আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করার পর প্রথমে আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। যে শ্রম আপনারা ব্যয় করছেন সে জন্য। আমি আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন এ আমল আপনাদের নেকীর পাল্লায় রাখেন। মুসলিম ও অমুসলিম যারাই আপনাদের ওয়বেসাইট দেখেন তাদের সকলকে যেন উপকৃত করেন। আমার প্রশ্নটি সংক্ষেপে নিম্নরূপ: তিন বছর যাবৎ আমি একটি চাকুরী করছি। এ চাকুরী থেকে আমি ভালমানের বেতন পাই; আলহামদু লিল্লাহ। আমি কবে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছি সে সময় হিসাব করার পর স্পষ্ট হল যে, সেটা ছিল 'জুমাদাল আখেরা' মাসে। কিন্তু, বিশেষ কোন ইচ্ছা ব্যতীত আমি যাকাত আদায় করেছি রমযান মাসে– এ ধারণা থেকে যে, আমি যে কোন সময় যাকাত আদায় করতে পারি। এভাবে গত দুই বছর যাকাত আদায় করেছি। এ বছর আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আমি কি রমযান মাসেই যাকাত আদায় করব যেভাবে গত দুই বছর আদায় করেছি; নাকি 'জুমাদাল আখেরা' মাসে আদায় করব? গত দুই বছর যে বিলম্ব করেছি এতে করে কি আমার উপর কোন কিছু বর্তাবে? অর্থাৎ আমি কি প্রতি মাসের যাকাতের পরিমাণ হিসাব করে যে মাসগুলো বিলম্ব করেছি সে মাসগুলোর যাকাত পরিশোধ করব? উল্লেখ্য, আমি যখন রমযান মাসে যাকাত আদায় করেছি তখন আমি আমার মালিকানায় যত সম্পদ ছিল সকল সম্পদের যাকাত আদায় করেছি। এর মধ্যে যে সম্পদগুলো আমি জুমাদাল আখেরা মাসের পরে উপার্জন করেছি সেগুলো আছে?
রমযান মাসে পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে যাকাত আদায়ে বিলম্ব করা
প্রশ্ন: 169899
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
যাকাত অবিলম্বে পরিশোধ করা ওয়াজিব; যদি সম্পদ নেসাব পরিমাণ পৌঁছে এবং নেসাবের এক বছর পূর্ণ হয়। কেউ যদি কোন ওজর ছাড়া বিলম্ব করেন তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন। আর যদি কোন ওজরের কারণে বিলম্ব করেন; যেমন- গরীব কাউকে না পাওয়া; তাহলে অসুবিধা নেই।
ইমাম নববী বলেন: "যাকাত ওয়াজিব হলে ও পরিশোধ করার সক্ষমতা অর্জিত হলে অবিলম্বে যাকাত পরিশোধ করা ওয়াজিব; বিলম্ব করা নাজায়েয। এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন: ইমাম মালেক, আহমাদ ও জমহুর আলেম। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: 'যাকাত দাও'। নির্দেশসূচক ক্রিয়া "অবিলম্বে" পালন করার নির্দেশ করে।"[শারহুল মুহায্যাব (৫/৩০৮) সমাপ্ত]
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (৯/৩৯৮) এসেছে:
"যদি যাকাত পরিশোধ করার সময় 'জুমাদাল উলা' মাসে পড়ে সেক্ষেত্রে কোন ওজর ছাড়া আমরা যাকাত কি বিলম্ব করে রমযান মাসে পরিশোধ করতে পারব?
জবাব: বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোন শরিয়তসম্মত ওজর ব্যতীত যাকাত পরিশোধে বিলম্ব করা জায়েয নেই; যেমন বর্ষপূর্তির সময় কোন গরীব না পাওয়া এবং তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভবপর না হওয়া কিংবা সম্পদ অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, রমযান মাসের জন্য যাকাত বিলম্বে পরিশোধ করা জায়েয নয়। তবে যদি সামান্য কিছু সময় হয় তাহলে দেরী করা জায়েয হবে। উদাহরণতঃ বর্ষপূর্তি হয়েছে শাবান মাসের শেষার্ধে তাহলে রমযান পর্যন্ত বিলম্ব করতে কোন অসুবিধা নেই।"['আল-লাজনা আদ্দায়িমা লিল-বুহুছ আল-ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা' থেকে সমাপ্ত]
আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ্ বিন বায, আব্দুল্লাহ্ কুয়ূদ, আব্দুল্লাহ্ বিন গুদইয়ান।
শাইখ উছাইমীনকে যাকাত আদায়ে রমযান পর্যন্ত বিলম্ব করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন: যাকাত অন্যান্য নেক আমলের মত উত্তম সময়ে হলে উত্তম। তবে, কারো উপর যাকাত যখনই ফরয হয় এবং বর্ষ পূর্ণ হয় তখনই যাকাত পরিশোধ করা এবং দেরী না করা ওয়াজিব। উদাহরণতঃ কারো বর্ষপূর্তি যদি রজব মাসে হয় তাহলে সে রমযান পর্যন্ত বিলম্ব করবে না; বরং রজব মাসেই পরিশোধ করে দিবে। যদি কারো যাকাতের বর্ষ মুহাররম মাসে পূর্ণ হয় তাহলে মুহররম মাসে পরিশোধ করে দিবে; রমযান পর্যন্ত দেরী করবে না। আর কারো যাকাতের বর্ষ যদি রমযান মাসে পূর্ণ হয় তাহলে সে রমযান মাসেই যাকাত আদায় করবে। যদি মুসলমানদের মাঝে অভাব দেখা দেয় এবং কেউ তার যাকাত বর্ষপূর্তির আগেই পরিশোধ করতে চান তাতে কোন অসুবিধা নেই।"[মাজমুউল ফাতাওয়া (১৮/২৯৫)]
দুই:
প্রশ্নকারী ভাই যেহেতু ভুল ধারণার ভিত্তিতে যাকাত পরিশোধে রমযান পর্যন্ত বিলম্ব করেছেন বিষয়টি জানা না-থাকার কারণে তিনি গুনাহগার হবেন না। এরপর যদি তিনি রমযান মাসে পরিশোধ করে থাকেন তাহলে তার দায়িত্ব শেষ এবং দেরী করার কারণে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। তবে এ বছর তিনি "জুমাদাল আখেরা" মাসে যাকাত আদায় করবেন; রমযান পর্যন্ত বিলম্ব করবেন না।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব