আমি করোনায় আক্রান্ত। বর্তমানে রাশিয়ার একটি হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে আছি। আমি হায়েয থেকে ও নামাযের জন্য পবিত্র হতে চাই। কিন্তু আমি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করতে পারছি না এবং গোসল করতে পারছি না। আরও খারাপ অবস্থা হল তায়াম্মুম করার জন্য মাটিও নাই। আমি একটি জেনারেল রুমে আছি। আমি নামায আদায় করতে পারছি না। আমি কি সিটেই নামায পড়তে পারব। দয়া করে জানাবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা। আমার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।
যে নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করছেন তিনি হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার গোসল করতে পারছেন না এবং মাটিও পাচ্ছেন না
প্রশ্ন: 336772
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
আমরা আল্লাহ্র কাছে আপনার সুস্থতার জন্য দোয়া করছি।
যদি ঠাণ্ডা বা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আপনার রোগ বেড়ে যায় কিংবা সুস্থতা বিলম্বিত হয় তাহলে আপনার জন্য গোসলের বদলে তায়াম্মুম করা জায়েয। হাসপাতালের বাইরে থেকে পলিথিনে বা এ জাতীয় অন্য কিছুতে কিছু মাটি নিয়ে আসা যায় কিংবা দেয়াল বা মেজেতে ধুলি থাকলে এগুলোর উপরও তায়াম্মুম করা যায়।
অনুরূপ বিধান ওযুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি পানি ব্যবহার করলে আপনার ক্ষতি হয় তাহলে আপনি ওযুর বদলে তায়াম্মুম করবেন।
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: "যেহেতু ইসলামী শরিয়া সহজতা ভিত্তিক তাই আল্লাহ্ তাআলা ওজরগ্রস্তদের ইবাদত পালনকে তাদের ওজর অনুযায়ী সহজ করেছেন; যাতে করে তারা বিনা কষ্টে, নির্বিঘ্নে তাদের ইবাদত পালন করতে পারে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "তিনি তোমাদের উপর কষ্ট আরোপ করেননি"। তিনি আরও বলেন: "তিনি তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; কঠিন করতে চান না"। তিনি আরও বলেন: "তোমরা আল্লাহ্কে সাধ্যানুযায়ী ভয় কর"। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "যখন আমি তোমাদেরকে কোন আদেশ করি তখন তোমরা সাধ্যানুযায়ী সেটা পালন কর"। তিনি আরও বলেন: "নিশ্চয় দ্বীন সহজ"।
তাই রোগী যদি ছোট অপবিত্রতা থেকে ওযু করার জন্য কিংবা বড় অপবিত্রতা থেকে গোসল করার জন্য পানি ব্যবহার করতে না পারে; তার অক্ষমতার কারণে, কিংবা রোগবৃদ্ধি বা সুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশংকা থেকে; তাহলে তিনি তায়াম্মুম করবেন। তায়াম্মুম হল: "তিনি তার দুইহাত পবিত্র মাটির উপর একবার রাখবেন। তারপর আঙ্গুলের পেট দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করবেন এবং হাতের তালু দিয়ে কব্জি মাসেহ করবেন। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ মলত্যাগ করে আসে বা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর; আর পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে; তথা তোমরা তোমাদের চেহারাগুলো ও হাতগুলো মাসেহ করবে।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]
পানি ব্যবহারে অক্ষম ব্যক্তির হুকুম যিনি পানি পাচ্ছেন না তার হুকুমের মতই। যেহেতু আল্লাহ্ বলেছেন: "তোমরা আল্লাহ্কে সাধ্যানুযায়ী ভয় কর"। এবং যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যখন আমি তোমাদেরকে কোন আদেশ করি তখন তোমরা সাধ্যানুযায়ী সেটা পালন কর।"[আল-ফাতাওয়া আল-মুতাআল্লিকা বিত-তিব্ব ওয়া আহকামিল মারযা; পৃষ্ঠা-২৬]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: "যে রোগী মাটি পাচ্ছেন না তিনি কি দেয়ালের উপর, অনুরূপভাবে বিছানার উপর তায়াম্মুম করবেন; নাকি করবেন না?
জবাবে তিনি বলেন: দেয়াল الصعيد الطيب (পবিত্র মাটি)র অন্তর্ভুক্ত; যদি সে দেয়াল পাথরের হয় কিংবা মাটি দিয়ে নির্মিত ইটের হয়; সেক্ষেত্রে এর উপরে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।
আর যদি কাঠ দিয়ে বা রঙ দিয়ে মোড়ানো হয় তাহলে যদি এমন দেয়ালের ওপর ধুলি থাকে তাহলে এর উপর তায়াম্মুম করা যাবে; এতে অসুবিধা নাই এবং এমন ব্যক্তি যেন জমিনের উপরেই তায়াম্মুম করলেন। যেহেতু ধুলি জমিন থেকে উৎপন্ন পদার্থ।
আর যদি দেয়ালের উপর ধুলি না থাকে তাহলে এটি الصعيد এর অন্তর্ভুক্ত হবে না এবং এর উপর তায়াম্মুম করা যাবে না।
আর বিছানার ব্যাপারে বলব: যদি বিছানার উপরে ধুলি থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা যাবে; অন্যথায় যাবে না। যেহেতু বিছানা الصعيد এর অন্তর্ভুক্ত নয়।"[ফাতাওয়াত তাহারাহ (পৃষ্ঠা-২৪০) থেকে সমাপ্ত]
দুই:
আপনার উপর নামাযের রুকু, সেজদা, বৈঠক ইত্যাদি যাবতীয় আরকানসহ নামায আদায় করা আবশ্যক; এমনকি আপনি যদি সাধারণ রুমে থাকেন তবুও, এমনকি রুমে যদি পুরুষ মানুষ থাকে তবুও। ওজর ছাড়া নামাযের কোন একটি রোকন ছেড়ে দিলে নামায হবে না।
রুমে পুরুষ মানুষ থাকা কিংবা তারা মহিলা মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকাটা নামাযের রোকন ছেড়ে দেয়ার মত কোন ওজর নয়। আপনি ঢিলেঢালা পূর্ণাবৃতকারী পোশাক পরে নামায পড়বেন; যেমনিভাবে আপনি বেগানা পুরুষ আছে এমন স্থানে বেরোবার সময় পরে থাকেন।
সৌদি ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
"যদি কোন নারীর পাশে বেগানা পুরুষ থাকে তাহলে কিভাবে নামায পড়বে; যেমনটি ঘটে থাকে মসজিদে হারামে? কিংবা সফরের সময়; যদি রাস্তায় মহিলাদের নামাযের স্থান বিশিষ্ট কোন মসজিদ না পাওয়া যায়?"
জবাবে তাঁরা বলেন: "নামাযের সময় নারীর গোটা দেহ আবৃত করা আবশ্যক; কেবল চেহারা ও কব্জিদ্বয় ছাড়া। কিন্তু যদি বেগানা পুরুষদের সামনে নামায পড়তে হয় তাহলে গোটা দেহ ঢাকা নারীর উপর আবশ্যক; এর মধ্যে চেহারা ও কব্জিদ্বয়ও অন্তর্ভুক্ত হবে।"[ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা (৭/৩৩৯)।
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করি তিনি যেন আপনার আমলগুলো কবুল করে নেন এবং আপনাকে সুস্থতা দান করেন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব