আমি মাসিক বেতনের ভিত্তিতে এক কোম্পানিতে প্রোগ্রামার হিসেবে চাকুরী করতাম। চার বছর সার্ভিস করার পর আমি চাকুরী ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি তাদের কাছ থেকে আমার পাওনা পরিপূর্ণভাবে পাইনি; যদিও তারা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এরপর তারা আমাকে বলল যে, তাদের জন্য আগে যে সিস্টেম ডেভেলপ করেছিলাম সে সিস্টেমে কিছু প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত কাজ করে দিতে। এর জন্য তারা আমাকে অতিরিক্ত পেমেন্ট করবে এবং সাথে পূর্বের পাওনাগুলো দিয়ে দিবে। স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদিত এই সামগ্রী ও প্রোগ্রামগুলোর মালিকানা তাদেরই হবে। তাদের কাছ থেকে আমার পাওনাগুলো উদ্ধার করার পদক্ষেপ হিসেবে আমি রাজি হয়ে গেলাম। দশমাস পর আমি কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করলাম। এরপর থেকে তারা আর আমার কল রিসিভ করে না। পরে আমি জেনেছি যে, আমি যে সিস্টেমটি ডেভেলপ করেছি সেটা তারা বিক্রি করে দিয়েছে এবং কয়েকজন কাস্টমার ও কিছু সরকারী প্রতিষ্ঠানে সেটা সেটআপ দিয়েছে। এভাবে তারা বিক্রি করে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল: যেহেতু তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ করেনি সেক্ষেত্রে এ প্রোগ্রামগুলো কি আমার মালিকানাধীন হিসেবে ধর্তব্য হবে; যাতে করে আমি সেটা বিক্রি করে হালালভাবে লাভ পেতে পারি। এ প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে আমি চাকুরীকালীন সময়ে যা কিছু ডেভেলপ করেছি সেগুলোও আছে।
জনৈক ব্যক্তি এক কোম্পানিতে প্রোগ্রামার হিসেবে চাকুরী করেছেন; কিন্তু কোম্পানি তার পাওনা দেয়নি; এমতাবস্থায় তিনি কি কোম্পানির কিছু প্রোগ্রাম বিক্রি করে নিজের অর্থ আদায় করতে পারে?
প্রশ্ন: 308705
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
যদি কেউ কোন কোম্পানিতে প্রোগ্রামার হিসেবে চাকুরী করে সে ক্ষেত্রে প্রোগ্রামগুলোর মালিকানা কোম্পানীর হবে। তিনি তার অনার্থিক অধিকার সাব্যস্ত করার দাবী করতে পারেন; সেটা প্রোগ্রামে তার নাম উল্লেখ করার মাধ্যমে।
যদি কোম্পানি আপনাকে আপনার পাওনাগুলো পরিশোধ না করে এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আপনি প্রোগ্রামগুলো উন্নয়ন করে থাকেন; কিন্তু সে পাওনাও কোম্পানি আপনাকে না দেয়— তাহলে আপনার সমস্ত পাওনা কোম্পানীর উপর ঋণ হিসেবে গণ্য হবে। আপনি আইনানুগ পন্থায় আপনার পাওনাগুলো পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন; যেমন মামলা করার মাধ্যমে।
তবে প্রোগ্রামগুলোর মালিকানা কোম্পানিরই থাকবে। আপনার পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করার কারণে সেগুলোর মালিকানা কোম্পানি থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আপনার কাছে চলে আসবে না। কিন্তু আপনি আইনানুগ পন্থা অবলম্বন করার পরও যদি আপনার অধিকার না পান সেক্ষেত্রে আপনার জন্য এই পরিমাণ প্রোগ্রাম বিক্রি করা জায়েয হবে যতটুকু বিক্রি করলে আপনার পাওনা উঠে আসবে; এর চেয়ে বেশি নয়। এটি আলেমদের নিকট مسألة الظفر হিসেবে পরিচিত। তবে আপনি নিজেকে চুরির অপবাদ থেকে রক্ষা করতে পারার শর্ত প্রযোজ্য হবে।
ইবনুল মুলাক্কিন (রহঃ) বলেন: "যে ব্যক্তির অপর কারো কাছে কোন পাওনা থাকে; কিন্তু আদায় করতে সক্ষম না হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির সম্পদ থেকে তার অনুমতি ব্যতিরেকে তার পাওনার সমপরিমাণ সম্পদ গ্রহণ করা জায়েয হবে। এটি ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীদের মাযহাব। এটাকে বলা হয়: مسألة الظفر।
ইমাম আবু হানিফা ও মালেক নাজায়েয বলেছেন; যেমনটি তাদের থেকে ইমাম নববী 'শারহে মুসলিম' গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন।
কুরতুবী বলেন: "এটাই হচ্ছে ইমাম মালেকের প্রসিদ্ধ মাযহাব।"।
অপর এক আলেম ইমাম আবু হানিফা থেকে বর্ণনা করেন যে: তার পাওনা যে জাতীয় সে জাতীয় জিনিস নিতে পারবে; অন্য জাতীয় জিনিস নয়। তবে সে দিনারের পরিবর্তে দিরহাম নিতে পারবে; কিন্তু উল্টোটা নিতে পারবে না।
ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত: সে ব্যক্তি সজাতীয় জিনিস বা অপর জাতীয় জিনিস কোনটাই নিতে পারবে না।
ইমাম মালেক থেকে বর্ণিত: যদি ঋণগ্রস্তের উপর অন্য কোন ঋণ না থাকে (অর্থাৎ অন্য কোন ব্যক্তির পাওনা না থাকে) তাহলে নিতে পারবে। আর যদি অন্যেরও ঋণ থাকে তাহলে তার পাওনার অনুপাত যতটুকু ততটুকু নিতে পারবে; এর বেশি নয়।
আল-মাযেরি ইমাম মালেক থেকে তিনটি অভিমত বর্ণনা করেন:
তৃতীয় অভিমত হল: যে ব্যক্তি তার পাওনার সজাতীয় জিনিস হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছে তার জন্য জায়েয; সজাতীয় না হলে নয়।[আল-ইলাম বি ফাওয়ায়েদে উমদাতিল আহকাম (১০/১৭)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব