ডাউনলোড করুন
0 / 0
200120/08/2021

​​​​​​​যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতার অবাধ্য হওয়া ও তাঁদের বদদোয়ার কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তার কি হেদায়ত পাওয়া সম্ভব?

প্রশ্ন: 348830

আমরা কি সন্তানের উপর পিতামাতার বদদোয়াকে প্রতিহত করতে পারব? এক যুবক মসজিদে নামায আদায়ে নিয়মিত ছিল; এমনকি ফজরের নামাযও। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াতকারী ছিল। আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় সে তার পিতামাতাকে রাগান্বিত করল। তখন তারা তাকে লানত দিয়ে বদদোয়া করলেন যে, তার উপর আল্লাহ্‌র লানত। এরপর যুবকটি পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। এমনকি নামায ছেড়ে দিল। আল্লাহ্‌র যিকির পছন্দ করে না। এভাবে তার পিতাকে আবারও রাগাল। তিনি তার উপর দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার, চতুর্থবার, পঞ্চমবার লানত দিয়ে বদদোয়া করলেন। যদিও পিতার উদ্দেশ্য বদদোয়া করা নয়। কিন্তু তীব্র রাগ থেকে তিনি লানত দিয়ে দোয়া করেছেন। কারণ পিতা এইভাবে দোয়া করতে অভ্যস্ত। আমরা কি কোন নেক আমলের মাধ্যমে এই দোয়াকে প্রতিহত করতে পারব? উল্লেখ্য, এই যুবকটি পূর্ণ চরিত্রের যুবকদের মধ্যে অন্যতম ছিল। এখন এমন হয়েছে যে, তার মধ্যে ভালো কিছু নেই। এমনকি তার ব্যাপারে কুফরের আশংকা হচ্ছে। কেননা এখন ইসলামের নাম গন্ধও তার মাঝে নেই।

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

যতদিন মানুষের হায়াত আছে ততদিন তাওবার দরজা উন্মুক্ত; যতক্ষণ পর্যন্ত না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে তাওবা করবে আল্লাহ্‌ তার তাওবা কবুল করবেন।[সহিহ মুসলিম (২৭০৩)]

ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তাওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না মৃত্যুর গড়গড় শব্দ শুরু না হয়[সুনানে তিরমিযি (৩৫৩৭)]

আল্লাহ্‌ তাআলা সকল প্রকার গুনাহ থেকে তাওবা কবুল করেন।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: তিনি বলেন: বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।[সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩]

আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ রাতের বেলা তাঁর হাতকে প্রসারিত করে দেন যাতে করে দিনের বেলায় গুনাহকারীর তাওবা কবুল করতে পারেন এবং দিনের বেলা তাঁর হাতকে প্রসারিত করে দেন যাতে করে রাতের বেলায় গুনাহকারীর তাওবা কবুল করতে পারেন।[সহিহ মুসলিম (২৭৫৯)]

তাই কোন বান্দার তাওবার ব্যাপারে নিরাশ হওয়া জায়েয নয়। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: নিশ্চয় কাফেরেরা ব্যতীত আল্লাহ্‌র রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয় না।[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭] তিনি আরও বলেন: তিনি বললেন: পথভ্রষ্টরা ব্যতীত কেউ তার প্রভুর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয় না।[সূরা হিজর, আয়াত: ৫৬]

তাই আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।

ফাযালা বিন উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: তিন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র চাদর নিয়ে টানাটানি করে; কেননা আল্লাহ্‌র চাদর হচ্ছে তাঁর অহংকার এবং তাঁর লুঙ্গি হচ্ছে তাঁর মহত্ব। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র নির্দেশের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। আর হচ্ছে আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হওয়া।[মুসনাদে আহমাদ (৩৯/৩৬৮), মুসনাদের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। আলবানী ‘সিলসিলাতুল আহাদিছিস সাহিহা’ গ্রন্থে (২/৮১) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন: সর্বাধিক বড় কবিরা গুনাহ হলো: “আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করা। আল্লাহ্‌র পাকড়াও থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবা, আল্লাহ্‌র রহমত থেকে হতাশ হওয়া এবং তাঁর দয়া থেকে নিরাশ হওয়া।”[আল-মুজামুল কাবীর (৯/১৭১), আলবানী ‘সিলসিলাতুল আহাদিছিস সাহিহা’ গ্রন্থে (৫/৭৯) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

তাই আপনাদের জন্য ভালো হয় এই ব্যক্তিকে তাওবার দিকে আহ্বান করা, তাকে নসিহত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং দোয়ার মাধ্যমে তার প্রতি অনুগ্রহ করা।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।[সূরা গাফির, আয়াত: ৬০] তিনি আরও বলেন: তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী।[সূরা নিসা, আয়াত: ৩২]

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বদদোয়ার কারণে কোন বান্দার উপর পথভ্রষ্টতা নির্ধারণ করেন (তাকদীর করেন), আবার দোয়ার কারণে সেই তাকদীর উঠিয়ে নেন।

এই যুবকেরর পাশে যে ব্যক্তি রয়েছে তার কর্তব্য হলো: কোমলতা দিয়ে তাকে হেদায়েতের দিকে ফিরে আসার আহ্বান করা। তাকে নসিহত করার জন্য যথোপযুক্ত উপকরণগুলো তালাশ করা; যেমন- উত্তম কথা, নেক সঙ্গি যারা তাকে ভালো কাজে সহযোগিতা করবে এবং ভালো কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে, কুরআনে কারীমের কিছু আয়াতের তেলাওয়াত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন কিছু হাদিস যা তাকে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসার ও তাওবা করার প্রতি প্রেরণা জাগাবে।

এরপর তার পিতামাতাকেও উপদেশ দেয়া। এই ব্যাপারে সাবধান করা যে, শরিয়ত যে কোন মুমিনকে লানত করার ব্যাপারে নিষেধ করেছে। কোন মুমিন লানতকারী হবে না। অপবাদ আরোপকারী হবে না। কোন মুমিনকে লানত করা তাকে হত্যা করার তুল্য; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সনদে সাব্যস্ত হয়েছে।

যেহেতু কোন মুমিন গুনাহগার হওয়া সত্ত্বেও তাকে লানত করা কবিরা গুনাহ তাই সুনির্দিষ্টভাবে কোন মুমিনকে লানত করা বৈধ নয়। সুতরাং সেই সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিটি যদি লানতকারীর সন্তান হয় তাহলে বিষয়টি কত গুরুতর হতে পারে?!

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android