ফিতরার পরিমাণ কতটুকু? ঈদের নামাযের পরে ফিতরা পরিশোধ করা কি জায়েয হবে? এবং ফিতরা নগদ অর্থে দেয়া কি জায়েয হবে?
ফিতরার পরিমাণ এবং নগদ অর্থে ফিতরা দিলে কি আদায় হবে?
প্রশ্ন: 22888
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি মুসলমানদের উপর এক সা’ খেজুর ও এক সা’ যব ফিতরা দেয়া ফরয করেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যেন মানুষ নামাযে (অর্থাৎ ঈদের নামাযে) যাওয়ার আগে সেটা পরিশোধ করা হয়। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় ফিতরা দিতাম এক সা’ খাদ্য কিংবা এক সা’ খেজুর কিংবা এক সা’ যব কিংবা এক সা’ পনির কিংবা এক সা’ কিসমিস…। একদল আলেম এ হাদিসে উল্লেখিত ‘খাদ্য’ কে গম বলে ব্যাখ্যা করেছেন। অন্য আলেমগণ ব্যাখ্যা করেছেন যে, কোন অঞ্চলের মানুষ যেসব জিনিসকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গণ্য করে; সেটা গম হোক, ভুট্টা হোক কিংবা অন্য কিছু হোক। এটাই সঠিক অভিমত। কেননা ফিতরা হচ্ছে স্বচ্ছলদের পক্ষ থেকে অস্বচ্ছলদের প্রতি সান্ত্বনাস্বরূপ। স্থানীয় অঞ্চলের খাদ্য ছাড়া অন্য খাদ্য দিয়ে সান্ত্বনা পেশ করা কোন মুসলিমের উপর ওয়াজিব নয়। ওয়াজিব হচ্ছে উল্লেখিত সবগুলো শ্রেণীর এক সা’ খাদ্য। এক সা’ হল দুই হাতভরা চার অঞ্জলি। ওজনের হিসাবে প্রায় ৩ কিলোগ্রাম। তাই যদি কোন মুসলিম এক সা’ চাল কিংবা তার অঞ্চলের অন্য খাদ্যদ্রব্যের এক সা’ পরিমাণ পরিশোধ করে তাহলে আদায় হয়ে যাবে।
ফিতরা পরিশোধের সূচনা সময় হল ২৮ রমযানের রাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবর্গ ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা আদায় করতেন। মাস কখনও ২৯ দিন হয়, আবার কখনও ৩০ দিন হয়।
ফিতরা আদায় করার সর্বশেষ সময় হল ঈদের নামায। তাই ফিতরা আদায়ে নামাযের পর পর্যন্ত দেরী করা জায়েয নয়। যেহেতু ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি এটা (ফিতরা) নামাযের আগে আদায় করবে সেটা মকবুল ফিতরা। আর যে ব্যক্তি নামাযের পর আদায় করবে এটি সাধারণ একটি সদকা।”[সুনানে আবু দাউদ]
জমহুর (অধিকাংশ) মাযহাবের আলেমদের মতে, অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা জায়েয হবে না। দলিলের বিবেচনায় এ অভিমতটি অধিক শুদ্ধ। বরং খাদ্য দিয়ে আদায় করা ওয়াজিব। যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীবর্গ এবং উম্মতের অধিকাংশ ব্যক্তিবর্গ আদায় করেছেন। আল্লাহ্র কাছেই প্রার্থনা তিনি যেন, আমাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে দ্বীনিজ্ঞানে প্রজ্ঞা অর্জন করার ও এর উপরে অটল-অবিচল থাকার তাওফিক দেন।
আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীবর্গের উপর আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
সূত্র:
মাননী শাইখ বিন বায মাজাল্লাতুল বুহুছিল ইসলামিয়্যা, সংখ্যা-১৭, পৃষ্ঠা-৭৯-৮০