কোন কোন বিষয়গুলো মুসলিম আর খ্রিষ্টানদের মাঝে পার্থক্য গড়ে দেয়?
খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলামের মাঝে পার্থক্যসমূহ
প্রশ্ন: 27093
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মাঝে পার্থক্য গড়ে দেওয়া বিষয়গুলোর পরিমাণ অনেক। আমাদের আর তাদের মাঝে আকীদা-বিশ্বাসে যে পার্থক্য সেটার কারণে তাদের সাথে দূরত্ব ঘুচানোর সুযোগ নেই। এ দূরত্ব ঘুচানো তখনই সম্ভব হবে যখন তারা যে কুফরী ও বিভ্রান্তির মাঝে রয়েছে সেটা পরিত্যাগ করবে, এক রব ও ইলাহের ইবাদতকারীদের কাফেলায় শামিল হবে, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে সাক্ষ্য দিবে এবং ঈসা আলাইহিস সালামকে মানুষ বলে বিশ্বাস করবে।
তাদের ধর্মের উল্লেখযোগ্য যে বিচ্যুতিগুলোর কারণে আমাদের মুসলিমদের সাথে তাদের পার্থক্য সূচিত হয় সেগুলো নিম্নরূপ:
১. খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস যে মাসীহ (ঈসা) হলেন আল্লাহর পুত্র।
২. খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস যে মাসীহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর সাথে আরেকজন ইলাহ (উপাস্য)। বরং তিনি তাদের পবিত্র ত্রিত্বের দ্বিতীয় সত্তা।
৩. এই বিশ্বাস যে ইলাহ মানুষের দেহধারণ করেছেন।
৪. এই বিশ্বাস যে আল্লাহ তিনটা সত্তার সমন্বয়ে গঠিত। উক্ত বিশ্বাসের নাম ‘ত্রিত্ববাদ’।
৫. খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস যে পন্তীয় পীলাতের নির্দেশে মাসীহ আলাইহিস সালামকে ইহুদীরা ক্রুশবিদ্ধ করে। আর তিনি ক্রুশের উপর মারা যান।
৬. খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস যে মাসীহ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়ে সৃষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এবং মানবজাতিকে জন্মগত পাপ থেকে মুক্ত করেছেন।
৭. ইহুদীদের ব্যাপারে খ্রিষ্টানদের অবস্থান। যে ইহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তারা দাবি করে তারা তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছে, তার মা মরিয়মকেও তারা ব্যভিচারের দায়ে অভিযুক্ত করে; অথচ তিনি এমন পাপ থেকে মুক্ত; তদুপরি বর্তমানে তাদের সাথে খ্রিষ্টানদের মিত্রতার অবস্থান। অন্যদিকে যে মুসলিমরা ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার মাকে সম্মান করে তাদের প্রতি খ্রিষ্টানদের শত্রুতা ও বৈরিতাপূর্ণ অবস্থান।
৮. আল্লাহর কিতাব ইঞ্জিলের বিকৃতি। হোক সেটা শব্দে পরিবর্তন বা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিকৃতি কিংবা অর্থে বিকৃতি। এ বিবৃতির মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর ধর্মের সাথে অনেক মন্দ ও নিকৃষ্ট বিষয় সম্বন্ধযুক্ত করা হয়।
৯. পাপমোচনের বিশ্বাস। খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে আল্লাহ তার একমাত্র পুত্রকে পাঠিয়েছেন যেন তিনি মানুষদেরকে ঐ পাপ থেকে মুক্ত করতে পারেন, যে পাপে মানুষদের পিতা (আদম) আলাইহিস সালাম জড়িয়েছিলেন। তখন আল্লাহ তার পাপ ক্ষমা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। তাই তিনি একমাত্র নিষ্পাপ পুত্রকে পাঠান যেন সে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে উক্ত পাপ থেকে সবাইকে মুক্ত করেন।
এই কথার মাধ্যমে সৃষ্টিকূলের রবকে অসম্মান করা হয় এবং কয়েকটি সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়; যেমন- আদম আলাইহিস সালাম কর্তৃক তাওবা করা এবং আল্লাহ কর্তৃক মাসীহ আলাইহিস সালামকে নিহত হওয়া থেকে রক্ষা করা।
১০. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তকে অস্বীকার করা। অথচ পুরাতন নিয়ম (ওল্ড টেস্টামেন্ট) ও নতুন নিয়ম (নিউ টেস্টামেন্ট)-এ তাঁর কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
১১. বর্তমানে তাদের হাতে বিদ্যমান বিকৃত তাওরাতের শুদ্ধতার প্রতি বিশ্বাস রাখা। অথচ সেটাতে আল্লাহকে গালি দেয়া হয়েছে, তাঁকে দুর্বলতার গুণে গুণান্বিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং নবী-রাসূলদের এমনভাবে নিন্দা করা হয়েছে যেটা কোনো মানুষের জন্য উচ্চারণ করাও মারাত্মক বা গুরুতর ব্যাপার। তবু আমরা উল্লেখ করছি যাতে জানা যায় তারা কেমন নোংরা কুফরীর মাঝে আছে।
তারা বলে আল্লাহ নূহের সম্প্রদায়কে তুফানে ডুবিয়ে সেটার জন্য অনুশোচনা করে এত কাঁদেন যে তার চোখ উঠে যায় এবং ফেরেশতারা তাঁকে রোগী হিসেবে দেখতে যায়। আল্লাহ এমন কিছু থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
তারা বলে লূত আলাইহিস সালাম তার দু্ই মেয়ের সাথে ব্যভিচার করেছেন। নূহ আলাইহিস সালাম মদ পান করে মাতাল হয়ে যান এবং তার লজ্জাস্থান উন্মোচিত হয়ে পড়ে। নবীদের প্রসঙ্গে এর চেয়ে অনেক বেশি লজ্জাস্কর বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
দেখুন: ইবনুল কাইয়িমের ‘হিদায়াতুল হায়ারা ফি আউবাতিল ইয়াহুদি ওয়ান-নাসারা’ এবং ড. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আস-সুহাইমের ‘নাকদুন নাসরানিয়্যাহ’।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব