এক:
প্রশ্ন থেকে পরিস্কার যে, এ অনুষ্ঠানে দুইটি গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়। একটি হচ্ছে—কাফের হিন্দুদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ। কোন মুসলমানের জন্য কাফেরদের সাথে তাদের খাস খাস বিষয়ে সাদৃশ্যতা গ্রহণ করা বৈধ নয়; যেমন—পোশাক-পরিচ্ছেদ, আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা নিষিদ্ধ করার গূঢ় রহস্য হল—যাতে করে এটি সাদৃশ্য-গ্রহণকারীর অভ্যন্তরে কোন রূপ প্রভাব তৈরী করতে না পারে। কেননা যে ব্যক্তি বর্হিজগৎ-এ কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে এটা তার অভ্যন্তরীণ-জগতকে প্রভাবিত করে। এক পর্যায়ে সে নিজেকে ঐ সম্প্রদায়ভূক্ত মনে করতে শুরু করে। তাছাড়া যাতে করে, কে মুসলিম আর কে কাফের সেটা পার্থক্য করা যায়; যেন কোন মুসলিমের মর্যাদাহানি করা না হয় এবং কোন কাফেরকে মর্যাদা দেয়া না হয়।
এ ধরণের প্রসঙ্গে শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “যারা কোমরে যুন্নার (এটি অমুসলিমদের জন্য খাস বিশেষ বেল্ট) পরেন তাদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু বলেছেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত”। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: এ হাদিসের সর্বনিম্ন অবস্থা হচ্ছে—এটি হারাম হওয়া; যদিও বাহ্যতঃ হাদিসটির দাবী হচ্ছে—তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণকারী কাফের হওয়া।
সুতরাং, শুধু মাকরুহের মধ্যে সীমিত রাখা সঙ্গত নয়। কেননা আমরা বলি: হারাম হওয়ার কারণ হল—খ্রিস্টানদের যুন্নার (বেল্ট) এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া। এর দাবী হচ্ছে—এটি হারাম হওয়া; যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভূক্ত”। এর অর্থ এ নয় যে, সে কাফের। কেননা সে পোশাক-বেশভূষাতে তাদের দলভূক্ত। এ কারণে আপনি বেশভূষায় খ্রিস্টানের সাথে সাদৃশ্যগ্রহণকারী ব্যক্তি ও খ্রিস্টানের মাঝে পার্থক্য করতে পারবেন না। বাহ্যতঃ সে খ্রিস্টানদের-ই দলভূক্ত।
আলেমগণ আরও একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন তারা বলেছেন: বাহ্যিক ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও সাদৃশ্যতা গ্রহণকে টেনে আনে। এভাবে সে ব্যক্তি দ্বীনহারা হয়…।
সঠিক অভিমত হচ্ছে—এটি পরা হারাম।”
[আল-শারহুল মুমতি (২/১৯২-১৯৩)]
কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণের বিস্তারিত হুকুম ও নীতিমালা 21694 নং প্রশ্নোত্তরে পাবেন।
দুই:
প্রশ্নে উল্লেখিত অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় গুনাহর কাজটি হচ্ছে—সাজগোজ করা কনের সাথে পুরুষেরা দেখা করা এবং সে অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের মিশ্রণ; উভয়টি হারাম।
উকবা বিন আমের (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা নারীদের কাছে প্রবেশ করা থেকে বেঁচে থাকবে। এক আনসারী ব্যক্তি বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! الحمو (দেবর ও অন্যান্য)এর ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেন: الحمو হচ্ছে—মৃত্যু ।”[সহিহ বুখারী (৪৯৩৪) ও সহিহ মুসলিম(২১৭৩)]
ইমাম নববী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “الحمو (দেবর) হচ্ছে—মৃত্যু” এর অর্থ অন্যের তুলনায় তার কাছ থেকে ভয় বেশি। তার কাছ থেকে ক্ষতি হতে পারে। তার মাধ্যমে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা অধিক। যেহেতু কোন বাধা ছাড়া নারীর কাছে পৌঁছা ও নির্জনে অবস্থান করা তার পক্ষে সম্ভব; অন্য বাইরের লোকের পক্ষে যা সম্ভবপর নয়। হাদিসে “الحمو (আল-হামু)” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে—স্বামীর পিতাগণ ও সন্তানগণ ব্যতীত অন্য আত্মীয়-স্বজন। যেহেতু স্বামীর পিতাগণ ও সন্তানগণ স্ত্রীর মাহরাম; তাদের সাথে নির্জন অবস্থান করা জায়েয। তাদেরকে মৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয় না। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে—স্বামীর ভাই, ভাই এর ছেলে, স্বামীর চাচা, চাচার ছেলে প্রমুখ যারা মাহরাম নন এবং স্বভাবত মানুষ এসব ক্ষেত্রে শিথিলতা করে এবং ভাবীর সাথে নির্জনে অবস্থান করে। এটাই হচ্ছে—মৃত্যু। বাইরের একজন লোকের চেয়ে তার সাথে দেখা-সাক্ষাত নিষিদ্ধ হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত; যে দলিলগুলো আমরা উল্লেখ করেছি সে কারণে। আমি যা উল্লেখ করেছি এটাই হাদিসের সঠিক অর্থ।[শারহু মুসলিম (১৪/১৫৩)]
আপনি নারী-পুরুষের অবাধ মিশ্রণের ব্যাপারে 1200 নং প্রশ্নোত্তরে আরো বিস্তারিত জানতে পারেবন।
আমরা আল্লাহ্ তাআলার কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আপনার পরিবারকে এবং সকল মুসলমানকে গুনাহর কাজ পরিত্যাগ করার ও গুনাহকে অপছন্দ করার তাওফিক দেন এবং যাতে রয়েছে কল্যাণ, সুষ্ঠুসিদ্ধান্ত সেটা গ্রহণ করার হেদায়েত দেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।