হায়েযের কারণে আমি রমযানের কয়েকদিন রোযা থাকতে পারিনি। এটা কয়েক বছর ঘটেছে। এ পর্যন্ত আমি সে রোযাগুলো পালন করিনি। এখন আমার কী করণীয়?
রমযানের কাযা রোযা পালনে এত বিলম্ব করা যে, পরবর্তী রমযান শুরু হয়ে যায়
প্রশ্ন: 26865
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
ইমামগণের সর্বসম্মতিক্রমে যে ব্যক্তি রমযানের কিছু রোযা ভেঙ্গেছে পরবর্তী রমযান আসার আগেই সে রোযাগুলোর কাযা পালন করা তার উপর ওয়াজিব।
এ অভিমতের সপক্ষে তারা দলিল দেন আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: "আমার উপর রমযানের যে রোযাগুলো কাযা থাকত সেগুলো শাবান মাসে ছাড়া কাযা পালন করতে পারতাম না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থানের কারণে।"
হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ):
শাবান মাসে কাযা রোযা শেষ করার তার যে আগ্রহ এর থেকে বুঝা যায় যে, পরবর্তী রমযান প্রবেশ করা পর্যন্ত কাযা রোযা পালনে দেরী করা জায়েয নয়।[সমাপ্ত]
যদি পরবর্তী রমযান শুরু হয়েই যায় তাহলে দুইটি অবস্থা:
প্রথম অবস্থা:
কোন ওজরের কারণে বিলম্ব করা। যেমন- যদি অসুস্থ থাকে এবং পরবর্তী রমযান চলে আসা পর্যন্ত অসুস্থতা অব্যাহত থাকে; সেক্ষেত্রে বিলম্বের কারণে তার গুনাহ হবে না। যেহেতু সে ওজরগ্রস্ত। তাকে শুধু কাযা পালন করতে হবে। সে যে দিনগুলোর রোযা ভেঙ্গেছে সে দিনগুলোর কাযা পালন করবে।
দ্বিতীয় অবস্থা:
কোন ওজর ছাড়া কাযা পালনে বিলম্ব করা। উদাহরণতঃ তার কাযা পালন করার সুযোগ ছিল; কিন্তু সে পালন করেনি। এর মধ্যে পরবর্তী রমযান এসে গেছে। এ ব্যক্তি ওজর ছাড়া কাযা পালনে বিলম্ব করার কারণে গুনাহগার হবে। সকল ইমাম একমত যে, তার উপর কাযা পালন করা ওয়াজিব। কিন্তু, কাযা পালনের সাথে প্রতিদিনের বদলে একজন করে তাকে মিসকীন খাওয়াতে হবে কিনা- এ বিষয়ে তারা মতভেদ করেছেন।
ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমাদের মতে, তার উপর খাওয়ানো ওয়াজিব। তারা কোন কোন সাহাবী থেকে যে অভিমত উদ্ধৃত হয়েছে; যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ)ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে সেটা দিয়ে দলিল দেন।
আর ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমত হচ্ছে- কাযা পালন করার সাথে খাবার খাওয়াতে হবে না।
তিনি দলিল দেন যে, যে ব্যক্তি রমযানের রোযা ভঙ্গ করেছে আল্লাহ্ তাকে শুধু কাযা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন; খাবার খাওয়ানোর কথা উল্লেখ করেননি। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
দেখুন: আল-মাজমু (৬/৩৬৬), আল-মুগনি (৪/৪০০)
ইমাম বুখারী দ্বিতীয় অভিমতটি পছন্দ করেছেন। তিনি তাঁর সহিহ কিতাবে বলেন: ইব্রাহিম নাখায়ি বলেছেন: যদি অবহেলা করে এবং পরবর্তী রমযান এসে যায় তাহলে সে দুই রোযাই রাখবে। তিনি খাবার খাওয়ানোকে তার উপর আবশ্যক মনে করতেন না। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে মুরসাল সনদে এবং ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে উদ্ধৃত করা হয় যে, তারা খাওয়ানোর অভিমত পোষণ করতেন। এরপর ইমাম বুখারী বলেন: আল্লাহ্ খাওয়ানোর কথা উল্লেখ করেননি। তিনি উল্লেখ করেছেন: "অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে"।[সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) 'খাওয়ানো ওয়াজিব নয়' এ অভিমতটি সাব্যস্ত করতে গিয়ে বলেন: যদি সাহাবীদের মতামত কুরআনের বাহ্যিক ভাবের বিপরীত হয় তাহলে সেটাকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করতে আপত্তি আছে। এ মাসয়ালাতে খাওয়ানোটাকে আবশ্যক করা কুরআনের বাহ্যিক ভাবের বিপরীত। কেননা আল্লাহ্ তাআলা শুধুমাত্র অন্য দিনগুলোতে কাযা পালন করা আবশ্যক করেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু আবশ্যক করেননি। অতএব, আমরা আল্লাহ্র বান্দাদের উপর এমন কিছু আবশ্যক করতে পারি না যা আল্লাহ্ তাদের উপর আবশ্যক করেননি; এমন কোন দলিল ছাড়া যে দলিলের মাধ্যমে ব্যক্তির দায় মুক্ত হতে পারে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে অভিমত বর্ণিত হয়েছে সেটা পালন করাকে মুস্তাহাব হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে; ওয়াজিব হিসেবে নয়।
অতএব, এ মাসয়ালায় সঠিক অভিমত হচ্ছে-আমরা তাকে রোযা রাখার চেয়ে বেশি কোন দায়িত্ব দিব না। তবে, বিলম্ব করার কারণে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে।[সমাপ্ত]
এই আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, এক্ষেত্রে ওয়াজিব হল: কাযা পালন করা। তবে, সতর্কতামূলক কেউ যদি প্রতিদিনের বদলে একজন করে মিসকীন খাওয়ায় তাহলে সেটা ভাল।
প্রশ্নকারী বোনের কর্তব্য হল: যদি তিনি কোন ওজর ছাড়া কাযা রোযা পালনে বিলম্ব করে থাকেন তাহলে তিনি আল্লাহ্র কাছে তওবা করবেন। ভবিষ্যতে এ ধরণের গুনাহ না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিবেন।
আমরা শুধু আল্লাহ্র কাছেই প্রার্থনা করতে পারি তিনি যেন আমাদেরকে তার প্রিয় ও সন্তুষ্টিমূলক আমল করার তাওফিক দেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব