ডাউনলোড করুন
0 / 0

গর্ভাবস্থায় তালাকপ্রাপ্ত নারীর ইদ্দত

প্রশ্ন: 27662

জনৈক পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে স্ত্রীকে বলল: ‘তোকে তালাক’। তখন স্ত্রী তাকে গালি দিল। গালি খেয়ে স্বামী তার পেটে লাথি মারল ও ধাক্কা দিল। এতে করে স্ত্রী সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল এবং পাঁচ মাসের সন্তান প্রসব করে দিল। পরবর্তীতে স্বামী অনুতপ্ত হল এবং শশুর বাড়ীতে গিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চাইল। ঐ মহিলার বাবা আমার সাথে পরামর্শ করলে আমি তাকে বললাম: আমি আপনার জিজ্ঞাসার ব্যাপারে কোন একজন আলেমকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করব। কেননা হতে পারে গর্ভস্থিত সন্তান প্রসব হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তার ইদ্দত শেষ হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে হুকুম কি হবে?

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

আলহামদুলিল্লাহ।

আলেমগণের ইজমা (সর্বসম্মত অভিমত) হচ্ছে- গর্ভবতী তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দত হচ্ছে­- সন্তান প্রসব। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন: “আর গর্ভবতীদের ইদ্দত হল তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।”[সূরা তালাক, আয়াত: ৪]

আলেমগণ এ মর্মেও ইজমা করেছেন যে, যদি কোন নারী এমন কিছু প্রসব করে যার আকৃতি মানুষের আকৃতি বুঝা যায় এর দ্বারাও সে নারীর ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে।[আল-মুগনি (১১/২২৯)] গর্ভস্থিত ভ্রূণের আকৃতি গঠন শুরু হয় ৮০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রূণের বয়স ৯০ দিন পূর্ণ হলে।

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে যে নারী তার পাঁচ মাসের ভ্রূণ প্রসব করেছেন সকল আলেমের মতানুযায়ী তার ইদ্দত শেষ। সুতরাং ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার স্বামী তাকে আর ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার রাখেন না।

কিন্তু, স্বামী যদি চান তাহলে নতুন একটি আকদ (বিয়ের চুক্তি) করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মহিলার সম্মতি, অভিভাবকের উপস্থিতি, দুইজন সাক্ষী ও মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে।

আর অপরিপক্ক ভ্রূণ নষ্ট করার কারণ হওয়ার প্রেক্ষিতে এই পুরুষের উপর দুইটি বিষয় আবশ্যক হবে:

এক: ভুলক্রমে হত্যার কাফ্‌ফারা আবশ্যক। আর তা হল- একজন মুমিন দাস আযাদ করা। যদি দাস না পাওয়া যায় তাহলে লাগাতর দুইমাস রোযা রাখা। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “কেউ যদি কোন ঈমানদার লোককে ভুলক্রমে হত্যা করে তাহলে তাকে একজন ঈমানদার দাস মুক্ত করতে হবে এবং নিহতের পরিবারকে রক্তমূল্য পরিশোধ করতে হবে, তবে তারা মাফ করে দিলে ভিন্ন কথা”। এরপর তিনি বলেন: “যে তা পাবে না তাকে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে পাপমুক্তি কামনায় অবিরাম দুই মাস রোযা রাখতে হবে। আল্লাহ্‌ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৯২]

দুই: ভ্রূণের রক্তমূল্য (মায়ের রক্তমূল্যের ১০ ভাগের একভাগ। মুসলিম নারীর রক্তমূল্য হচ্ছে ৫০টি উট। বর্তমানে সৌদি রিয়ালে এর মূল ধরা হয় ৬০ হাজার রিয়াল) পরিশোধ করতে হবে। তাই পিতার উপর আবশ্যক হল ৬ হাজার রিয়াল কিংবা এর সমপরিমাণ অন্য মুদ্রা এই ভ্রূণের ওয়ারিসগণকে পরিশোধ করা। ওয়ারিশগণের মাঝে এই অর্থ এমনভাবে বণ্টন করা হবে যেন এই ভ্রূণ তাদেরকে রেখে মারা গেছে। পিতা এই অর্থ থেকে কোন কিছু পাবে না। কেননা কোন হত্যাকারী নিহতের সম্পত্তির ওয়ারিশ হয় না। ইবনে কুদামা বলেন: “যদি ভ্রূণ হত্যাকারী অপরাধীটি পিতা হয় কিংবা ভ্রূণের ওয়ারিশদের মধ্য থেকে অন্য কেউ হয় তাহলে হত্যাকারীর উপর গুর্‌রাহ (একটি দাস কিংবা দাসী আযাদ করা। যার মূল্য হচ্ছে- পাঁচটি উট। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৬ হাজার সৌদি রিয়াল) আবশ্যক হবে। সে ব্যক্তি এই ভ্রূণ থেকে কোন কিছু উত্তরাধিকার হিসেবে পাবে না। এবং একটি গোলাম আযাদ করবে। এটি যুহরি, শাফেয়ি ও অন্যান্য আলেমগণের অভিমত। সমাপ্ত।[আল-মুগনি (১২/৮১)]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ। আমাদের নবী মুহাম্মদ-এর উপর আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

সূত্র

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android