আমি আজ রমযানের কাযা রোযা পালনরত ছিলাম। আমাকে ইমাম সাদেকের দাওয়াত দেয়ায় আমি রোযা ভেঙ্গে ফেলেছি। এমতাবস্থায়, আমি কি সেই দিনের সওয়াব পাব?
যে নারী রমযানের কাযা রোযা পালন করছিলেন তার বোন তাকে খাওয়ার দাওয়াত দিলে তিনি রোযা ভেঙ্গে ফেলেন
প্রশ্ন: 290821
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে রমযানের কাযা রোযা রেখে সেটা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নেই; তবে রোযা ভঙ্গ করার বৈধতা দেয় এমন কোন ওজর থাকলে যেমন- অসুস্থতা; তাহলে ভিন্ন কথা।
ইবনে কুদামা (রহঃ) "আল-মুগনি" গ্রন্থে (৩/১৬০) বলেন: "যে ব্যক্তি কোন ওয়াজিব আমল শুরু করেছেন যেমন– রমযানের কাযা রোযা পালন, নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট মানত রোযা পালন কিংবা কাফ্ফারার রোযা পালন; তার জন্য এ রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়।… আলহামদু লিল্লাহ্; এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই।"[সমাপ্ত]
এটা কোন ওজর নয় যে, কাউকে তার ভাই খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। এটি নফল রোযা ভাঙ্গার বৈধতা দেয় (অচিরেই সে আলোচনা আসবে); রমযানের রোযা, রমযানের কাযা রোযা কিংবা মানতের রোযার মত ফরয রোযা ভাঙ্গার বৈধতা নয়। ।
পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে: আপনার উপর রোযা ভাঙ্গার এ গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব; ফরয রোযা ভাঙ্গার কারণে সওয়াব পাওয়ার অপেক্ষা নয়। সর্বোচ্চ এইটুকু বলা যেতে পারে যে, না-জানার কারণে তার কৈফিয়ত গ্রাহ্য হবে।
দুই:
যে ব্যক্তি নফল রোযা রেখেছেন তাকে যদি নিমন্ত্রণ করা হয় তাহলে তিনি ইচ্ছাধীন; রোযা ভাঙ্গতেও পারেন কিংবা রোযা অব্যাহত রেখে নিমন্ত্রণকারীর জন্য দোয়াও করতে পারেন। কেননা নফল রোযা পালনকারী নিজেই নিজের কর্তা। দলিল হচ্ছে– উম্মে হানি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "একদিন রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ঘরে প্রবেশ করে পানি চাইলেন। তিনি নিজে পানি পান করলেন এবং তাকেও পানি দিলেন। তখন তিনিও পানি পান করেন। এরপর বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি তো রোযাদার ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: নফল রোযাদার নিজেই নিজের কর্তা। ইচ্ছা করলে রোযা সমাপ্ত করতে পারেন; আবার ইচ্ছা করলে রোযা ভেঙ্গে ফেলতে পারেন।"[আলবানী 'সহিহুল জামে' গ্রন্থে (৩৮৫৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: "একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে এসে বললেন: তোমাদের কাছে কোন কিছু আছে? আমরা বললাম: না। তখন তিনি বললেন: তাহলে আমি রোযাদার। এরপর অন্য একদিন আসলেন। আমরা বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদের কাছে 'হাইস' (খেজুরের সাথে ঘি ও পনিরের মিশ্রনে তৈরী খাবার) হাদিয়া পাঠানো হয়েছে। তখন তিনি বললেন: আমাকে দেখাও তো; আমি তো রোযা অবস্থায় দিন শুরু করেছি। অতঃপর তিনি খেয়েছেন।"[সহিহ মুসলিম (১১৫৪)]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যখন তোমাদের কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয় তখন নিমন্ত্রণে হাযির হও। যদি কেউ রোযাদার হয় তাহলে সে নিমন্ত্রণকারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর যদি রোযাদার না হয় তাহলে খাবার গ্রহণ করবে।"[সহিহ মুসলিম (১৪৩১)]
বিদাতপন্থীদের সাথে উঠাবসা করা ও তাদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা সম্পর্কে 102885 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।
তিন:
আর আপনি জাফর সাদেক (রহঃ) সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছেন সেটার সত্যতা জানা যায় না। কোন অবস্থাতেই এমন ধারণা করা উচিত হবে না যে, তিনি ফরয রোযাকে উদ্দেশ্য করেছেন। এক্ষেত্রে রাফেযিদের (শিয়াদের) গ্রন্থাবলি ধর্তব্য নয় এবং তারা আহলে বাইত সম্পর্কে যেসব কাহিনী বর্ণনা করে সেগুলোও ধর্তব্য নয়। কারণ রাফেযিরা (শিয়াদের) হাদিস (রাসূলের বাণী, কর্ম, অনুমোদন) ও আছার (সাহাবী ও অন্যদের বাণী, কর্ম ও অনুমোদন) সম্পর্কে সবচেয়ে বিশ অজ্ঞ। তারা জাফর সাদেক সম্পর্কে যা কিছু বর্ণনা করে তার অধিকাংশই তাঁর নামে মিথ্যাচার। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে আহলে সুন্নাহদের সাথে রাফেযিদের মতভেদ অনেক বিশাল।
আরও জানতে দেখুন: 113676 নং, 21500 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব