ডাউনলোড করুন
0 / 0

আকীকার হুকুম এবং দরিদ্রের ওপর থেকে কি আকীকার হুকুম মওকূফ হয়?

প্রশ্ন: 20018

আল্লাহ আমাকে একজন সন্তান দিয়েছেন। আমি শুনেছি আমার স্বামীকে আকীকাস্বরূপ দু’টি ছাগল জবাই করতে হবে। বিপুল পরিমাণ ঋণ থাকায় তার যদি আর্থিক সঙ্গতি না থাকে তাহলে তার ওপর থেকে কি এই হুকুম মওকূফ হবে?

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

এক:

আকীকার হুকুমের ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তারা মোট তিনটি মত পোষণ করেন:

কেউ মনে করেন এটা ওয়াজিব। কেউ মনে করেন এটা মুস্তাহাব। আর কেউ মনে করেন এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। সম্ভবত শেষ মতটা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত।

স্থায়ী কমিটির আলেমরা বলেন:

আকীকা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ভেড়া (বা ছাগল); এমন দু’টি যেগুলো কুরবানী করার উপযুক্ত; আর মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ভেড়া (বা ছাগল); যা সপ্তম দিনে জবাই করা হবে। সপ্তম দিনের চেয়ে বেশি দেরী হয়ে গেলে যে কোনো সময়ে জবাই করা জায়েয হবে। দেরী করার কারণে গুনাহ হবে না। তবে সম্ভব হলে আগেভাগে করা উত্তম।

‘ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ’ (১১/৪৩৯)

তবে তারা একমত যে দরিদ্র ব্যক্তির উপর এটা আবশ্যক নয়; ঋণী ব্যক্তির উপর তো নয়-ই। আকীকার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন হজ্জও ঋণ পরিশোধের উপর অগ্রাধিকার পায় না।

সুতরাং আপনার স্বামীর আর্থিক অবস্থার কারণে আপনাদের উপর আকীকা আবশ্যকীয় নয়।

স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

‘আমার কয়েকজন সন্তান আছে। অর্থসংকটে আমি তাদের কারো আকীকা করতে পারিনি। যেহেতু আমি চাকুরিজীবী। আমার বেতন সীমিত; যেটা দিয়ে মাসিক খরচ ছাড়া অন্য কিছু করা যায় না। ইসলামের দৃষ্টিতে আমার ছেলেদের আকীকা দেওয়ার হুকুম কী?’

তারা উত্তর দিয়েছেন:

প্রশ্নে আপনি আপনার আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন যে, আপনার আয় দিয়ে শুধু আপনার নিজের ও পরিবারের খরচ চলে; যদি বাস্তবতা এমনই হয় তাহলে আল্লাহ্‌র নৈকট্যের নিমিত্ত আপনার ছেলেদের পক্ষ থেকে আকীকা না দিলে এতে কোন গুনাহ হবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দেন না।”[বাকারা: ২৮৬] তিনি আরও বলেন: “তবে তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কষ্ট চাপিয়ে দেননি[হজ্জ: ৭৮] তিনি আরও বলেন: “তোমরা তোমাদের সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় করো।”[তাগাবুন: ১৬] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: “আমি যদি তোমাদেরকে কোনো নির্দেশ প্রদান করি, তাহলে সাধ্যমত তোমরা সেটা পালন করো। আর যদি কোনো কিছু করতে নিষেধ করি, তাহলে তোমরা সেটা থেকে বিরত থাকো।” আপনার জন্য যখন সহজ হবে তখন আকীকা করাটা শরীয়তে অনুমোদিত।[ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ (১১/৪৩৬, ৪৩৭)]

স্থায়ী কমিটিকে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

‘এক লোকের কয়েকজন ছেলে আছে। তিনি তাদের কারো পক্ষ থেকে আকীকা করেননি। যেহেতু তিনি দরিদ্র ছিলেন। কয়েক বছর পরে আল্লাহ অনুগ্রহ করে তাকে ধনী করেছেন। তার উপর আকীকা দেয়া কি আবশ্যক হবে?’

তারা উত্তর দিয়েছেন: ‘আপনি যেমনটা উল্লেখ করেছেন বাস্তবতা যদি এমনই হয় তাহলে তার করণীয় হলো প্রত্যেক ছেলের পক্ষ থেকে দুটি করে ছাগল জবাই করা।’[ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ (১১/৪৪১, ৪৪২)]

শাইখ ইবনে উছাইমীনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

এক লোকের কয়েকজন ছেলে-মেয়ে আছে। তিনি অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা অবহেলার কারণে তাদের কারো আকীকা দেয়নি। এখন তাদের কেউ কেউ বড়। এই ব্যক্তির করণীয় কী?’

তিনি উত্তর দেন:

‘যদি তিনি এটা আগে না জেনে থাকেন কিংবা কাল দিব, পরশু দিব করতে করতে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায় তাহলে তিনি এখন তাদের পক্ষ থেকে আকীকা করলে সেটা ভালো। আর যদি আকীকা দেয়ার শরয়ী সময়ে তিনি দরিদ্র থাকেন তাহলে তার ওপর কোনো দায় নেই।’ [লিকাউল বাবিল মাফতূহ (২/১৭-১৮)]

অনুরূপভাবে এই ব্যক্তির পরিবারের ওপর তার পক্ষ থেকে জবাই করা ওয়াজিব নয়; তবে করলে জায়েয হবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দৌহিত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে আকীকা করেছিলেন। এটি বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ (২৮৪১) ও নাসাঈ (৪২১৯)। শাইখ আলবানী তার ‘সহীহ আবু দাউদ’ (২৪৬৬) গ্রন্থে বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন।

দুই:

যদি আপনাদের হজ্জ পালন ও আকীকা করা একটি অপরটির সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়; তাহলে অকাট্যভাবে হজ্জ প্রাধান্য পাবে। আপনারা যদি নিজেদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আকীকা করতে চান সেটা সন্তানেরা বড় হয়ে গেলেও করা বৈধ। যারা দাওয়াত খেতে আসবে তাদেরকে আকীকার কথা বলার আবশ্যকতা নেই। আর আপনাদের এ কাজ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করাটাও তাদের জন্য বৈধ নয়। কারণ আপনারা সঠিক কাজ করেছেন। আকীকার গোশত রান্না করে মানুষকে দাওয়াত খাওয়ানো শর্ত নয়। বরং কাঁচা মাংস বণ্টন করাও বৈধ।’

স্থায়ী কমিটির আলেমরা বলেন,

‘আকীকা হলো সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে জবাইকৃত পশু। এটা সন্তান প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দেওয়া হয়। সেই সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক। আকীকার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলোর ভিত্তিতে এটি সুন্নাহ। যিনি নিজ সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা দিচ্ছেন তিনি মানুষকে নিজ বাড়িতে বা অনুরূপ কোনো জায়গায় আকীকার খোশত খেতে দাওয়াত দিতে পারবেন। আবার কাঁচা বা রান্নাকৃত গোশত দরিদ্র লোকজন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্যদের মাঝে বণ্টন করতে পারেন।’

ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ (১১/৪৪২)।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android