আমি প্রাইভেট সেক্টরে চাকুরী করি। মাসিক আমরা যে কাজ সম্পন্ন করি সেটাকে সংখ্যা বা পয়েন্ট আকারে হিসাব করা হয়। এরপর সে পয়েন্টগুলো বছর শেষে যোগ করা হয়। এ পয়েন্টের ভিত্তিতে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বা লাভ দেয়া হয়। যে যে ডিপার্টমেন্টের অধিভুক্ত সে ডিপার্টমেন্ট দায়িত্বাবলী কিংবা যাকে বলা হয় টার্গেট এমনভাবে নির্ধারণ করে যাতে করে অধিকাংশ কর্মীর পক্ষে সেটা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়। যদি না কেউ ছুটির দিনগুলোতেও কাজ না করে কিংবা অফিসিয়াল ডিউটির সময়ের আগে বা পরেও কাজ না করে। অন্যথায় এই টার্গেট ফুল করতে পারে না। প্রশ্ন হলো: আমি কি গুনাহগার হব কিংবা আমার পাপ হবে কিংবা আমার সম্পদে হারামের সন্দেহ ঢুকবে— যদি দায়িত্বাবলীর কিছু অংশ সম্পন্ন না করা হয়; সময়ের অনুপাতিক হারে যে দায়িত্বাবলী অন্যায্যভাবে আমার উপর ও আমার সহকর্মীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। বাহ্যতঃ সামষ্টিক বিবেচনায় আমি কাজটি সম্পন্ন করেছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাজের অংশ বিশেষ সম্পন্ন হয়েছে; অপর অংশ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এই পয়েন্টগুলো এই ভিত্তিতে যোগ করা হয় যে, মোটের উপর কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, কাজের বড় অংশ, ৯০% বাহ্যিকভাবে ও গোপনে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা হয়। আমরা সকল পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন লাভ নাই।
যে ব্যক্তির চাকুরীর দায়িত্ব অনেক; তিনি কিছু পালন করেন, আর কিছু বাহ্যতঃ পালন করেন প্রকৃতপক্ষে করেন না— এর হুকুম কি?
প্রশ্ন: 352057
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
চাকুরীজীবীর উপর তার চুক্তিতে যে কর্ম ও দায়িত্বের উল্লেখ আছে সেটা পালন করা আবশ্যক। যদি তিনি তাতে কসুর করেন তাহলে তিনি যতটুকু কাজ করেছেন ততটুকুর বেতনের হকদার হবেন।
যদি চাকুরীর দায়িত্বাবলী এত বেশি হয় যে, সাধারণতঃ ডিউটির সময় এই দায়িত্বাবলী সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট নয় সেক্ষেত্রে এই চাকুরীজীবীর সামনে এই অপশনগুলো থাকবে: তিনি এটি মেনে নিয়ে চাকুরী চালিয়ে যাবেন কিংবা নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি হলে চুক্তি আর নবায়ন করবেন না কিংবা মাসিক চুক্তি হলে মাসের শেষে কাজ করা স্থগিত করে দিবেন।
যদি সেই ব্যক্তি শর্তগুলো মেনে নেন তাহলে তার জন্য কাজে কসুর করার সুযোগ থাকবে না।
আপনি প্রশ্নে যা উল্লেখ করেছেন ‘বাহ্যতঃ কাজ সম্পন্ন দেখানো; প্রকৃতপক্ষে নয়’— এটি ধোঁকাবাজি, অন্যায়ভাবে হারাম ভক্ষণ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা।"[সূরা নিসা, আয়াত: ২৯]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কোন ব্যক্তির সম্পদ তার স্বাচ্ছন্দচিত্ত ছাড়া গ্রহণ করা হালাল নয়।”[মুসনাদে আহমাদ (২০১৭২), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’-এ (১৪৫৯) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়।”[সহিহ মুসলিম (১০২)]
সুতরাং আপনি আপনার চাকুরীর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করুন; সাথে সাথে উপরস্থ কর্তৃপক্ষের কাছে দায়িত্ব কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যান।
আমরা আল্লাহ্র দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে সাহায্য করেন এবং আপনাকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে রিযিক দেন।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব