ডাউনলোড করুন
0 / 0

ভাইরাস থেকে সুরক্ষামূলক পিপিই পরিহিত ব্যক্তি কিভাবে ওযু ও নামায সম্পন্ন করবেন?

প্রশ্ন: 335623

পুরুষ ও নারী গোটা দেহকে আবৃতকারী পিপিই (সুরক্ষামূলক পোশাক) পরে কি নামায পড়তে পারবেন? যে ব্যক্তি পিপিই পরে আছেন তার ওযু ছুটে গেলে তিনি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবেন; অথচ তার পক্ষে পিপিই খোলা সম্ভবপর নয়। বিশেষতঃ চিকিৎসা সেবায় নিযুক্ত ডাক্তারগণ?

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

এক:

ভাইরাস থেকে সুরক্ষামূলক পোশাক পিপিই পরে নামায পড়তে কোন অসুবিধা নাই। এমনকি যদি সে পোশাক গোটা দেহকে ঢেকে রাখে তবুও। যেহেতু এ পোশাক পরিহিত মুসল্লির পক্ষে মাটিতে নাক ও কপাল রাখা সম্ভবপর। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "আমি সাতটি হাড়ের (অঙ্গের) উপর সেজদা দিতে আদিষ্ট হয়েছি: কপালের উপর, তিনি হাত দিয়ে নাকের দিকে ইশারা করলেন, দুই হাতের উপর, দুই হাঁটুর উপর এবং দুই পায়ের আঙ্গুলের অগ্রভাগের উপর।"[সহিহ বুখারী (৮১২) ও সহিহ মুসলিম (৪৯০)]

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন: "এ অঙ্গগুলোর কোন অংশ সরাসরি (জমিন) স্পর্শ করা ওয়াজিব নয়।" কাযী বলেন: "যদি কেউ পাগড়ীর প্যাঁচ, পাগড়ীর আঁচল কিংবা শামলার উপর সেজদা করে তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে; এ ব্যাপারে একটাই রেওয়ায়েত আছে। এটি ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানিফারও মাযহাব। এ ছাড়া গরমের দিনে ও শীতের দিনে কাপড়ের উপর সেজদা দেয়ার অবকাশ আছে মর্মে মত দিয়েছেন: আতা, তাউস, নাখাঈ, শাবী, আওযাঈ, মালেক, ইসহাক ও কিয়াসপন্থীগণ।

পাগড়ীর প্যাঁচের উপর সেজদা দেয়ার মত দিয়েছেন: হাসান বসরী, মাকহুল, আব্দুর রহমান বিন ইয়াযিদ। শুরাইহ তাঁর টুপির উপর সেজদা দিয়েছেন।"[আল-মুগনী (১/৩০৫)]

শাইখ উছাইমীনকে এমন ব্যক্তির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যিনি খুব বড় চশমা পরেন এবং তার পক্ষে সাতটি অঙ্গের উপর পরিপূর্ণভাবে সেজদা করা সম্ভব হয় না; কখনও নাক রাখার বিপত্তি ঘটে।

জবাবে তিনি বলেন: "যদি নাকের অগ্রভাগ ভূমিতে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয় তাহলে এমন সেজদা চলবে না। যেহেতু এক্ষেত্রে চশমাটাই চেহারাকে বহন করে। যেহেতু চশমাটা নাকের অগ্রভাগের উপরে থাকে না। বরং চশমাটা থাকে চক্ষুদ্বয়ের সমান্তরালে। তাই সেজদা সহিহ হবে না। যে ব্যক্তি এমন কোন চশমা পরে আছেন যার কারণে তার নাক সেজদার স্থানে পৌঁছা বাধাগ্রস্ত হয় তার উচিত হবে সেজদার সময় চশমা খুলে ফেলা।"[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন উছাইমীন (১৩/১৮৬)]

নামাযে মুখ ঢেকে রাখা মাকরুহ। কিন্তু প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে এটি মাকরুহ হবে না।

"আল-শারহুল মুমতি"তে (২/১৯৩) বলা হয়েছে: মূলটেক্সট "মুখের উপর ও নাকের উপরে আচ্ছাদন": অর্থাৎ মুখের উপর ও নাকের উপর আচ্ছাদন দেয়া মাকরুহ। তা এভাবে যে রুমাল বা পাগড়ী মুখের উপর বা নাকের উপর রাখা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত অবস্থায় পুরুষ লোককে মুখ ঢাকতে বারণ করেছেন।[আবু দাউদ (৬৪৩), ইবনে মাজাহ (৯৬৬) তাদের সুনান গ্রন্থে 'হাসান' সনদে বর্ণনা করেছেন] এবং যেহেতু এর কারণে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়, তেলাওয়াত ও যিকিরের হরফগুলো স্পষ্ট হয় না। তবে এ বিধান থেকে বাদ যাবে কেউ যদি হাই দেয়ার সময় হাইকে প্রশমিত করার জন্য মুখ ঢাকে। এতে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু কোন কারণ ছাড়া ঢাকলে সেটা মাকরুহ। যদি নামাযীর পাশে কোন দুর্গন্ধকর কিছু থাকে যা নামাযীকে নামায পড়তে কষ্ট দেয় এবং সে জন্য আচ্ছাদন পরার প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা জায়েয। যেহেতু তা একটি প্রয়োজন। অনুরূপভাবে কারো যদি সর্দি হয় এবং সে যদি মুখ না ঢাকে এতে করে তার এলার্জির সমস্যা হয়; সেক্ষেত্রে এটাও একটি প্রয়োজন; যার প্রেক্ষিতে মুখ আচ্ছাদিত করা বৈধ হবে।"[সমাপ্ত]

আরও জানতে দেখুন: 69855 নং প্রশ্নোত্তর।

দুই:

পিপিই পরে ওযু করতে কোন বাধা নেই; যদি পরিধানকারীর পক্ষে ওযুর অঙ্গগুলো ধৌত করা ও মাথা মাসেহ করা সম্ভব হয়। এমনকি সেটা যদি হাত দিয়ে পিপিই-এর ভেতরে পানি নিয়ে করতে পারেন তবুও। আর মোজার উপরে মুকীম হলে একদিন একরাত সময়কাল পর্যন্ত এবং মুসাফির হলে তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত মাসেহ করা জায়েয।

ইমাম বুখারী (৩৬৩) ও ইমাম মুসলিম (২৭৪) মুগিরা বিন শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। তখন তিনি বলেন: মুগিরা, পাত্রটি নাও। আমি পাত্রটি নিলাম। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটতে থাকলেন এক পর্যায়ে আমার থেকে আড়াল হয়ে গেলেন এবং নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করলেন। তাঁর গায়ে ছিল একটি শামদেশীয় জুব্বা। তিনি জুব্বার হাতা দিয়ে হাত বের করতে চাইলেন; কিন্তু কষ্টকর হয়ে গেল। শেষে তিনি জুব্বার নীচ দিয়ে হাত বের করেন। আমি তাকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি নামাযের জন্য ওযু করলেন এবং খুফ্‌ফ (চামড়ার মোজা)-এর উপর মাসেহ করলেন। এরপর নামায পড়লেন।"

সহিহ মুসলিমের ভাষ্যে এসেছে: "তাঁর গায়ে ছিল শামদেশীয় জুব্বা; যেটার হাতা সংকীর্ণ থাকে।"

অতএব, যে ব্যক্তির গায়ে পিপিই পরা থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে ওযু করা সম্ভবপর হয় তাহলে কোন অসুবিধা নাই। আর যার পক্ষে ওযু করা সম্ভবপর নয় তাকে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য পিপিই খুলে ফেলতে হবে। যদি খুলতে সমস্যা হয় ও কষ্টকর হয়; বিশেষতঃ যে ডাক্তারদেরকে অধিকাংশ সময় পিপিই পরে থাকতে হয় তাদের জন্য যোহর ও এশার নামায একত্রে অগ্রিম কিংবা বিলম্বে আদায় করা জায়েয হবে। কেননা নামায একত্রে আদায় করা জায়েয হওয়ার কারণ হল: সমস্যা ও কষ্ট দূর করা; যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তিহাযাগ্রস্ত নারীকে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের জন্য পবিত্রতা অর্জন করার কষ্টের কারণে একত্রে নামায আদায় করার অবকাশ দিয়েছেন।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: নামায কসর (রাকাত সংখ্যা হ্রাস) করার কারণ হল: সফর। তাই সফর ছাড়া নামায কসর করা জায়েয নয়। পক্ষান্তরে, নামায একত্রিত করার কারণ হল: প্রয়োজন ও ওজর। তাই যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সংক্ষিপ্ত সফর হোক কিংবা দীর্ঘ সফর হোক নামায একত্রিত করতে পারবে।

অনুরূপভাবে একত্রিত করা হয় বৃষ্টির কারণে, রোগের কারণে এবং ইত্যাদি অন্যান্য কারণে। উদ্দেশ্য হচ্ছে- জটিলতা দূর করা।"[মাজমুউল ফাতাওয়া (২২/২৯৩) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android