ইসলামে কি এমন কিছু অবস্থা আছে যে, কিছু অবস্থায় যে নারীর সাথে বিবাহ জায়েয; আবার কিছু কিছু অবস্থায় একই নারীর সাথে বিবাহ জায়েয নয়?
এমন কিছু নারী যাদের সাথে কোন কোন অবস্থায় বিবাহ বন্ধন জায়েয; আর কোন কোন অবস্থায় জায়েয নয়
প্রশ্ন: 22302
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
হ্যাঁ; এমন কিছু অবস্থা রয়েছে। নীচে কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো যাতে বিষয়টি পরিস্কার হয়:
১। ইদ্দত পালনরত নারীকে অন্য কোন পুরুষ বিয়ে করা হারাম। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “এবং নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৩৫] এ বিধানের গূঢ় রহস্য হলো সেই নারী গর্ভবতী হওয়া থেকে নিরাপদ না হওয়া। যার ফলে একজনের পানির সাথে অন্যজনের পানির মিশ্রণ ঘটবে এবং বংশ পরিচয়ে জটিলতা তৈরী হবে।
২। ব্যভিচারী নারীকে বিয়ে করা; যদি তার ব্যভিচারের কথা জানতে পারে; যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই নারী তাওবা করে ও তার ইদ্দত শেষ হয়। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “এবং ব্যভিচারিণী নারী— তাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া কেউ বিয়ে করে না। আর মুমিনদের জন্য তা হারাম করা হয়েছে।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩]
৩। যে পুরুষ তার স্ত্রীকে তিন তালাক্ব দিয়েছে সেই নারীর অন্যত্র সঠিকভাবে বিয়ে হওয়া এবং ঐ স্বামী তার সাথে সহবাস করা ছাড়া তাকে বিয়ে করা হারাম। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তালাক্ব দুইবার… যদি তাকে তালাক্ব দেয়” অর্থাৎ তৃতীয় বার। তাহলে এরপর স্ত্রী আর এই স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অন্য এক স্বামীকে বিয়ে করে।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৩০]
৪। (হজ্জ-উমরার) ইহরামরত নারীকে বিয়ে করা হারাম, যতক্ষণ না সে নারী ইহরাম থেকে হালাল হন।
৫। দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “এবং দুই বোনকে একত্রিত করা”।[সূরা নিসা, আয়াত: ২৩] অনুরূপভাবে কোন নারী ও তার ফুফুকে এবং কোন নারী ও তার খালাকে একত্রে বিয়ে করা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা কোন নারী ও তার ফুফুর মাঝে (বিয়ের ক্ষেত্রে) একত্রিত করবে না এবং কোন নারী ও তার খালার মধ্যে একত্রিত করবে না”।[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিধানের হেতু বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “যদি তোমরা এটি কর তাহলে আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোকে ছিন্ন করবে”। আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো এ কারণে ছিন্ন হবে যেহেতু সতীনদের মাঝে ঈর্ষা থাকে। তাই যদি সতীনদের একজন অন্যদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়া হয়; তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন ঘটবে্। তবে যদি একজনকে তালাক্ব দিয়ে দেয়া হয় এবং তার ইদ্দত শেষ হয়ে যায় তখন তার বোন, ফুফু বা খালাকে বিয়ে করা জায়েয; সেই অনিষ্টটি অটুট না থাকার কারণে।
৬। চারজনের অধিক নারীকে একত্রে বিয়ে করা। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তাহলে (সাধারণ) নারীদের মধ্যে তোমাদের পছন্দ হয় এমন দুইজন, তিনজন কিংবা চারজনকে বিয়ে কর।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৩] এবং যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং তাদের চারজনের অধিক স্ত্রী ছিল তাদেরকে চারজন রেখে বাকীদেরকে তালাক্ব দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ফাদিলাতুশ শাইখ সালেহ আল-ফাওযান এর ‘আল-মুলাখ্খাস আল-ফিকহী’ (২/২৭১)