ডাউনলোড করুন
0 / 0

তার বোন তাকে কষ্ট দেয় এমতাবস্থায় সে কী আচরণ করবে?

প্রশ্ন: 324944

আমার চেয়ে ৫ বছরের বড় আমার বোন আছে। সে আমার কোন প্রকার ভাল চায় না। সে বিবাহিতা। কিন্তু আমার কোন বিয়ে আসাকে সে অপছন্দ করে। তার চাকুরী আছে। আমি কোন চাকুরীর জন্য আবেদন করলে সে রেগে যায় এবং কথা দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। যদি আমাদেরকে কোন কারণে খুশি দেখে বা সন্তুষ্ট দেখে সে কথা দিয়ে, বদদোয়া করে আমাদেরকে কষ্ট দেয়। কান্নাকাটি শুরু করে। আর তুচ্ছ কোন কারণেও যদি তার মন খারাপ হয় সে আমাদের উপর বদদোয়া করে এবং আমাদেরকে কষ্ট দেয়। বিশেষতঃ আমাকে। কেননা আমি তার সাথে থাকি। সমস্যা হল সে বুদ্ধিমতী এবং বাসার বাইরে সে সবার প্রিয় ও খুবই সামাজিক। আমি সম্পূর্ণ বিপরীত। সে শুধু আমরা বোনদেরকে কষ্ট দেয়। উল্লেখ্য, সে নিজেই এ কথা বলে। যদি আমরা তার কথার প্রত্যুত্তর করি সে বলে: তোমরা ভাল কিছু পাওয়ার উপযুক্ত নও। আমি তোমাদের মত নই। কেউ যদি তাকে দেখে, বিশ্বাস করবে না যে, সে এসব করে। কারণ বাসার বাইরে সে ভদ্র ও মার্জিত এবং তার খুবই ভাল চাকুরী আছে। আমি তার সাথে ভাল ব্যবহার করার অনেক চেষ্টা করেছি; কিন্তু সে মনে করে এটি তার অধিকার; আমার কোন অধিকার নেই। আমার প্রশ্ন হল: আমি তাকে প্রত্যুত্তর না দিয়ে কিভাবে নিজেকে সংবরণ করে রাখতে পারব? বিশেষতঃ সে অন্যদের সামনে কথা বলে এবং নিরবে আমাকে কষ্ট দেয়। আমাদের যে সব আত্মীয়-স্বজন আমাদের সাথে থাকে না তারা তার কথায় বিশ্বাস করে। তার থেকে কষ্ট পেয়ে আমি কিভাবে ধৈর্য ধরতে পারব? ছোট বোনের উপর বড় বোনের অধিকারগুলো কি কি? কেননা সে প্রায় সময় বলে যে, সে বয়সে বড়?

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

এক:

যদি এটাই ঘটে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে এটি সীমালঙ্ঘন। এ ধরণের সীমালঙ্ঘনকারী দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার আশংকা আছে।

সম্মানিত বোন! আপনার ক্ষেত্রে এবং আপনার মত যার অবস্থা তার ক্ষেত্রে যেটা ভাল তা হল: আপনার বোনের দেয়া কষ্ট সহ্য করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। ধৈর্য রাখা। দুর্ব্যবহারের বদলে অনুরূপ দুর্ব্যবহার না করা; যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সেটা না করে পারেন।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: এক বৃদ্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্যে আসল। কিন্তু লোকেরা তাকে জায়গা দিতে গড়মসি করল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের মধ্যে যে ছোট তাকে স্নেহ করে না এবং আমাদের মধ্যে যে বড় তাকে সম্মান করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়[সুনানে তিরমিযি (১৯১৯), আলবানী কিছু সমার্থক হাদিসের ভিত্তিতে ‘আস্‌সিলসিলা আস্‌সাহিহা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

আপনি আপনাদের মাঝে যে রক্তের সম্পর্ক আছে সেটাকে রক্ষা করলেন। তার সাথে সম্পর্ক রাখলেন, ভাল ব্যবহার করলেন। কেননা শরিয়তে এটাই হচ্ছে প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। কেননা পরিপূর্ণ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা হল কোন ব্যক্তির দুর্ব্যবহারের বদলে তার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আব্দুল্লাহ্‌বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: বিনিময়দাতা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী নয় বরং ব্যক্তি হল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে সম্পর্ক রক্ষা করে" [সহিহ বুখারী (৫৯৯১)]

ইবনুর জাওযি (রহঃ) বলেন:

“জেনে রাখুন, বিনিময়দাতা হচ্ছে কোন কিছুর বিপরীতে অনুরূপ কিছু করা। আর আল্লাহ্‌র জন্য সম্পর্ক রক্ষাকারী: তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে ও আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালনার্থে সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। পক্ষান্তরে, অন্যে সম্পর্ক রাখলে সম্পর্ক রাখা এমন হলে সেটি ঋণ পরিশোধের মত। এ কারণে তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: উত্তম সদকা হচ্ছে শত্রুতাপোষণকারী আত্মীয়কে দেয়া কেননা প্রিয়ভাজন আত্মীয়কে দেয়ার মধ্যে নফসের অংশ মিশে থাকতে পারে। কিন্তু শত্রুতাপোষণকারীকে দিলে এমন কিছু তাতে থাকে না।”[কাশফুল মুশকিল (৪/১২০-১২১)]

তাই আপনি তার সাথে সদ্ব্যবহার করাটা তার জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি এবং এটি তার সীমালঙ্ঘনের উপর আল্লাহ্‌র সাহায্য পাওয়ার উপযুক্ত মাধ্যম।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "এক ব্যক্তি বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমার কিছু আত্মীয় আছে আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলি; কিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি; তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে আমি তাদের সাথে সহিষ্ণু আচরণ করি; তারা আমার সাথে মূর্খের মত আচরণ করে তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি যেমনটি উল্লেখ করেছ যদি তুমি তেমন হও তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই ছুড়ে দিচ্ছ তুমি যতক্ষণ এর উপর অটল থাকবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে তোমার সাথে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী থাকবে"[সহিহ মুসলিম (২৫৫৮)]

ইমাম নববী বলেন:

“হাদিসে المل শব্দের অর্থ: গরম ছাই। এর মর্মার্থ হল: আপনি যেন তাদেরকে গরম ছাই খাওয়াচ্ছেন। গরম ছাই ভক্ষণকারীর যে কষ্ট হয় সে কষ্টের সাথে যে কষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করে সেটাকে তুলনা দেয়া হয়েছে। এই সদ্ব্যবহারকারীর কিছু হয় না। বরং তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করার কারণে এবং তাকে কষ্ট দেয়ার কারণে তাদের সাংঘাতিক গুনাহ হয়।”['শারহু মুসলিম' (সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা) গ্রন্থ (১৬/১১৫) থেকে সমাপ্ত]

ইমাম কুরতুবী বলেন:

তুমি যতক্ষণ এর উপর অটল থাকবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে তোমার সাথে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী থাকবে" অর্থাৎ আল্লাহ্‌তাদের দুর্ব্যবহারের বিপরীতে তোমাকে ধৈর্য দিয়ে, উত্তম চরিত্র দিয়ে সাহায্য করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের উপর তোমার মর্যাদাকে সমুন্নত করবেন যতক্ষণ তুমি যা উল্লেখ করেছো তাদের সাথে তোমার সে আচরণের উপর বহাল থাক।”[আল-মুফহিম থেকে (৬/৫২৯)]

তাই আপনার কর্তব্য দোয়া ও সদ্ব্যবহার অব্যাহত রাখা। আপনার বোনের আচরণে ধৈর্য ধারণ করা। এ ধৈর্যের ফলে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং ইনশা আল্লাহ্‌আপনাদের মাঝে শত্রুতা চলে যাবে।

আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: ভাল কাজ আর মন্দ কাজ সমান নয় ভাল কাজ দিয়ে (মন্দ কাজের) জবাব দিবে দেখবে, যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে যেন এক অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গিয়েছে[সূরা ফুস্‌সিলাত, আয়াত: ৩৪-৩৫]

দুই:

আপনার বোনের দুর্ব্যবহারের বদলে সুব্যবহার করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করা ও নিজেকে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখা— যদি সদ্ব্যবহারের এই উচ্চ স্তর ধারণ করা আপনার পক্ষে সম্ভবপর না হয় এবং তার সাথে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে আপনি কষ্ট পান ও ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে আপনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাতে কোন গুনাহ হবে না; ইনশা আল্লাহ্‌; যতটুকু সম্পর্ক ছিন্ন করলে আপনি নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন এবং তার অনিষ্ট থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন।

ইবনে আব্দুল বার্‌র বলেছেন: “আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, কোন মুসলিমের জন্য তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা নাজায়েয। তবে যদি তার সাথে কথা বললে ও সম্পর্ক রাখলে ব্যক্তির দ্বীনদারি নষ্টের ভয় করে কিংবা তার দুনিয়া ও আখিরাতের কোন ক্ষতি হয়; যদি এমনটি হয় তাহলে তার জন্য তার থেকে দূরে থাকা ও তাকে বর্জন করার অবকাশ রয়েছে। অনেক সুন্দর সম্পর্কচ্ছেদ কষ্টদায়ক মেলামেশার চেয়ে উত্তম। কবি বলেছেন:

“যদি সম্প্রীতি রক্ষা অবজ্ঞাকে অনিবার্য করে তবে উত্তম সম্পর্কচ্ছেদ উভয় পক্ষের জন্যই কল্যাণকর।”।[আত্‌তামহীদ (৬/১২৭)]

আরও জানতে দেখুন: 143596 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android