আমার বিয়ে হয়েছে দেড়মাস। আমি আবিষ্কার করেছি যে, আমার স্বামী পর্ণ ছবি ও ভিডিও ক্লিপ দেখে। আমি আমার ভেতরে আফসোস ও যন্ত্রণা অনুভব করছি। আমার জীবন সুখ থেকে দুঃখে পরিবর্তিত হয়েছে। আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি কিছুতেই এটা মানতে পারিনি। আমি তার সাথে বিদেশে অবস্থান করছি। আমি আশা করেছিলাম সে আমার জন্য আদর্শ স্বামী হবে। আমি আমার সাথে তার ভাল আচরণকে অস্বীকার করি না। কিন্তু এই বিষয়টি উদঘাটনের পর আমার মন ভেঙ্গে গেছে। আমি সারাক্ষণ কাঁদছি। সারাদিন চুপ করে থাকি; যা আমার আসল চরিত্রের বিপরীত। কিন্তু যেহেতু আমি বিদেশে অবস্থান করছি এবং আমার পরিচিত কেউ নেই। আমার স্বামীকে না জানিয়ে কোথাও যাওয়া আমার জন্য কঠিন। কারণ আমি চাই না যে, সে জানুক যে আমি কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য চাচ্ছি। সে আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সে ধুমপায়ী। আমি বিয়ের আগে এটি জানতাম না এবং বিয়ের পরও কিছুদিন পর্যন্ত জানতাম না। আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেছি যে, সে আমাকে নিয়ে সুখী হবে না কিংবা আমার সাথে তার জীবন সুখী হবে না। আমার স্বামীর সাথে আমার আচরণের পদ্ধতি সম্পর্কে আমি আপনাদের সাহায্য চাই। সে তৃতীয় লিঙ্গের ছবি ও ভিডিও দেখা, পুরুষের অঙ্গবিশিষ্ট নারীদের চিত্র দেখার অর্থ কি সে সমকামী?
পর্ণ ওয়েবসাইটগুলো দেখায় আসক্ত স্বামীর পরিত্রাণের উপায়
প্রশ্ন: 258604
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
প্রিয় বোন,
আমাদের এ যামানায় অনেক যুবক অশ্লীল পর্ণ দেখায় আসক্ত হয়ে পড়েছে; ইন্টারনেটে এসব পর্ণ ওয়েবসাইটগুলো দেখা সহজলভ্য হওয়ার কারণে। এই আসক্তি আসক্ত ব্যক্তিকে বাস্তবিক হালাল স্ত্রী নিয়ে তৃপ্ত হতে দিচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে কাল্পনিক হারামের প্রতি তার আসক্তি এবং নিজের কামনা-বাসনার অনুসরণ!
বিষয়টি শুধু এতে সীমাবদ্ধ নয় যে, আপনাকে নিয়ে তার সুখী হওয়া ও আনন্দিত হওয়া; বরং বিষয় হচ্ছে অন্য নারীর প্রতি হারাম দর্শনে তার আসক্তি। বিশেষতঃ আপনার সাথে বিয়ের প্রথম মাসেই সে এটি করছে।
এই আসক্তি একটি ব্যাধি; যার চিকিৎসা প্রয়োজন।
এই আসক্তির সর্বাধিক কার্যকরী ঔষধ হচ্ছে আসক্তির উৎসকে স্বেচ্ছায় বা জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন করা এবং সময়কে দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারী কাজে লাগানো। এর সাথে মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া; যাতে করে প্রয়োজন হলে ডাক্তার ঔষধ দিয়ে ও কথার মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা দিতে পারে।
এই আসক্তি থেকে তাকে মুক্ত করার জন্য জন্য আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তা করতে হবে এভাবে: এই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলো থেকে তাকে দূরে রাখার চেষ্টা করা; যেগুলো তার জন্য এই হারামের দরজা খুলে দিচ্ছে। যে সব গবেষণা এসব ডিভাইসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করছে সেগুলো নিয়ে তার সাথে কথা বলা। অনুরূপভাবে দুনিয়া ও দ্বীনের উপকারী বিষয়াবলী নিয়ে তার সাথে কথা বলা এবং আল্লাহ্র আনুগত্যশীল আমলগুলো পালন করার ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করা।
যদি এ ক্ষেত্রে সে সাড়া না দেয় কিংবা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আপনি তাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে বসার পরামর্শ দেন; এই ডিভাইসগুলোর আসক্তি থেকে কিংবা এগুলো ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট উদ্বিগ্নতার উপসর্গগুলো থেকে মুক্তির জন্য।
অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে একজন দ্বীনদার ও আমানতদার মনোরোগ কনসালটেন্টের শরণাপন্ন হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি। এমনকি সেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে হলেও। যাতে করে তিনি আপনাকে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে আপনার আচরণের বিষয়ে সাধারণ পরামর্শ দিতে পারেন এবং দাম্পত্য সম্পর্কের বিষয়ে বিশেষ পরামর্শ দিতে পারেন।
তবে জেনে রাখুন, দাম্পত্য সম্পর্কের খুঁটিনাটি বিষয়ে আপনার পিতা ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে আলোচনা করা জায়েয নয়; চাই তিনি মনোরোগ ডাক্তার হন কিংবা অন্য কেউ। যেহেতু এর ফলে ফিতনার দরজা খুলে যাওয়া কিংবা হারাম সম্পর্ক গড়ে উঠা ঘটে থাকে।
সংক্ষেপে মূলকথা হচ্ছে: এক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হলো আপনি তাকে অন্য কেউ থেকে বিমুখ করে আপনার মুখী করে রাখবেন। তাকে হালাল দিয়ে হারাম থেকে দূরে রাখবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার সর্বোচ্চ শ্রম ব্যয় করবেন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে আপনি রাব্বুল আলামীনের কাছে সওয়াব পাওয়ার নিয়ত করবেন।
তার তৃতীয় লিঙ্গের ক্লিপ দেখার প্রসঙ্গে বলব (আল্লাহ্ আমাদেরকে ও তাকে হেদায়েত করুন) এটি একটি বিকৃত আচরণ; যার মধ্যে বিকৃত বিষয় দিয়ে মজা পাওয়া অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর মানে এমনটি হওয়া আবশ্যক নয় যে, ব্যক্তি নিজেও বিকৃত (সমকামী)। কারণ সমকামী ব্যক্তি সাধারণত মেয়েদের চিত্র দেখে মজা পায় না। বরং এর উল্টোটাই হয়।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদেরকে ও তাকে হেদায়েত করেন।
নিশ্চয় তিনি এর অধিকারী ও এতে সক্ষম।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব