পত্রিকায় প্রকাশিত জ্যোর্তিবিদদের হিসাবের ওপর নির্ভর করে আমরা কি চন্দ্র-সূর্যগ্রহণের নামায আদায় করব? যদি অন্য কোন দেশে চন্দ্র-সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয় আমরা কি নামায আদায় করব; নাকি চর্মচক্ষে আমাদের চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ দেখা আবশ্যকীয়?
যারা চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করেনি কিংবা তাদের দেশে এটি ঘটেনি তাদের জন্য চন্দ্র-সূর্যগ্রহণের নামায পড়া শরিয়তসম্মত নয়
প্রশ্ন: 20368
উত্তরের সংক্ষিপ্তসার
যে দেশে চন্দ্র-সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়নি সেই দেশবাসীর জন্য চন্দ্র-সূর্যগ্রহণের নামায পড়া শরিয়তে অনুমোদিত নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার নির্দেশকে এবং এর সাথে যা কিছু উল্লেখ করেছেন সেগুলোকে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ দেখার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন; ‘শীঘ্রই গ্রহণ সংঘটিত হবে’ কিংবা ‘অমুক দেশে ঘটবে’ জ্যোর্তিবিদদের এমন সংবাদের সাথে সম্পৃক্ত করেননি।
Table Of Contents
নামায, দোয়া, যিকির ও ইস্তিগফারের নির্দেশ চন্দ্র-সূর্যগ্রহণ দর্শনের সাথে সম্পৃক্ত; জ্যোর্তিবিদদের হিসাবের সাথে নয়
মুসলমানেরা যখন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবে তখন সালাতুল কুসুফ (সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের নামায) আদায় করা, যিকির করা ও দোয়া করার নির্দেশ সম্বলিত হাদিসগুলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থেকে সহিহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের মধ্য থেকে দুইটি নিদর্শন। কারো মরণ বা জীবনের কারণে যে দুটোর গ্রহণ সংঘটিত হয় না। কিন্তু আল্লাহ্ই এ দুটোকে প্রেরণ করেন; যাতে এর মাধ্যমে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করেন। যখন তোমরা গ্রহণ প্রত্যক্ষ করবে তখন নামায আদায় করবে, দোয়া করবে; যতক্ষণ পর্যন্ত না গ্রহণ দূরীভুত হয়”। অপর এক ভাষ্যে এসেছে: “যখন তোমরা গ্রহণ প্রত্যক্ষ করবে তখন ভয়ার্তচিত্তে আল্লাহ্র যিকির, দোয়া ও ইস্তিগফারের দিকে ছুটে আসবে”। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায, দোয়া, যিকির ও ইস্তিগফারের নির্দেশকে চন্দ্র-সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন; হিসাবকারীদের হিসাবের সাথে নয়।
তাই মুসলমানদের ওপর আবশ্যক হলো: সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা, সুন্নাহর ভিত্তিতে আমল করা এবং সুন্নাহ বিরোধী সবকিছু থেকে সতর্ক থাকা।
পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে জানা যায়, যারা হিসাবকারীদের হিসাবের ওপর নির্ভর করে গ্রহণের নামায আদায় করেছেন তারা ভুল করেছেন এবং সুন্নাহ্র বরখেলাফ করেছেন।
যে দেশে চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ ঘটেনি সেই দেশবাসীর জন্য চন্দ্র-সূর্যগ্রহণের নামায পড়া শরিয়তে অনুমোদিত নয়
আরও জানা উচিত যে দেশে গ্রহণ সংঘটিত হয়নি সেই দেশবাসীর জন্য গ্রহণের নামায আদায় করা শরিয়তে অনুমোদিত নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার নির্দেশকে এবং এর সাথে যা কিছু উল্লেখ করেছেন সেগুলোকে গ্রহণ দেখার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন; ‘শীঘ্রই গ্রহণ সংঘটিত হবে’ কিংবা ‘অমুক দেশে ঘটবে’ জ্যোর্তিবিদদের এমন সংবাদের সাথে সম্পৃক্ত করেননি। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর এবং যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।”[সূরা হাশর, আয়াত: ৭] তিনি আরও বলেন: “অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ২১] তিনি আরও বলেন: “অতএব, যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা যেন তাদের ওপর কঠিন পরীক্ষা কিংবা ক্ষ্টদায়ক আযাব আসার ব্যাপারে সতর্ক থাকে।”[সূরা নূর, আয়াত: ৬৩]
এটি সুবিদিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বাধিক ইলমধারী ও মানুষের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকামী এবং তিনি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তাঁর বিধিবিধানের প্রচারক। যদি চন্দ্রগ্রহণ-সূর্যগ্রহণের নামায হিসাবকারীদের সংবাদের ভিত্তিতে পড়া শরিয়তের বিধান হত কিংবা যে কোন স্থানে সংঘটিত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত হতো, যে গ্রহণ কেবল সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অধিবাসীরা ছাড়া অন্যেরা প্রত্যক্ষ করে না; তাহলে তিনি সেটা বর্ণনা করতেন এবং উম্মাহকে সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতেন। যেহেতু তিনি সেটি বলেননি; বরঞ্চ বিপরীতটাই বলে গেছেন এবং চন্দ্রগ্রহণ-সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করার উপর নির্ভর করার প্রতি উম্মাহকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন; এর থেকে জানা যায় যে, যে ব্যক্তি চন্দ্রগ্রহণ-সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করেনি কিংবা তার দেশে সেটি ঘটেনি তার জন্য চন্দ্রগ্রহণ-সূর্যগ্রহণের নামায পড়া শরিয়তসম্মত নয়। আল্লাহ্ই তাওফিক দেয়ার মালিক।
সূত্র:
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায-এর ফতোয়া ও প্রবন্ধসমগ্র (খণ্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৩০)