কোন মেয়ের উপর তার ভাইয়ের আনুগত্য করা কি ওয়াজিব; বিশেষতঃ সে যদি ছোট ভাই হয়?
প্রশ্ন: 300472
আমার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট ভাই যখন আমাকে চা বা কফি বানাতে বলে তার কথা শুনা কি ওয়াজিব? অথচ সে আমার কথা শুনে না; যখন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি কিংবা অন্য কোন স্থানে নিয়ে যেতে বলি। আমার মা বলেন: তাকে সম্মান করা আবশ্যক; যেহেতু সে পুরুষ আর আমি মহিলা। বরঞ্চ বিপরীতটি কি সঠিক নয়? যেহেতু আমি তার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়।
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
ভাইদের ও বোনদের মাঝের সম্পর্ক স্নেহ-প্রীতি, ছোটরা বড়দেরকে সম্মান করা, বড়রা ছোটদেরকে স্নেহ করার উপর প্রতিষ্ঠিত। যেমনটি ইমাম তিরমিযি (১৯১৯) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”[আলবানী হাদিসটিকে ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে সহিহ বলেছেন]
মুনাওয়ি বলেন:
“বড়কে তার প্রাপ্য অধিকার সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে।”[ফায়যুল কাদির (৫/৩৮৮) থেকে সমাপ্ত]
পক্ষান্তরে, নারীর উপর আনুগত্য করা ওয়াজিব হল: পিতামাতার ও স্বামীর— শরিয়তে সুবিদিত নীতিমালা ও শর্তসমূহ সাপেক্ষে।
আরও জানতে দেখুন: 43123 নং ও 269847 নং প্রশ্নোত্তর।
পক্ষান্তরে, ভাই বড় হোক কিংবা ছোট হোক বোনের উপর তার আনুগত্য পাওয়ার কোন অধিকার নেই; যতক্ষণ সে বোন পিতার কর্তৃত্বাধীনে রয়েছে এবং সে ভাই তার আইনানুগ অভিভাবক না হয়।
কেবলমাত্র বিয়ের অভিভাবকত্ব ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে ভাইয়ের চেয়ে অগ্রাধিকার প্রাপ্য অভিভাবক না থাকলে সে ক্ষেত্রে বোনের উপর তার কর্তৃত্বের অধিকার রয়েছে। প্রশ্নে যে দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এটি সেটার সাথে সম্পৃক্ত। সে দায়িত্বের দাবী হচ্ছে ভাই বোনের প্রতি যত্মশীল হবে, বোনের আবশ্যকীয় খরচ বহন করবে যদি বোনের খরচ করার মত সম্পদ না থাকে, বোনের জরুরী চিকিৎসার খরচ বহন করবে যদি সেটা তার সাধ্যে থাকে, বোনকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে কিংবা অন্য যে স্থানে তার যাওয়ার প্রয়োজন হলে তাকে সেখানে নিয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের সকলে দায়িত্বশীল। সকলকে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে”।[সহিহ বুখারী (৮৯৩) ও সহিহ মুসলিম (১৮২৯)]
খুব সম্ভব নারীর একজন দায়িত্বশীল পুরুষের তীব্র প্রয়োজন ও তার নিজের কাজ নিজে আঞ্জাম দেয়ার দুর্বলতা বিবেচনা করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের ব্যাপারে সবিশেষ ওসিয়ত করে গেছেন: “তোমরা নারীদের ব্যাপারে আমার ভাল ওসিয়ত গ্রহণ কর।”[সহিহ বুখারী (৩৩৩১) ও সহিহ মুসলিম (১৪৬৭); হাদিসটির ভাষ্য মুসলিমের এবং এ অর্থবোধক অনেক মশহুর হাদিস রয়েছে]
পক্ষান্তরে, জীবন ধারণের নানা বিষয়ে আপনার ভাইয়ের আনুগত্য করা এটি সু-আচরণ ও আত্মীয়ের বন্ধন রক্ষার অন্তর্ভুক্ত; আল্লাহ্ আমাদেরকে যা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি সম্ভবপর নয় যে, সম্ভ্রান্ত পরিবার ও ঘরগুলোর সম্পর্কগুলো কেবল আবশ্যকীয় দায়িত্ব, অধিকার, আইন, বিচার- এ সবের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। কক্ষনো নয়; এ সবের ওপর ভিত্তি করে পারিবারিক জীবন সুন্দরভাবে চলতে পারে না। বরঞ্চ হৃদ্যতা, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, উত্তম আচরণ, সু-ব্যবহার ইত্যাদি পরিবারে বিরাজ করা বাঞ্চনীয়। কোন মানুষ এ ক্ষেত্রে যত বেশি সম্পর্করক্ষাকারী হবে সে আল্লাহ্র কাছে ততবেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হবে।
আরও বেশি দেখুন: 12292 নং ও 72834 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ