আমার ভাই এক সফর থেকে ফেরার পর অদ্ভুত সব কথাবার্তা বলছে। সে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করা শুরু করেছে। কারো সাথে কথা বলে না। দুই বছর সে বিদেশে ছিল। বিষয়টি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সে আমার মায়ের মুখের উপর থুথু মেরেছে। এরপর আমাদের বিশ্বাস হলো যে, সে মানসিক রোগী। তাই আমরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। কিন্তু ডাক্তার পরীক্ষা করে কিছু পেল না। আমাদের ধারণা হচ্ছে যে, তাকে জ্বিনে আছর করেছে কিংবা যাদু করা হয়েছে। আমরা সেটি কিভাবে জানতে পারব এবং কিভাবে এর থেকে মুক্তি পেতে পারব? এ কারণে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শয়তানের আছর ও কালো জাদুর আলামত
প্রশ্ন: 240
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
জ্বিনের আছর ও কালো জাদুর মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বলব:
জ্বিনের আছরের আলামত:
জনৈক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি জ্বিনের আছরের কিছু আলামত উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১। আযান ও কুরআন তেলাওয়াত শুনা থেকে চরমভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
২। তার উপরে তেলাওয়াত করাকালে বেহুশ হয়ে পড়া, খিঁচুনি দেয়া কিংবা ধরাশায়ী হওয়া।
৩। বেশি বেশি ভয়ানক স্বপ্ন দেখা।
৪। একাকী থাকা, মানুষ থেকে দূরে থাকা এবং অদ্ভুত সব আচরণ করা।
৫। তার উপরে তেলাওয়াত করা হলে কখনও কখনও যে শয়তান তাকে আছর করেছে সে কথা বলে উঠা।
৬। উন্মাদের আচরণ করা। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৭৫]
কালো জাদুর আলামত:
১। জাদুগ্রস্ত পুরুষ তার স্ত্রী কিংবা জাদুগ্রস্ত নারী তার স্বামীকে অপছন্দ করা। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “তা সত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন যাদু শিখতো যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতো।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১০৩]
২। তার বাসার বাহিরের অবস্থা থেকে বাসার ভেতরের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়া। বাসার বাহিরে থাকাকালে সে তার পরিবারের প্রতি আগ্রহী থাকে। কিন্তু যখন বাসায় প্রবেশ করে তখন সে তার স্ত্রীকে সাংঘাতিক অপছন্দ করে।
৩। স্ত্রী সহবাস করতে না পারা।
৪। গর্ভবতী নারীর গর্ভস্থিত সন্তান লাগাতরভাবে নষ্ট হওয়া।
৫। সুস্পষ্ট কোন কারণ ছাড়া আচরণের মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া।
৬। খাবার দাবারের প্রতি মোটেই চাহিদা না থাকা।
৭। তার এমন মনে হওয়া যে, সে অমুক কাজটি করেছে; অথচ সে করেনি।
৮। বিশেষ কোন ব্যক্তিকে অন্ধ আনুগত্য করা ও মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা।
উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা বাঞ্চনীয় যে, উল্লেখিত আলামতগুলোর কোন কোনটি দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জাদুগ্রস্ত বা জ্বিনের আছরগ্রস্ত হওয়া শর্ত নয়। বরঞ্চ এর কোন কোন আলামত শারীরিক কিংবা মানসিক কোন কারণেও হতে পারে।
নিরাময়ের উপায়:
১। আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুল (নির্ভর করা) এবং তাঁর কাছেই ধর্ণা দেয়া।
২। শরিয়তসম্মত রুকিয়া করা ও ঝাড়ফুঁক করা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝাড়ফুঁক হলো সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস দিয়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এগুলো দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল। এ দুটোর মত ঝাড়ফুঁক করার অন্য কিছু নেই। এ দুটোর সাথে সূরা ইখলাসও যোগ করা যায়। আর সূরা ফাতিহা দিয়ে রুকিয়া করা সফল রুকিয়া যেমনটি হাদিসে সাব্যস্ত।
জাদু থেকে নিরাময়ের ক্ষেত্রে আরেকটি উপায় হলো: বরই গাছের সাতটি সবুজ পাতা নিয়ে সেগুলোকে গুঁড়া করবে। এরপর সেগুলোকে একটি বালতিতে রাখবে এবং ঐ গুড়াগুলোর উপর গোসল করার জন্য প্রয়োজনমত পানি ঢালবে। এরপর পাত্রটিতে আয়াতুল কুরসি, সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস এবং জাদুর আয়াতগুলো তথা সূরা বাক্বারার ১০২ নং আয়াত, সূরা আরাফের ১১৭-১১৯ নং আয়াত, সূরা ই্উনুসের ৭৯-৮২ নং আয়াত, সূরা ত্বহার ৬৫-৬৯ নং আয়াত পড়বে। এরপর কিছু পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করবে। কোন কোন সালাফ এভাবে করে উপকার পেয়েছেন।
৩। জাদু কর্মটি খুঁজে বের করে সেটি নষ্ট করে ফেলা; যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছিলেন; যখন লাবিদ বিন আ’সাম আল-ইহুদী তাঁকে যাদু করেছিল।
৪। বৈধ ঔষধগুলো ব্যবহার করা। যেমন খালি পেটে ৭টি আলিয়া বারনি খেজুর (মদিনার এক জাতের খেজুর) খাওয়া। যদি এ খেজুর না-পাওয়া যায় তাহলে যে কোন খেজুর আল্লাহ্র ইচ্ছায় উপকারী হবে।
৫। হিজামা বা শিঙ্গা লাগানো।
৬। দোয়া করা।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন, আপনাদের ভাইকে সুস্থ করে দেন, তার ও আপনাদের বিপদ দূর করে দেন। নিশ্চয় তিনি নিরাময়কারী; তিনি ছাড়া অন্য কোন নিরাময়কারী নেই।
সূত্র:
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ