আমার বাবার জীবনের শেষ দিনগুলোতে আমি তার চিকিৎসা করতাম। তিনি ফুসফুসের অগ্রসর স্তরের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। আমি দুইদিন ইনজেকশনের মাধ্যমে তাকে ঔষধ দিয়েছি। কিন্তু ইনজেকশন দেয়াকালে কিছু হাওয়া শিরার ভেতরে ঢুকে গেছে। আমি জানতাম না যে, এই হাওয়া ভয়ংকর। যেহেতু আমার পিতার রোগটি অগ্রসর পর্যায়ে ছিলেন। এর একদিন পর আমার বাবা মারা গেছেন (আল্লাহ্ তার প্রতি অনুগ্রহ করুন)। এর জন্য আমি কি গুনাহগার? আমাকে কি কাফ্ফারা পরিশোধ করতে হবে? কতজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা আবশ্যক? আমি অনুভব করছি যে, গুনাহ করে ফেলেছি। কেননা হতে পারে আমি মৃত্যুর কারণ। এটি আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। কেননা আমি এ বিষয়টির ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতাম না।
নিজের পিতাকে ইনজেকশন দিতে গিয়ে কিছু হাওয়া ঢুকে গিয়ে বাবা মারা গেছেন; এমতাবস্থায় কি তাকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হবে?
প্রশ্ন: 339386
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
আমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনার পিতার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তাকে ক্ষমা করে দেন, আপনাকে উত্তম ধৈর্য ধারণের তাওফিক দেন, আপনার সওয়াবকে বৃদ্ধি করে দেন।
এই মাসয়ালাটির সিদ্ধান্ত ডাক্তারদের কাছ থেকে জানতে হবে যে, আপনার কর্মটির পরিপ্রক্ষিতে মৃত্যুটি ঘটেছে; নাকি এমনটি নয়?
যদি নির্ভরযোগ্য তিনজন ডাক্তার বলেন যে, বাহ্যতঃ মৃত্যুর কারণ হচ্ছে ইনজেকশনের মাধ্যমে হাওয়া ঢুকে যাওয়া সেক্ষেত্রে আপনি ক্ষতিপূরণ বহন করবেন। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির ওয়ারিশদেরকে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা আবশ্যক হবে; তবে মাফ করে দেয়া হলে ভিন্ন কথা এবং আপনার উপর কাফ্ফারা পরিশোধ করা আবশ্যক হবে। কাফ্ফারা হচ্ছে: একটি দাস আযাদ করা। যদি না পাওয়া যায় তাহলে লাগাতর দুইমাস রোযা রাখা। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “একজন ঈমানদার আরেকজন ঈমানদারকে হত্যা করতে পারে না; তবে ভুলক্রমে হত্যা করলে ভিন্ন কথা। কেউ যদি কোন ঈমানদার লোককে ভুলক্রমে হত্যা করে তাহলে তাকে একজন ঈমানদার দাস মুক্ত করতে হবে এবং নিহতের পরিবারকে রক্তমূল্য পরিশোধ করতে হবে, তবে তারা মাফ করে দিলে ভিন্ন কথা। যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের কোন শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং ঈমানদার হয় তাহলে একজন ঈমানদার দাস মুক্ত করতে হবে। আর যদি এমন কোন গোষ্ঠীর লোক হয় যাদের সাথে তোমাদের শান্তিচুক্তি আছে তাহলে তার পরিবারকে রক্তমূল্য পরিশোধ করতে হবে এবং একজন ঈমানদার দাস মুক্ত করতে হবে। যে তা করতে পারবে না তাকে আল্লাহ্র কাছ থেকে পাপমুক্তি কামনায় অবিরাম দুই মাস রোযা রাখতে হবে। আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা আন-নিসা, ৪: ৯২]
রক্তমূল্য আপনার আকিলার (পিতৃবর্গীয় আত্মীয়স্বজনের) উপর আবশ্যক হবে; আপনি সে রক্তমূল্য থেকে কোন কিছু গ্রহণ করতে পারবেন না।
তিনজন ডাক্তার ধর্তব্য হওয়ার ক্ষেত্রে দেখুন: স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (২৫/৮০), শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম-এর ফতোয়াসমগ্র (১১/২৫৪) এবং আমাদের ওয়েবসাইটের 175020 নং প্রশ্নোত্তরটি।
আকিলা কারা, আকিলা যদি না থাকে কিংবা তারা যদি রক্তমূল্য পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে এ সম্পর্কে জানতে 52809 নং ও 175020 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
আর যদি ডাক্তারেরা বলেন যে, শিরাতে হাওয়া ঢুকাটা মৃত্যুর কারণ নয় তাহলে আপনার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব