আমার বাবা আমাকে নির্দিষ্ট একটি প্রয়োজনে ব্যয় করার জন্য কিছু অর্থ দেন। তিনি আমাকে আমানত হিসেবে সেটি দেন না কিংবা ঐ কাজ ছাড়া অন্য কিছুতে ব্যয় করতে নিষেধও করেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন আমার অর্থের প্রয়োজন হয়, কিন্তু আমার কাছে থাকে না থাকে, তখন আমি তিনি যে অর্থ দিয়েছেন সেটি আমার প্রয়োজন পূরণে ব্যয় করি। এর হুকুম কী? আমি ঐ সম্পদ থেকে যা খাচ্ছি সেটা কি হারাম বলে গণ্য হবে? উল্লেখ্য, তিনি বিষয়টি জানেন না।
যাকে বিশেষ কোনো কাজে খরচ করার জন্য অর্থ প্রদান করা হয়েছে, তার জন্য ঐ কাজ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঐ অর্থ ব্যয় করার অনুমতি নেই। কারণ এটি শর্তযুক্ত হেবা তথা দান। এক্ষেত্রে শর্ত মেনে চলতে হবে; যদি না এটি জানা যায় যে দাতা নির্দিষ্ট কাজের জন্যে দিলেও অন্য খাতে ব্যয় করলে তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন।
শাইখ যাকারিয়া আল-আনসারীর (২/৪৭৯) ‘আসনাল মাত্বালিব’ গ্রন্থে এসেছে:
“যদি তাকে কিছু দিরহাম নিয়ে বলে: এটা দিয়ে তোমার জন্য একটি পাগড়ী কিনবে অথবা এটা দিয়ে তুমি গোসলখানায় যাবে অথবা অনুরূপ কোন কিছু; তাহলে দাতার উদ্দেশ্য রক্ষার্থে সেটাই নির্দিষ্ট হয়ে যাবে।
এটি সেই ক্ষেত্রে যদি পাগড়ী দিয়ে তার মাথা ঢাকা এবং গোসলখানায় প্রবেশ করার মাধ্যমে শরীর পরিষ্কার করাকে উদ্দেশ্য করে থাকে।
আর যদি সে এমন কিছু উদ্দেশ্য করে না থাকে, সাধারণ সৌজন্য দেখাতে গিয়ে এমন কথা বলে: তাহলে এটি নির্দিষ্ট হয়ে যাবে না। বরং ব্যক্তি এর মালিক হবে অথবা সে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে এটি ব্যয় করতে পারবে।”[সমাপ্ত]
শাইখ উলাইশ আল-মালেকী রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
“যদি মুকাতাব (মূল্য পরিশোধ করে স্বাধীন হতে ইচ্ছুক) দাসকে তার মূল্য পরিশোধে একদল ব্যক্তি অথবা একজন ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য করে এবং সে তা দিয়ে মূল্য পরিশোধ করার পর কিছু বাকি থেকে যায়:
তাহলে সাহায্যকারী দাতারা যদি মুকাতাব দাসকে দান করার উদ্দেশ্য না করে থাকে; তা এভাবে যে, তারা তাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্য করে থাকে অথবা কোনো উদ্দেশ্যই না করে থাকে; তাহলে দাতারা চাইলে অতিরিক্ত অর্থ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিবে। আর যদি দাস তাদের প্রদত্ত অর্থ মনিবকে দেওয়ার পর মুক্ত হতে না পারে, তাহলে তারা তাদের যে অর্থ দাসের মনিব গ্রহণ করেছে তা ফিরিয়ে নিতে তার কাছে যাবে।
পক্ষান্তরে, যদি তারা তাদের সাহায্য দ্বারা মুকাতাব দাসকে দান করা উদ্দেশ্য করে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত অর্থ ফিরিয়ে নিতে তারা দাসের কাছে যাবে না এবং সেই অর্থ দিয়ে যদি সে মুক্ত হতে না পারে, তবে তারা তার মনিবের হাত থেকে ঐ সম্পদ ফিরিয়ে নিতে যাবে না।
মুকাতাব দাসকে যদি একদল মানুষ মুক্ত হওয়ার জন্য কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করে, সে তা দিয়ে মুক্তিপণ পরিশোধ করে এবং কিছু অর্থ অতিরিক্ত থেকে যায়; এক্ষেত্রে যদি তারা তার মুক্তির জন্য সাহায্য করে থাকে, দান হিসেবে নয়; তাহলে সে যেন অতিরিক্ত অর্থ তাদের মাঝে যথাযথ ভাগ করে বণ্টন করে দেয় অথবা তারা যেন তাকে দায়মুক্ত করে দেয়। আর যদি সে পরিশোধ করে মুক্ত হতে অক্ষম হয়ে যায়, তাহলে তার অক্ষমতার আগে মনিব যা কিছু হস্তগত করেছে তা মনিবের জন্য হালাল; হোক সেটি দাসের উপার্জন কিংবা তাকে প্রদত্ত সদকা।
আর যদি তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য সাহায্য করা হয়, কিন্তু সে অর্থ তার জন্য যথেষ্ট না হয়, তাহলে সাহায্যকারী প্রত্যেকের জন্য সেই অর্থ ফিরিয়ে নেওয়া বৈধ হবে; যদি না মুকাতাবকে তারা দায়মুক্তি দেয়। যদি দেয় তাহলে সেটি তার হয়ে যাবে। আর যদি তারা তার মুক্তির জন্য না দিয়ে তাকে দান করে থাকে তাহলে সে মুক্ত হতে অক্ষম হলে উক্ত অর্থ তার মনিবের বলে গণ্য হবে।[সমাপ্ত]
আল-জুযুলী বলেন: কাউকে যদি বিশেষ কোন বিবেচনায় কোন অর্থ প্রদান করা হয়, যেমন: সে ইলমধারী বা নেককার বা দরিদ্র বলে, কিন্তু বাস্তবে যদি সে এমনটি না হয়, তাহলে তার জন্য এটি গ্রহণ না করা আবশ্যক হবে। আর যদি সে এটি গ্রহণ করে তাহলে তার উপর এটি ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক হবে। এটি খাওয়া তার জন্য হারাম। যদি সে এটি খেয়ে ফেলে তাহলে সে হারাম খেয়েছে বলে গণ্য হবে।”[সমাপ্ত][মিনাহুল জালীল (৯/৪৭৫)]
আরো জানতে দেখুন: (191708) ও (266939) নং প্রশ্নের উত্তর।
যদি আপনার বাবা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায় তাহলে আপনি এটি অন্য খাতে ব্যয় করার অধিকার রাখেন না, যদিও তিনি আপনাকে আমানত হিসেবে না দিয়ে থাকেন।
আর যদি তিনি আপনাকে শুধু নিছক দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন এবং অন্য কিছুতে ব্যয় করলেও তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন তাহলে এতে আপত্তি নেই।
তাই এই অর্থ ব্যয়ে আপনি সতর্ক থাকবেন। এমন কিছুতে ব্যয় করবেন না যা আপনার বাবা অপছন্দ করে বলে আপনি জানেন অথবা আপনি সন্দেহ থাকেন যে তিনি এতে সন্তুষ্ট হবেন; নাকি হবেন না?
যদি আপনি সন্দেহে থাকেন, তাহলে তিনি আপনাকে যে জন্য দিয়েছেন, সেটি মেনে চলা আপনার উপর আবশ্যক হবে। নতুবা আপনি তাকে জিজ্ঞেস করে তার অনুমতি নিয়ে নিবেন।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।