ডাউনলোড করুন
0 / 0

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার কিংবা ওযু করাকালে কুলির কিছু পানি গিলে ফেলে তার রোযা ভেঙ্গে যায়

প্রশ্ন: 222113

আমি শুচিবায়ু (OCD) তে আক্রান্ত। রমযান মাসে আমি যখন ওজু করতাম তখন বেশি বেশি থুথু ফেলতাম, এই ভয়ে না জানি গলার ভেতরে পানি চলে যায়। একবার আমি স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ইচ্ছা করে পানি খেয়ে ফেলেছি। এখন আমি এ গুনার কাফ্‌ফারা বা প্রতিকার কিভাবে করতে পারি?

একবার রমযানে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার মা বাদাম শুকাতেন। সে বাদামগুলো তিনি আমার পাশে রেখেছিলেন। আমি অনুভব করলাম যে, আমার মুখে কিছু একটা আছে; আমি জানি না, সেটা খাদ্যের অবশিষ্টাংশ; নাকি বাদাম। আমি উঠে গিয়ে কুলি করব এই অলসতা থেকে গিলে ফেলেছি। এখন আমার কি করণীয়?

অপর এক রমযানে আমার মুখের ভেতরে কিছু ওযুর পানি রয়ে গিয়েছিল। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে সে পানি গিলে ফেলেছি।

সর্বশেষ প্রশ্ন হচ্ছে– যে ব্যক্তি উঠে গিয়ে কুলি করার অলসতা থেকে বমি গিলে ফেলেছে তার ব্যাপারে হুকুম কি?

আমি এখন স্তন্যদায়ী। আমি আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করেছি। আমি কিভাবে আমার পাপের কাফ্‌ফারা বা প্রতিকার করতে পারি?

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

এক:

রোযাদার যখন গড়গড়া কুলি করে তখন মুখ থেকে পানি ফেলে দেয়া আবশ্যক। কুলি করার পর বারবার থুথু ফেলা শরিয়তসম্মত নয়। এটি একটি বদ অভ্যাস; যা শুচিবায়ু ও ইবাদতের মধ্যে সন্দেহের কারণ।

দেখুন: 49005 নং প্রশ্নোত্তর।

দুই:

আপনি বলেছেন: “একবার আমি স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে ইচ্ছা করে পানি খেয়ে ফেলেছি”।

  • আপনি যদি এর দ্বারা বুঝাতে চান যে, আপনার মুখে কুলির যে পানি রয়েছে সেটা বা সেটার কিছু অংশ গিলে ফেলেছেন: তাহলে আপনার রোযা ভেঙ্গে গেছে। এক্ষেত্রে আপনার উপর ফরয হল– তওবা করা এবং সে দিনের রোযার কাযা পালন করা।
  • আর আপনি যদি এর দ্বারা বুঝাতে চান যে, কুলি করার পর মুখের পানি বাহিরে ফেলে দিয়ে থুথু গিলে ফেলেছেন: তাহলে আপনার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। বুজাইরিমি (রহঃ) তার ‘হাশিয়াতে’ (২/৩৭৮) বলেন: “গড়গড়া কুলি করার পর থুথু ফেলে দেয়া সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও গিলে ফেললে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু এর থেকে বেঁচে থাকা কঠিন।”[সমাপ্ত]

অনুরূপভাবে আপনি বলেছেন: “আমার মুখের ভেতরে ওযুর কিছু পানি রয়ে গিয়েছিল”:

  • যদি এই পানিটি কুলির পানি হয় তাহলে আপনার রোযা ভেঙ্গে গেছে। আপনাকে এর কাযা পালন করতে হবে।
  • আর যদি কুলি করার পর ও মুখ থেকে পানি ফেলে দেয়ার পর মুখে যে আর্দ্রতা থাকে সেটা হয়ে থাকে: তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী আপনার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়।

তিন:

যদি কেউ তার দাঁতের মাঝে আটকে থাকা খাবার ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলে; যা সে বের করে ফেলতে সক্ষম, তাহলে এর দ্বারা তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলে; যেমন থুথুর সাথে গলার ভেতরে চলে গেল, এটাকে ফিরাতে পারল না; তাহলে তার রোযা সহিহ। তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়।

প্রশ্নকারী বোনের কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে থাকা খাবার গিলে ফেলেছেন এবং উঠে গিয়ে মুখ পরিস্কার করতে অলসতা করেছেন। যদি সেটা রাতের বেলায় ঘটে থাকে তাহলে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। আর যদি ফজর হওয়ার পর ঘটে থাকে তাহলে তাকে আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করার পাশাপাশি সে দিনের রোযা কাযা পালন করতে হবে।

চার:

যে ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি চলে এসেছে; তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়, তার রোযা সহিহ। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেছে তাকে রোযাটি কাযা পালন করতে হবে।

যে ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি আসার পর তিনি বমি গিলে ফেলেছেন; যদি তিনি সেটা অনিচ্ছাকৃতভাবে করে থাকেন তাহলে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলেন তাহলে তার রোযা নষ্ট হয়ে গেল এবং তার উপর কাযা পালন করা আবশ্যক। স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তাহলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি বমি এসে যায় তাহলে তার রোযা নষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি গিলে ফেললেও রোযা নষ্ট হবে না।[ফাতাওয়াল লাজনা দায়িমা (১০/২৫৪)]

সারকথা:

আপনার উপর ফরয হচ্ছে–

যে দিনগুলোর রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করেছেন সেগুলোর কাযা পালন করা; সেটা মুখে থাকা পানি গিলে ফেলার মাধ্যমে হোক, যে পানি থুথুর পানি নয়; কারণ থুথুর পানি গিলে ফেললে রোযা ভাঙ্গবে না কিংবা মুখে থাকা খাদ্যের অবশিষ্টাংশ গিলে ফেলার মাধ্যমে হোক কিংবা মুখে চলে আসা বমি গিলে ফেলার মাধ্যমে হোক। আপনি এমন দিনগুলোর সংখ্যা নির্ধারণ করবেন এবং সে দিনগুলোর কাযা রোযা পালন করবেন। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় আপনি যা করেছেন সেটার জন্য আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে তওবা করবেন।

এ রোযাগুলোর কাযা পালন করা দুধ পান করানোর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফরয হবে। কারণ স্তন্যদায়ী নারীর জন্য রোযা রাখাটা কষ্টকর হলে কিংবা এতে নিজের স্বাস্থ্যহানির আশংকা হলে কিংবা সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকা হলে দুধ পান করানোর মেয়াদের মধ্যে কাযা রোযা পালন করা তার উপর ফরয নয়।

আর আপনি কঠিন শুচিবায়ু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এবং স্নায়ুবিক চাপে থাকা: আমরা আশা করছি এক্ষেত্রে আপনার কোন দোষ নেই। তবে, ওয়াসওয়াসা বা শুচিবায়ু রোধ করার চেষ্টা করা আবশ্যকীয় এবং এটার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা। কারণ শুচিবায়ুর চিকিৎসার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে- এটাকে গুরুত্ব না দেয়া ও এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা এবং এর চাহিদামাফিক কিছু না করা।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android