0 / 0

অসুস্থ ব্যক্তি কি তায়াম্মুম করতে পারবে কিংবা দু’য়ের অধিক নামায একত্রে আদায় করতে পারবে কিংবা নাপাক ডায়াপার নিয়ে নামায পড়তে পারবে?

Frage: 180122

এক ব্যক্তি শারীরিকভাবে অক্ষম; নড়াচড়া করতে পারে না। তার বোন ছাড়া তাকে দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। তার বোন তাকে পায়খানা-পেশাব করান এবং যতদূর সম্ভব তার লজ্জাস্থান থেকে দৃষ্টি এড়িয়ে রাখেন। আলহামদু লিল্লাহ্‌; সে ব্যক্তি নামায আদায় করে। তার বোন তিনবার তার Diaper পরিবর্তন করে দেয়। কিন্তু, এতে অসুস্থ ব্যক্তির ও তার বোনের খুব কষ্ট হয়। সে ব্যক্তি Incontinence (নিয়ন্ত্রণহীন মুত্রত্যাগ) রোগে আক্রান্ত (আল্লাহ্‌ আপনাদের সম্মানিত করুন)। তিনি ফজরের নামায পড়েন (ঠিক সময়ে পড়েন)। যোহর ও আসর একত্রে পড়েন। মাগরিব ও এশা একত্রে পড়েন। এ বোন তার ভাইকে পরিষ্কার করা ও পবিত্রতা করা সম্পর্কে জানতে চান? এবং তার ভাই কি এর চেয়ে বেশি ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করার রুখসত (ছাড়) আছে? কেননা শৌচকর্ম ও ওযু করতে তার ভাইয়েরও কষ্ট হয় এবং তারও কষ্ট হয়। তার জন্যে কি তায়াম্মুম করা জায়েয হবে? কিংবা Diaper না খুলে নামায পড়া কি জায়েয হবে?   

Inhalt der Antwort

Lob sei Allah, und Frieden und Segen sei auf dem Gesandten Allahs und seiner Familie.

এক:

মূল বিধান হচ্ছে—একজন পুরুষের লজ্জাস্থান তার মা বা বোন কেউই দেখা জায়েয নয়। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "তুমি তোমার লজ্জাস্থানকে হেফাযতে রাখ (সবার কাছ থেকে); শুধু তোমার স্ত্রী ও তোমার দক্ষিণহস্ত যার মালিক (দাসী) সে ছাড়া"।[সুনানে আবু দাউদ (৪০১৭), সুনানে তিরমিযি (২৭৯৪), তিরমিযি বলেন: হাদিসটি হাসান। শাইখ আলবানীও 'সহিহুত তিরমিযি' গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

তবে, বোনের জন্য তার ভাইকে পরিষ্কার করা জায়েয হবে; যদি ভাই নিজে নিজেকে পরিষ্কার করতে অক্ষম হয় এবং তার স্ত্রী না থাকে; যিনি তার সেবা করবেন ও তাকে পরিষ্কার করে দিবেন এবং তার খেদমত করার জন্য পুরুষ কেউ না থাকে। কেননা জরুরী পরিস্থিতিতে ও তীব্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রে লজ্জাস্থান অনাবৃত করা ও স্পর্শ করা জায়েয আছে। তবে, যে যে অবস্থায় লজ্জাস্থানের দিকে না তাকিয়ে ও হাত দিয়ে স্পর্শ না করে করা সম্ভবপর সে সে ক্ষেত্রে সেভাবে করাটা তার উপর ওয়াজিব। আর উত্তম হচ্ছে—কোন একটি আচ্ছাদন ব্যবহার করে কাজটি করা; যেমন- কোন ন্যাকড়া বা মোজা বা এ জাতীয় অন্য কিছু। 

দুই:

নামাযের মূল বিধান হচ্ছে— সক্ষমতা অনুযায়ী নামায এর নির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করা। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী: “নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা মুমিনদের ওপর ফরয”।[সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩] কিছু কিছু অবস্থায় যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশার নামায অগ্রিম একত্রে কিংবা বিলম্বে একত্রে আদায় করা জায়েয আছে; যেমন- সফর অবস্থায়, রোগের কারণে ও এ জাতীয় অন্য কোন কারণে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) "মাজমুউল ফাতাওয়া" গ্রন্থে (২২/২৯৩) বলেন: "নামায একত্রে আদায় করার কারণ হচ্ছে— প্রয়োজন ও ওজর। যদি একত্রে নামায আদায় করার প্রয়োজন হয় তাহলে সফর সংক্ষিপ্ত হোক কিংবা দীর্ঘ হোক নামায একত্রিত করতে পারবে। অনুরূপভাবে বৃষ্টি ও এ ধরণের কোন কারণেও একত্রিত করতে পারবে। রোগ ও এ ধরণের কোন কারণেও একত্রিত করতে পারবে। এছাড়াও অন্যান্য কারণে নামায একত্রিত করতে পারবে। উদ্দেশ্য হচ্ছে- উম্মতের উপর থেকে কাঠিন্য দূর করা।"[সমাপ্ত]

আরও জানতে 97844 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

শরিয়তে দুই ওয়াক্তের চেয়ে বেশি নামায একত্রিত করার রুখসত (ছাড়) আসেনি। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কোন নামায নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত অন্য সময়ে আদায় করা জায়েয নয়; তবে শরিয়ত অনুমোদিত একত্রিতকরণের অবস্থা ছাড়া। এ কারণে দুই ওয়াক্তের চেয়ে বেশি নামায একত্রে আদায় করা জায়েয নয়। কেননা শরিয়তে এমন কোন বিধান নাই।

স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়: এমন এক রোগীনি সম্পর্কে যিনি তার রোগের কারণে এবং এক হাসপাতাল থেকে অপর হাসপাতালে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে সময়মত নামায পড়তে পারেন না; জবাবে তারা বলেন: "নামায নির্ধারিত সময়ের পরে পড়া জায়েয নয়। আপনার উচিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার সাধ্যানুযায়ী নামায পড়ে নেয়া। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "তুমি দাঁড়িয়ে নামায আদায় কর, যদি তা না পার তাহলে বসে বসে আদায় কর, যদি সেটাও না পার তাহলে কাত হয়ে শুয়ে আদায় কর। যদি সেটাও না পার তাহলে চিৎ হয়ে শুয়ে নামায আদায় কর।" রোগীর জন্য যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করা জায়েয; দুই ওয়াক্তের কোন এক ওয়াক্তে। এবং মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করা জায়েয; দুই ওয়াক্তের কোন এক ওয়াক্তে।"[ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দায়িমা (৮/৮৩) থেকে সমাপ্ত]

তিন:

পানি থাকা ও পানি ব্যবহারের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করা জায়েয নয়। কিন্তু, রোগী যদি নিজে পানি ব্যবহার করতে না পারেন কিংবা পানি ব্যবহার করলে ক্ষতির আশংকা করেন কিংবা পানি ব্যবহার করতে গিয়ে তার তীব্র কষ্ট হয়; সেক্ষেত্রে তার জন্য তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে (মলমুত্র ত্যাগ করে) আসে কিংবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং (গোসল করার জন্য) পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং (যথারীতি) মুখমণ্ডল ও হাত মুছে নেবে। আল্লাহ্‌ তো মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।"[সূরা নিসা, আয়াত: ৪৩]

কাযী ইবনুল আরাবী তাঁর "আহকামুল কুরআন"এ (১/৫৬০) বলেন:

"রোগ মানে হচ্ছে—শরীর তার সুষম ও স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বক্র ও অস্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়া। এটি দুই ধরণের হতে পারে: সামান্য ও অধিক। হতে পারে রোগী পানি ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছে। হতে পারে রোগীকে পানি তুলে দেয়ার মত কেউ নেই এবং রোগী নিজেও পানি উঠাতে সক্ষম নয়। আয়াতের শর্তহীন ভাষা প্রত্যেক এমন রোগীকে পানি ব্যবহারের বৈধতা দিচ্ছে, যিনি পানি ব্যবহারে ভয় পাচ্ছেন ও কষ্ট পাচ্ছেন।"[সমাপ্ত] 

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: "আমি বিছানায় শয্যাশায়ী। নড়াচড়া করার মত শক্তি রাখি না। এমতাবস্থায় আমি নামাযের জন্য কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পারি ও নামায পড়তে পারি? জবাবে তাঁরা বলেন: এক: মুসলিমের উপর পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। যদি কোন রোগের কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হয় তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। যদি তায়াম্মুমও করতে না পারে তাহালে তার উপর থেকে পবিত্রতার বিধান মওকুফ হয়ে যাবে এবং সে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় নামায পড়বে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "তোমরা সাধ্যমত আল্লাহ্‌কে ভয় কর"। আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: "তবে দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কষ্ট চাপিয়ে দেননি।"[সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৭৮] পক্ষান্তরে, পেশাব ও পায়খানার যা কিছু বের হয় সেটা পাথর দিয়ে কিংবা পবিত্র টিস্যুপেপার দিয়ে পরিষ্কার করাই যথেষ্ট। এগুলো দিয়ে ময়লা বের হওয়ার স্থানটি তিন বা ততোধিকবার পরিষ্কার করবে; যাতে করে স্থানটি নির্মল হয়ে যায়।"[ফাতাওয়াল লাজনাদ্‌ দায়িমা (৫/৩৪৬)]

চার:

কোন রোগীর জন্য নাপাকি বহনকারী Diaper নিয়ে নামায আদায় করা জায়েয নয়। এর বদলে সে ব্যক্তি তার নিকটে কোন পাত্র রাখতে পারেন; যাতে তিনি তার প্রয়োজন সারবেন এবং ঢিলা, টিস্যু বা এ জাতীয় অন্য কিছু ব্যবহার করে তিনি শৌচকর্ম করবেন।

যদি তার জন্য Diaper ব্যবহার করা সহজতর হয়; সে ক্ষেত্রে তার উপর ওয়াজিব হল— Diaper-এ নাপাকি থাকলে নামাযের পূর্বে সেটা খুলে ফেলা ও অন্যটি পরা। অনুরূপভাবে তাকে নাপাকি থেকে শৌচকর্মও করতে হবে। আর যদি তিনি পেশাব-ঝরা রোগে আক্রান্ত হন তাহলে তার উপর ওয়াজিব হল নাপাকি বের হওয়ার স্থানটি ধৌত করা। এরপর তিনি এমন কিছু পরিধান করবেন যাতে করে পেশাব না ছড়ায় এবং নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর ওযু করবেন; যদি কোন কিছু বের হয়ে থাকে। প্রত্যেক নামাযের জন্য তাকে পেশাব বের হওয়ার স্থানটি বা পট্টিটি ধৌত করতে হবে না। যদি তিনি পেশাবকে সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে কসুর করেন তাহলে ভিন্ন কথা।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Quelle

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android