম্ম (১/২৪১)]
আবু ইসহাক আল-সিরাজি তাঁর ‘আল-মুহায্যাব’ নামক গ্রন্থে (১/১২১) বলেন: “কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর এ কথাগুলো বলেছিলেন।”[সমাপ্ত]
তাই এ বিষয়টিতে প্রশস্ততা আছে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তাকবীর পড়ার কথা বর্ণিত আছে। তবে, তাকবীরের শব্দাবলী তিনি সুনির্দিষ্ট করেননি। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ বড়) বলে তাকবীর দাও”।[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫] তাই যে কোন শব্দে তাকবীর দেয়া হোক না কেন এতেই সুন্নাহ পালন হবে।
সানআনী (রহঃ) বলেন: আস-শারহ গ্রন্থে বেশ কিছু ইমাম থেকে তাকবীরের অনেক পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এ বিষয়টি প্রশস্ত এবং আয়াতের ব্যাপকতার দাবীও এটাই।”[সমাপ্ত]
[সুবুলুস সালাম (২/৭২)]
ইবনে হাবীব (রহঃ) বলেন: “আমার কাছে প্রিয় তাকবীর হচ্ছে- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ আলা মা হাদানা। আল্লাহুম্মাজাল-না লাকা মিনাশ শাকিরীন”। আসবাগ (রহঃ) আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন: “আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি কাছিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। তিনি আরও বলেন: ‘আপনি যদি আরও কিছু বাড়ান কিংবা কমান অথবা অন্য কিছু বলেন এতে কোন সমস্যা নেই।’[ইকদুল জাওয়াহের আস-ছামিনা (৩/২৪২) থেকে সমাপ্ত]
সাহনূন (রহঃ) বলেন: আমি ইবনুল কাসিমকে (রহঃ) জিজ্ঞেস করলাম, মালেক (রহঃ) কি আপনাদেরকে তাকবীরের কোন পদ্ধতি বলেছেন? তিনি বলেন: না। তিনি আরও বলেন: মালেক (রহঃ) এ বিষয়গুলো ঐভাবে সুনির্দিষ্ট করতেন না।”[সমাপ্ত; [আল-মুদাওয়ানা (১/২৪৫)]
ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন: “এ বিষয়টি প্রশস্ত।” ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন: “আমাদের আলেমগণ যে কোন ভাষ্যে তাকবীর বলার মত গ্রহণ করেছেন। কুরআনের বাহ্যিক ভাবও এটাই। আমিও এই অভিমতের প্রতি অনুরক্ত।[আল-জামে লি আহকামিল কুরআন (২/৩০৭)]
অন্যান্য সলফে সালিহীন থেকে সাব্যস্ত ঈদের তাকবীরের ভাষাগুলো হচ্ছে-
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ, আল্লাহু আকবার ওয়া আজাল্ল। আল্লাহু আকবার আলা মা হাদানা”[সুনানে বায়হাকী (৩/৩১৫) তে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস; আলবানী হাদিসটিকে ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৩/১২৬) সহিহ বলেছেন]
ইবনে হাজার (রাঃ) বলেন: তাকবীরের ব্যাপারে সর্বাধিক সহিহ যে বর্ণনাটি এসেছে সেটি সালমান (রাঃ) থেকে সহিহ সনদে আব্দুর রাজ্জাক সংকলন করেছেন। তিনি বলেন: তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবিরা।
[ফাতহুল বারী (২/৪৬২)]
এ বিষয়ে সাহাবীদের থেকে যে বাণীগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো দিয়ে আমল করা শ্রেয়।
আল্লাহই ভাল জানেন।
আরও জানতে দেখুন: 36442 প্রশ্নোত্তর।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ