কিছু কিছু পিপঁড়া জুস তৈরীর পাউডারে প্রবেশ করে। আমার মনে হয়, সেগুলো মরে গেছে। যদি পিঁপড়া, মাছি বা মশার মত পোকামাকড় খাবার বা পানীয়তে পড়ে কিংবা প্রবেশ করে; মৃত হোক কিংবা জীবিত— আমরা কি এ খাবার খেতে পারি বা পান করতে পারি? নাকি খাওয়া বা পান করার আগে এ পোকাগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে?
খাবারে যে পোকামাকড় পড়ে সেগুলোর বিধান
প্রশ্ন: 336476
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
শরিয়ত খারাপ জিনিসকে হারাম করেছে।
আল্লাহ্তাআলা বলেন: “(এরা তো তারাই) যারা সেই রাসূল ও নিরক্ষর নবীর অনুসরণ করে যার কথা তারা তাদের তাওরাত ও ইনজীলে লিখিত পাচ্ছে। তিনি তাদেরকে ভালকাজ করার আদেশ দেন ও মন্দকাজ করতে নিষেধ করেন, তাদের জন্য ভাল জিনিসকে বৈধ ও খারাপ জিনিসকে অবৈধ ঘোষণা করেন।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭]
ওহী নাযিলের সময়কার আরবেরা পোকামাকড় খাওয়াকে খারাপ বিবেচনা করত; এ কুরআনের মাধ্যমে প্রথমতঃ যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
“আল্লাহ্তাআলার বাণী: ‘তোমাদের জন্য (খাওয়া) নিষিদ্ধ করা হয়েছে: মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ্ব্যতীত অন্যের নামে জবাইকৃত প্রাণী’।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩] এই বাইরে আরবরা যা কিছুকে ভাল বিবেচনা করত সেটা হালাল। যেহেতু আল্লাহ্তাআলা বলেন: ‘তাদের জন্য ভাল জিনিসকে বৈধ করেন’। অর্থাৎ দলিলে হালালকৃত জিনিস ব্যতীত আর যা কিছুকে তারা ভাল বিবেচনা করে। যেহেতু অন্য আয়াতে এসেছে: ‘লোকেরা আপনার কাছে জানতে চায় কি কি তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। বলুন, তোমাদের জন্য যাবতীয় ভাল জিনিস হালাল করা হয়েছে।’ [সূরা মায়িদা, আয়াত: ৪] যদি এখানে দলিল দ্বারা যা কিছু হালাল সাব্যস্ত সেগুলো উদ্দেশ্য হত তাহলে এটি তাদের প্রশ্নের জবাব হিসেবে যথাযথ হত না।
আর আরবরা যেটাকে খারাপ বিবেচনা করত সেটা হারাম। যেহেতু আল্লাহ্তাআলা বলেছেন: “খারাপ জিনিসকে অবৈধ ঘোষণা করেন।” [সূরা মায়িদা, আয়াত: ৪]।
যাদের ভাল বিবেচনা ও খারাপ বিবেচনা ধর্তব্য তারা হচ্ছেন: হিজাযের শহরে বসবাসকারীগণ। কারণ তাদের উপরই কিতাব নাযিল হয়েছে এবং নাযিলকৃত কিতাব দ্বারা ও সুন্নাহ্দ্বারা তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাই কিতাব-সুন্নাহ্র শব্দমালার ব্যবহার জানার ক্ষেত্রে তাদের প্রথাগত ব্যবহার রেফারেন্সযোগ্য; অন্যদের ব্যবহার নয়। এক্ষেত্রে মরুবাসীরা ধর্তব্য নয়; যেহেতু তারা জরুরী অবস্থা ও ক্ষুধার কারণে যা পায় তাই খায়…।
এটি যখন সাব্যস্ত হল সুতরাং পোকামাকড় খারাপ জিনিসের অন্তর্ভুক্ত; যেমন- কীট, গুবরে পোকা, তেলাপোকা, ইঁদুর, গিরগিটি, তক্ষক, টিকটিকি, গেছু ইঁদুর, বিচ্ছু, সাপ ইত্যাদি খারাপ জিনিস হিসেবে গণ্য।
এটি ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেয়ির অভিমত…”। [আল-মুগনী (১৩/৩১৬-৩১৭) সমাপ্ত]
এটি অধিকাংশ মাযহাবের অভিমত।
ইবনু হুবাইরা (রহঃ) বলেন: “তারা (আলেমগণ) এই মর্মে একমত যে, জমিনের পোকামাকড় হারাম; তবে ইমাম মালেক ছাড়া। এক বর্ণনা মতে, তিনি এগুলোকে মাকরুহ বলেন, আর অপর বর্ণনামতে বলেন: হারাম।”[ইখতিলাফুল আয়িম্মাতিল উলামা (২/৩৩৫) থেকে সমাপ্ত]
আর বেশি জানার জন্য পড়ুন 21901 নং প্রশ্নোত্তর।
দুই:
পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে খাবার থেকে এসব পোকামাকড় আলাদা করা ও দূরীভুত করা আপনাদের উপর আবশ্যক— এসব পোকামাকড় খারাপ হওয়ার কারণে। এ কথা সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য যদি পোকাগুলো দূর করা সাধ্যগ্রাহ্য হয়; এতে কঠিন কষ্ট না হয়— পোকাগুলো দেখা যাওয়ার থাকার কারণে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি কোন মাছি তোমাদের কারো পানীয়তে পড়ে সে যেন মাছিটিকে এর ভেতরে ডুবিয়ে দেয়; অতঃপর উঠিয়ে ফেলে দেয়। কারণ মাছির এক ডানায় রয়েছে রোগ; অন্য ডানায় রয়েছে নিরাময়ক।”[সহিহ বুখারী (৩৩২০)]
কিন্তু, এ পোকাগুলো যদি নিতান্ত অল্প ও এত ছোট হয় যে, সেগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন সেক্ষেত্রে তা ক্ষমার্হ। কেননা শরিয়ার উদ্দেশ্য কাঠিন্য ও কষ্ট লাঘব করা।
আল্লাহ্তাআলা বলেন: “আল্লাহ্তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তিনি তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৫]
আল্লাহ্তাআলা বলেন: “আল্লাহ তোমাদের উপর জটিলতা আরোপ করতে চান না”।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৬]
আল-মিরদাওয়ী (রহঃ) বলেন:
“শাইখ তাক্বী উদ্দিন নির্বাচন করেছেন: তুচ্ছ পরিমাণ নাপাকি সাধারণভাবে সবক্ষেত্রে ক্ষমার্হ; খাবারের ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে; এমনকি ইঁদুরের বিষ্টা। তিনি ‘আল-ফুরু’ গ্রন্থে বলেন: অর্থাৎ এটাই ছড়াকারের নির্বাচিত অভিমত। আমি বলব: ‘মাজমাউল বাহরাইন’ গ্রন্থে বলেছেন: আমি বলব: অধিক যুক্তিযুক্ত হল পোশাকপরিচ্ছদ ও খাবারদাবারের ক্ষেত্রে তা ক্ষমার্হ হওয়া— এর কাঠিন্য অধিক হওয়ার কারণে। কোন আকলবান ব্যক্তি এই সমস্যার সার্বিকতাকে অস্বীকার করতে পারেন না। বিশেষতঃ খাদ্যশস্য ভাঙ্গার কল, চিনি ও তেলের কলে। ইঁদুরের উচ্ছিষ্ট, মাছির রক্ত ও মল থেকে বেঁচে থাকার চেয়ে এটি থেকে বেঁচে থাকা অধিক কঠিন। মাযহাবের অনেক আলেম এটি পবিত্র হওয়ার মতকে নির্বাচন করেছেন।”[আল-ইনসাফ (২/৩৩৪-৩৩৫) থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব