0 / 0
2,391২১/মহররম/১৪৪৩ , 29/আগস্ট/2021

কোন সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কিয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত করার অনুরোধ করেছিলেন মর্মে কোন বর্ণনা সাব্যস্ত আছে কি?

প্রশ্ন: 217507

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় কোন সাহাবী (কিয়ামত দিবসের সাথে সংশ্লিষ্ট) শাফায়াত (ইস্তিগফার নয়) তলব করেছেন মর্মে সাব্যস্ত হয়েছে কি?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

এক:

একাধিক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শাফায়াত তলব করেছিলেন মর্মে সাব্যস্ত হয়েছে।

ইমাম আহমাদ (১৬০৭৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জনৈক খাদেম পুরুষ কিংবা নারী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদেমকে বলতেন: তোমার কোন প্রয়োজন আছে কি? বর্ণনাকারী বলল: একদিন সে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমার একটা প্রয়োজন আছে। তিনি বললেন: তোমার কী প্রয়োজন? সে বলল: আমার প্রয়োজন হল কিয়ামতের দিন আপনি আমার জন্য সুপারিশ করবেন। তিনি বললেন: কে তোমাকে এই দিক-নির্দেশনা দিয়েছে? সে বলল: আমার প্রভু। তিনি বললেন: এই প্রয়োজন ছেড়ে দেয়ার নয়। তবে অধিক সেজদা দেয়ার মাধ্যমে তুমি আমাকে সহযোগিতা কর।”।

হাইছামী ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ গ্রন্থে (২/২৪৯) বলেন: হাদিসটি ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন এবং এর বর্ণনাকারীগণ সহিহ হাদিসের বর্ণনাকারী। আলবানী ‘সিলসিলা সাহিহাতে’ (২১২০) বলেছেন: এর সনদ সহিহ ও মুসলিমের শর্তে উত্তীর্ণ]

ইমাম আহমাদ (২৪০০২), ইবনে হিব্বান (২১১) ও তাবারানী ‘আল-কাবীর’ গ্রন্থে (১৩৪) আওফ বিন মালিক আল-আশজাঈ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: একরাতে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিয়ে যাত্রা বিরতি করলেন। আমাদের প্রত্যেকে তার বাহনের উটের সামনের পায়ের উপর বিছানা পাতল। বর্ণনাকারী বলেন: আমি কিছু রাতে জেগে গেলাম। জেগে দেখলাম রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উটের সামনে কেউ নেই। তখন আমি রাসূলুল্লাহ্‌কে খুঁজতে বের হলাম। এর মধ্যে মুয়ায বিন জাবাল ও আব্দুল্লাহ্‌ বিন কায়েসকে দাঁড়ানো অবস্থায় পেয়ে বললাম: রাসূলুল্লাহ্‌ কোথায়? তারা বলল: আমরা জানি না; তবে উপত্যকার উপর থেকে একটা শব্দ শুনেছি। যে শব্দটি বাহনের জিনের শব্দের মত। সে বলল: তোমরা একটু থাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। এসে বললেন: নিশ্চয় আমার কাছে আজ রাতে আমার প্রভুর পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক এসেছে এবং আমাকে দুটো বিষয়ের একটি নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছে: আমার উম্মতের অর্ধেক জান্নাতে প্রবেশ করবে কিংবা শাফায়াত। আমি শাফায়াতকে নির্বাচন করেছি। আমরা বললাম: আল্লাহ্‌র দোহাই ও সঙ্গিত্বের দোহাই দিচ্ছি: আপনি আমাদেরকে আপনার শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না?! তিনি বললেন: তোমরা আমার শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন: আমরা দ্রুত লোকদের উদ্দেশ্যে ছুটে গেলাম। তারাও তাদের নবীকে হারিয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: নিশ্চয় আজ রাতে আমার প্রভুর কাছ থেকে এক আগন্তুক আমার কাছে এসে আমাকে দুটো বিষয়ের মধ্যে একটি নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছে: আমার উম্মতের অর্ধেক জান্নাতে প্রবেশ করবে কিংবা শাফায়াত। আমি শাফায়াতকে নির্বাচন করেছি। তারা বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমরা আল্লাহ্‌র দোহাই ও সঙ্গিত্বের দোহাই দিচ্ছি। আমাদেরকে আপনার শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না? বর্ণনাকারী বলেন: যখন অনেকে শোরগোল করছিল তখন তিনি বললেন: আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমার উম্মতের মধ্যে যে আল্লাহ্‌র সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না তার জন্যই আমার শাফায়াত হবে।”[মুসনাদের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে (৩৬৩৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

দুই:

এই হাদিসদ্বয়ে ও অন্যান্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শাফায়াত চাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: তিনি যেন তাদের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেন যাতে করে তারা তাঁর শাফায়াত পেতে পারে এবং আল্লাহ্‌ তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য তাঁকে অনুমতি দেন। কেননা তাবারানীর ‘আল-কাবীর’ গ্রন্থের (১৩৬) রেওয়ায়েতে এই হাদিসটির ভাষ্য এভাবে এসেছে: “আমরা বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদেরকে শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেন: হে আল্লাহ্‌! আপনি তাদেরকে শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন। এরপর আমরা লোকদের কাছে এসে তাদেরকে জানালাম। তখন তারাও বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করুন যেন আমাদেরকে আপনার শাফায়াতপ্রাপ্তদের দলভুক্ত করেন। তখন তিনি বললেন: হে আল্লাহ্‌! আপনি তাদেরকে শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”

ইমাম আহমাদ (১৯৭২৪) একই অর্থবোধক হাদিস আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তাতে এসেছে: “এরপর তারা তাঁর কাছে আসতে লাগল এবং বলতে লাগল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদেরকে আপনার শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি তাদের জন্য দোয়া করলেন।”

এবং যেহেতু শাফায়াতের মালিক আল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “বলুন, সকল শাফায়াত আল্লাহ্‌র জন্য”।[সূরা যুমার, আয়াত: ৪৪] তাই আল্লাহ্‌ অনুমতি দেয়া ছাড়া কেউ শাফায়াত করতে পারবে না। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে শাফায়াত করবে?”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৫৫] শাফায়াতের হাদিসে এসেছে: “…বলা হবে: ইয়া মুহাম্মদ! আপনার মাথা তুলুন। বলুন, আপনার কথা শুনা হবে। আপনি প্রার্থনা করুন; আপনাকে তা দেয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন; আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তখন আমি মাথা উত্তোলন করব এবং আমার প্রভু আমাকে যে প্রশংসাটি শিখিয়ে দিবেন সেটা দিয়ে তাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি শাফায়াত করব। তিনি আমাকে একটি সীমা দিয়ে দিবেন। আমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনব এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব।”[সহিহ বুখারী (৪৪৭৬) ও সহিহ মুসলিম (১৯৩)]

পক্ষান্তরে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “নিশ্চয় তোমরা আমার শাফায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত” এই সংবাদের ভিত্তি হচ্ছে মহান প্রভুর পক্ষ থেকে ওহী। ঠিক যেভাবে তিনি যাদের জন্য প্রযোজ্য তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন এবং অনুরূপ অন্যান্য গায়েবী বিষয়ে জানান।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android