0 / 0

নারীর জরায়ুমুখ থেকে বায়ু নির্গত হওয়ার হুকুম প্রসঙ্গে মতভেদ

প্রশ্ন: 176951

এটা জানা বিষয় যে, মাঝে মধ্যে নারীদের জরায়ুমুখ থেকে বায়ু নির্গত হয়ে থাকে। এই বায়ুর সাথে কখনো আওয়াজ হয়; কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আওয়াজ থাকে না। পূর্ববর্তী ফতোয়াগুলোতে আপনারা স্পষ্ট করেছেন যে এটি অযু ভঙ্গ করে না। এই বিষয়টি নিয়েই আমার প্রশ্ন। আমরা যদি ধরে নিই কোনো একজন নারী আছেন যার অনবরত এই বায়ু নির্গত হয়, সকল অবস্থা ও পরিস্থিতিতে। সে বসে থাকুক কিংবা নড়াচড়া করুক, নামায পড়ুক কিংবা না পড়ুক। তার সমস্যা হলো নামাযের সময় সে এই বায়ু নির্মগনপথ চিহ্নিত করতে পারে না; এটি কি জরায়ুমুখ থেকে নির্গত বায়ু; যা হলে সে নামায চালিয়ে যাবে। নাকি গুহ্যদ্বার থেকে নির্গত বায়ু; যা হলে সে নতুন করে অযু করে আবার নামায পড়বে!

এ অবস্থায় এ মহিলা কী করবে? বিশেষতঃ এ অবস্থার ফলে নামাযের খুশু (একাগ্রতা) নষ্ট হয় এবং অন্যমনষ্ক হয়ে যেতে হয়। তিনি কি ‘এ বায়ু জরায়ুমুখ থেকে নির্গত হয়েছে’ এটাকে অগ্রগণ্য ধরে তার নামায চালিয়ে যাবেন, যতক্ষণ না তিনি পুরোপুরি ১০০% নিশ্চিত হন যে এটি গুহ্যদ্বার থেকে নির্গত হয়েছে? নাকি তিনি ‘এ বায়ু গুহ্যদ্বার থেকে নির্গত হয়েছে’ এটাকে প্রাধান্য দিয়ে নামায ছেড়ে দিবেন? তারপর অযু করে পুনরায় নামায পড়বেন?

উত্তর

এক:

নারীর জরায়ুমুখ থেকে বায়ু নির্গত হলে অযু ভঙ্গ হয় কিনা এ প্রসঙ্গে ফকীহরা মতভেদ করেছেন। এক্ষেত্রে দুটো অভিমত রয়েছে:

প্রথম মত: অযু ভেঙে যাবে। এটি শাফেয়ী ও হাম্বলীদের মাযহাব।

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “পুরুষ কিংবা নারীর সম্মুখ অঙ্গ কিংবা গুহ্যদ্বার যেখান থেকে যা-ই বের হোক না কেন তাতে অযু ভেঙে যাবে; হোক সেটা পায়খানা, পেশাব, বায়ু, কৃমি, পুঁজ, রক্ত, পাথর বা অন্য যে কোনো কিছু। এক্ষেত্রে সর্বদা এমনটি হওয়া আর বিরল অবস্থায় হওয়ার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। নারী ও পুরুষের সম্মুখ অঙ্গ কিংবা পায়ুপথ কোনোটার মাঝে পার্থক্য নেই। শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ তার আল-উম্ম বইয়ে এটি বলেছেন এবং তার অনুসারীরা এতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।”[সমাপ্ত][দেখুন: আল-মাজমূ (২/৩), ইবন হাজারের ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ (১/১২৭)]

ইবন কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘সালেহ তার পিতা (ইমাম আহমদ) থেকে যে নারীর জরায়ুমুখ থেকে বায়ু নির্গত হয় তার ব্যাপারে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: পেশাব-পায়খানার রাস্তা দুটি দিয়ে যা বের হবে তাতেই অযু আবশ্যক হবে। কাযী বলেন: পুরুষাঙ্গ ও মহিলাঙ্গ থেকে বায়ুর নির্গমন অযু ভঙ্গ করে।’[সমাপ্ত][আল-মুগনী (১/১২৫)] আরো দেখুন: মারদাওয়ীর ‘আল-ইনসাফ’ (১/১৯৫)।

দ্বিতীয় মত: অযু ভঙ্গ হবে না। এটি হানাফী ও মালেকীদের মত।

রাদ্দুল মুহতার আলাদ্দুররিল মুখতার (১/১৩৬) বইয়ে আছে: “মহিলাঙ্গ ও পুরুষাঙ্গ দিয়ে বায়ুর নির্গমনে অযু ভঙ্গ হয় না। কারণ এটি এক প্রকার কম্পন; প্রকৃত বায়ু নয়। আর বায়ু হলেও নাপাকির স্থান থেকে উৎসারিত নয়; তাই অযু ভঙ্গ করবে না।”[সমাপ্ত][দেখুন: কাসানীর বাদায়েউস সানায়ে: (১/২৫)]

আল্লামা আদ-দারদীর আল-মালেকী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “যদি পেশাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে স্বাভাবিক বর্জ্য বের হয়, যেমন: মুখ দিয়ে বের হয়, গুহ্যদ্বার দিয়ে পেশাব বের হয়, অথবা সম্মুখাঙ্গ দিয়ে বায়ু বের হয়; এমনকি সেটা যদি নারীর সম্মুখাঙ্গ হয় অথবা কোনো ছিদ্র দিয়ে কিছু বের হয় তাহলে অযু ভাঙবে না।”[আশ-শারহুল কাবীর মা’আ হাশিয়াতুদ দুসুকী: ১/১১৮]

নিঃসন্দেহে এমন বায়ু নির্গত হলে অযু করাই নিরাপদ এবং এমনটি করলেই দায়মুক্তি নিশ্চিত হয়। কারণ এটি নিয়ে শক্তিশালী মতভেদ রয়েছে। তাছাড়া এই মতটি একদিকে যেমন নিরাপদ, তেমন অন্যদিক থেকে এটি দলীলের বাহ্যিক রূপের কাছাকাছি। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আওয়াজ বা বায়ু ছাড়া অযু করতে হবে না।”[হাদীসটি তিরমিযী (৭৪) বর্ণনা করেন এবং বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ। শাইখ আলবানী তার সহীহুল জামে গ্রন্থে (৭৫৭২) এটিকে সহীহ বলেছেন]

এ হাদীস এবং এ অধ্যায়ের অনুরূপ কিছু হাদীস দিয়ে ইমাম ইবনুল মুবারক ও অন্যান্যরা সম্মুখাঙ্গ দিয়ে বায়ু নির্গত হওয়ার মাধ্যমে অযু ভঙ্গ হওয়ার পক্ষে দলীল প্রদান করেছেন।

ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এটি আলেমদের মত। তাদের মতে, আওয়াজ শোনা যাওয়া ও গন্ধ পাওয়ার মত ‘হাদাছ’ (পরিস্থিতি) ছাড়া ব্যক্তির উপর অযু আবশ্যক হবে না। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন: যদি ‘হাদাছ’ এর ব্যাপারে সংশয়ে থাকে তাহলে তার উপর ততক্ষণ অযু আবশ্যক হবে না যতক্ষণ না তার মনে এ পরিমাণ দৃঢ় বিশ্বাস আসে যে পরিমাণ আসলে সে শপথ করতে পারবে। তিনি বলেন: যদি নারীর সম্মুখাঙ্গ থেকে বায়ু বের হয় তাহলে তার উপর অযু আবশ্যক হবে। এটি শাফেয়ী ও ইসহাকের মত।”[সমাপ্ত]

উল্লিখিত প্রশ্নে অযু করার দিকটি প্রাধান্য পাবে। যেহেতু নির্গত বায়ুর অবস্থা নিয়ে গোলমাল রয়েছে যে এটি কি প্রশ্রাবের রাস্তা থেকে নির্গত; নাকি গুহ্যদ্বার থেকে। সর্বজনবিদিত বিষয় হলো: গুহ্যদ্বার থেকে নির্গত বায়ুর ফলে সর্বসম্মতিক্রমে অযু ভেঙে যায়। আর যদি বায়ুর বিষয়টি গোলযোগপূর্ণ হয় তথা বায়ু কি গুহ্যদ্বার থেকে নির্গত হয়েছে; যার ফলে সর্বসম্মতিক্রমে অযু ভেঙ্গে যাবে; নাকি প্রশ্রাবের রাস্থা থেকে নির্গত হয়েছে যার ফলে বহু আলেমের মতে অযু ভেঙ্গে যাবে; সেক্ষেত্রেও অযু ভাঙার মতটি বেশি জোরালো। বিশেষতঃ যেহেতু গুহ্যদ্বার থেকে বায়ু নির্গত হওয়াই মৌলিক অবস্থা। আর গুহ্যদ্বার ছাড়া অন্য স্থান থেকে বায়ুর নির্গমন বিরল ও অস্বাভাবিক। যারা বলেছেন এমন ব্যক্তির অযু ভঙ্গ হয় না তারা এ দিকটির উপর ভিত্তি করেই্ এমন মত দিয়েছেন।

দুই:

এই বায়ু যদি অনবরত সকল অবস্থায় ও ধরনে নির্গত হতে থাকে, তাহলে উক্ত নারী ওজক্ত নার হতে  অবস্থায় ও পরিস্থরগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমনকি যদি সে নিশ্চিত হয়ে থাকে যে বায়ু গুহ্যদ্বার থেকে বের হয়েছে। সেক্ষেত্রে সে প্রত্যেক নামাযের জন্য ওয়াক্ত প্রবেশ করলে অযু করবে। তারপর ফরয নামায এবং যতটুকু ইচ্ছা হয় নফল নামায পড়বে। তার থেকে যতবার বায়ু নির্গত হবে ততবার নতুন করে তাকে অযু করতে হবে না।

শাইখ শাঙ্কীত্বী হাফিযাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ‘নারীর মহিলাঙ্গ থেকে যে বায়ু নির্গত হয় তা বিক্ষিপ্তভাবে বহু বার বের হয়ে থাকে। সে কি প্রত্যেক নামাযের জন্য অযু করবে?’

তিনি উত্তর দেন: “উক্ত বিষয়ে আলেমদের মাঝে প্রসিদ্ধ মতভেদ রয়েছে। বিষয়টি হলো: বায়ু নির্গমনের ক্ষেত্রে মহিলাঙ্গ কি গুহ্যদ্বারের হুকুম গ্রহণ করবে? আলেমদের মাঝে কেউ কেউ বলেন: মহিলাঙ্গ থেকে বায়ুর নির্গমন গুহ্যদ্বার থেকে বায়ুর নির্গমনের হুকুমে পড়বে। এটি কোনো বিষয়কে তার সদৃশ বিষয়ের হুকুম প্রদানের দিক থেকে। আর এই মতটি শক্তিশালী। নিঃসন্দেহে এই মতটি নিরাপদ বিবেচনায় অগ্রাধিকার পায়।”

কিন্তু যদি নারীর এমন অবস্থা হয় যে তার জন্য প্রতি নামাযের জন্য অযু করা সম্ভবপর না হয় কিংবা কষ্টকর হয়ে পড়ে, তাহলে সে মুস্তাহাযা নারীর হুকুমে পড়বে, যে মুস্তাহাযা নারীর সর্বদা রক্ত বের হতে থাকে। এমন নারী প্রতি নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করলেই অযু করবে এবং এরপর কী বায়ু বের হলো সেটির পরোয়া করবে না। যার গুহ্যদ্বার দিয়ে অনবরত বায়ু নির্গত হয়, তার অবস্থাও অনুরূপ। আর এমন নারীর জন্য তার দ্বীন ও ইবাদতের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও নিরাপত্তা গ্রহণই অধিক উপযুক্ত। আর আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ।”[সমাপ্ত][শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android