ডাউনলোড করুন
0 / 0

নারীর জন্য অপর নারী বা মোহরেম পুরুষের সামনে যা কিছু খোলা রাখা জায়েয

প্রশ্ন: 34745

বর্তমান যামানায় অনেক নারী পুরুষ মানুষ না থাকলে মহিলাদের সামনে এত সংকীর্ণ পোশাক পরে থাকেন যে তাদের পিঠ ও পেটের বড় একটা অংশ খোলা থাকে। আবার অনেকে ঘরে সন্তানদের সামনে একই ধরনের শর্ট পোশাক পরে থাকেন – এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কি?

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন:

সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

ইসলামের প্রথম যুগের নারীগণ আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এবং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের বরকতে পুতঃপবিত্রতা, লজ্জাশীলতা ও শালীনতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিলেন। সে সময়ে নারীগণ পরিপূর্ণ শরীর আচ্ছাদনকারী পোশাক পরতেন। নারীদের সামনে অথবা মোহরেম পুরুষের মধ্যে অবস্থানকালে তারা খোলামেলা চলতেন বা অনাবৃত থাকতেন বলে জানা যায় না। শতাব্দীর পর শতাব্দী, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, এমনকি নিকট অতীত পর্যন্ত মুসলিম নারীসমাজ এভাবেই চলে এসেছেন। এরপর নানা কারণে অনেক নারীর মধ্যে পোশাক ও চরিত্রের অবক্ষয় শুরু হয়েছে। সে বিষয়ে বিশদ আলোচনার স্থান এটি নয়।

নারীর প্রতি নারীর দৃষ্টি ও মেয়েদের উপর আবশ্যকীয় পোশাকের ব্যাপারে প্রচুর ফতোয়া আসার পরিপ্রেক্ষিতে ফতোয়া কমিটি মুসলিম নারীকুলকে এই মর্মে অবহিত করছে যে, লজ্জার ভূষণে নিজেকে অলংকৃত করা নারীর উপর ফরজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লজ্জাকে ঈমানের শাখা আখ্যায়িত করেছেন। শরিয়তের বিধান ও সামাজিক প্রথাগত লজ্জা হচ্ছে- নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে, শালীনতা বজায় রেখে চলবে এবং এমন চরিত্র লালন করবে যা তাকে ফেতনা ও সন্দেহ-সংশয়ের উৎস থেকে দূরে রাখবে। কুরআনের সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ করে- কোন নারী অপর নারীর সামনে তার দেহের ততটুকু অংশ খোলা রাখতে পারবে যতটুকু মোহরেমদের সামনে খোলা রাখা জায়েয। অর্থাৎ সাধারণতঃ বাড়িঘরে থাকাকালে ও গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে যতটুকু উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ততটুকু। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩১]

এই হলো কুরআনের সুস্পষ্ট দলিল। সুন্নাহও এটাই প্রমাণ করে। এর উপরেই রাসূলের স্ত্রীগণ, সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীগণ ও তাঁদেরকে সঠিকভাবে অনুসরণকারী মুমিন নারীগণ আজ পর্যন্ত চলে আসছেন। আয়াতে যাদের সম্মুখে সৌন্দর্য প্রকাশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেটা হচ্ছে- সাধারণতঃ ঘরে থাকাকালে, গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে যা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং যা ঢেকে রাখা কঠিন। যেমন- মাথা, হস্তদ্বয়, ঘাড় ইত্যাদি। এর চেয়ে বেশি কিছু উন্মুক্ত রাখার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহর কোন দলিল নেই। বরং এর চেয়ে বেশি উন্মুক্ত করলে নারীর প্রতি নারী আসক্ত হওয়ার দুয়ার খুলে যাবে; বাস্তবে এ ধরনের আসক্তির অস্তিত্ব রয়েছে এবং এ ধরনের আচরণ অন্য নারীদের জন্য খারাপ উদাহরণ তৈরী করবে। উপরন্তু এটি অমুসলিম নারী, বেহায়া ও বেশ্যাদের পোশাক অনুকরণের নামান্তর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে অনুসরণ করে সে তাদের দলভুক্ত।”[ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ] সহিহ মুসলিমে (২০৭৭) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার গায়ে কুসুমের রঙে (লাল রং) রঞ্জিত দুটি কাপড় দেখে বললেন: এগুলো কাফেরদের পোশাক। তুমি এগুলো পরবে না।”

সহিহ মুসলিমে (২১২৮) আরো এসেছে- দুই শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখি নাই। এক শ্রেণীর মানুষ তাদের কাছে গুরুর লেজের মত চাবুক থাকবে যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। আর এমন নারী যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, নিজে নষ্টা, অন্যকেও নষ্টকারিনী। তাদের মাথা উটের বাঁকা কুঁজের মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।” হাদিসে ‘এমন নারী যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ’ এ কথার অর্থ হচ্ছে- কোন নারী এমন কোন পোশাক পরা যে পোশাক দেহকে আচ্ছাদিত করে না। তাই সে যদিও পোশাক পরেছে কিন্তু বাস্তবে সে উলঙ্গই থেকে গেছে। যেমন- এমন স্বচ্ছ পোশাক পরা যাতে তার চামড়া পর্যন্ত দেখা যায়। অথবা এমন পোশাক পরা যা তার শরীরের ভাঁজগুলো পর্যন্ত ফুটিয়ে তোলে। অথবা এত শর্ট-পোশাক পরা যা তার শরীরের সবটুকু অংশ আবৃত করে না।

তাই মুসলিম নারীর কর্তব্য হলো- মুমিনদের মাতৃবর্গ, সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীগণ ও তাঁদেরকে সঠিকভাবে অনুসরণকারী নারীগণের আদর্শকে আঁকড়ে ধরা। পর্দা ও শালীনতা রক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। এটি তাদেরকে ফেতনা থেকে দূরে রাখবে, মনের মধ্যে খারাপ কামনার উদ্রেক থেকে হেফাযত করবে।

অনুরূপভাবে মুমিন নারীদের উপর ফরজ হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যেসব পোশাক হারাম করেছেন, যেগুলো অমুসলিম নারীদের পোশাক বা চরিত্রহীন নারীদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সেগুলো পরিহার করা। আল্লাহর আনুগত্য, তাঁর নিকট থেকে সওয়াব পাওয়ার আশা এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে এসব পোশাক বর্জন করতে হবে।

এছাড়া প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ তার অধীনস্থ নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা। অধীনস্থ নারীদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ, অশ্লীল, সংকীর্ণ ও উত্তেজক পোশাক পরার সুযোগ না দেয়া। তার জেনে রাখা উচিত, কেয়ামতের দিন প্রত্যেক কর্তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।

আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করছি তিনি যেন মুসলমানদের অবস্থা সংশোধন করে দেন। তাদের সকলকে যেন সঠিক পথে পরিচালিত করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী ও দুআকবুলকারী। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের উপর আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। সমাপ্ত।

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সংকলন (১৭/২৯০)

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সংকলনে (১৭/২৯৭) এসেছে-

সন্তানদের সামনে ততটুকু খোলা যাবে প্রথাগতভাবে যা খোলা রাখা হয়। যেমন- চেহারা, দুই হাতের কব্জি, দুই বাহু, দুই পা ইত্যাদি। সমাপ্ত।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android