আমি ইসলামী ব্যাংক থেকে লাভের একটি অংশ পেতাম; যেখানে আমি আমার অর্থগুলো ডিপোজিট করতাম; যাতে করে সে সব সন্দেহপূর্ণ লেনদেন থেকে বিরত থাকতে পারি যেগুলোতে কিছু ভুল ঘটতে পারে। এরপর পরিবর্তিত ফতোয়া আসল যা কেবল চলতি হিসাবে অর্থ রাখাকে আবশ্যক বলে। ১। আমার অনুকূলে যে লাভগুলোর অর্ডার পূর্বেই করা হয়েছে সেগুলোর অবশিষ্টাংশের হুকুম কি? আমার উপরে কি সেগুলোর মুনাফাসহ কত হতে পারে সেটা হিসাব করে সেটা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য গরীবদেরকে দিয়ে দেয়া আবশ্যক; নাকি ফতোয়া পরিবর্তন হওয়ার দিন থেকে হিসাব করব? ২। ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেটগুলো কি করব? আমি কি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারব এবং এরপর সেগুলোকে আর নবায়ন করব না? নাকি তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলোকে বাতিল করতে হবে এবং চুক্তিতে উল্লেখিত মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ার প্রেক্ষিতে যে ক্ষতি হয় সেটা বহন করতে হবে?
তিনি কি ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেটগুলো বাতিল করে দিবেন; এই ইনভেস্টমেন্ট হারাম মর্মে ফতোয়া ইস্যু হওয়ার পর? পুরাতন মুনাফাগুলোর হুকুম কি হবে?
প্রশ্ন: 357250
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
যদি কোন ইসলামী ব্যাংক তার অর্থের একটি অংশ বন্ডে রাখে, কিংবা সুদ-ভিত্তিক ট্রেজারি বিলে রাখে কিংবা organized tawarruq এ বিনিয়োগ করে তাহলে এই ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ করা জায়েয হবে না। কেননা ব্যাংক তার বিনিয়োগের চুক্তিতে মৌলিকভাবে নিজের পক্ষে এবং প্রতিনিধি হিসেবে বিনিয়োগকারীদের পক্ষের ভূমিকা পালন করে। এতে করে ব্যাংক যে হারাম লেনদেন করে এর পাপ তাদের উপরও বর্তায়। হারাম মুনাফা কাউকে দিয়ে দেয়ার দ্বারা তারা পাপ থেকে রেহাই পাবে না।
দুই:
আপনি হারাম জানার আগে সুদভিত্তিক যে লাভগুলো গ্রহণ করেছেন সেটা থেকে আপনি উপকৃত হতে পারেন; চাই নিজে খরচ করার মাধ্যমে কিংবা আপনার কাছে সঞ্চিত রাখার মাধ্যমে। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্ তাআলার বাণী: “অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার নিকট তার প্রভুর কাছ থেকে উপদেশ আসার পর সে যদি (সুদ খাওয়া থেকে) বিরত হয় তাহলে অতীতে যা (নেওয়া) হয়েছে তা তারই থাকবে।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৭৫]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: “আর যে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন সন্দেহ নেই তা হলো: কোন দলিলকে অসমর্থিত ব্যাখ্যা (তা’বীল)-র ভিত্তিতে কিংবা অজ্ঞতার কারণে কেউ যা গ্রহণ করেছে; নিঃসন্দেহে তার ক্ষেত্রে ‘অতীতে যা নিয়েছে সেটা তার’— এটি প্রযোজ্য হবে; যেমনটি প্রমাণ করছে কিতাব, সুন্নাহ ও কিয়াস।”[তাফসির আয়াতিন উশকিলাত আলা কাছিরিন মিনাল উলামা (২/৫৯২)]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “যদি কেউ না জানে যে, এটা হারাম; তাহলে পূর্বে সে যা কিছু গ্রহণ করেছে সেটা তার। তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কিংবা কেউ যদি কোন আলেমের ফতোয়া দ্বারা প্রতারিত হয় যে, এটি হারাম নয়; সেও কোন কিছু প্রত্যাহার করবে না। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: অতএব, যার নিকট তার প্রভুর কাছ থেকে উপদেশ আসার পর সে যদি (সুদ খাওয়া থেকে) বিরত হয় তাহলে অতীতে যা (নেওয়া) হয়েছে তা তারই থাকবে এবং তার বিষয়টি (ফয়সালার ভার) আল্লাহ্র কাছে ন্যস্ত থাকবে।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৭৫][আল-লিকা আশ-শাহরি (১৯/৬৭) থেকে সমাপ্ত]
তিনি আরও বলেন: “আয়াতটির শিক্ষার মধ্যে রয়েছে: সুদ যে হারাম তা জানার পূর্বে কোন ব্যক্তি যা গ্রহণ করেছে সেটা তার জন্য হালাল। তবে শর্ত হলো: তাওবা করা এবং (সুদ) পরিহার করা।”[তাফসির সূরাতুল বাক্বারা (৩/৩৭৭) থেকে সমাপ্ত]
তিন:
এই ব্যাংকে বিনিয়োগ বর্জন করা আবশ্যক; চাই সেটা ইনভেস্টমেন্ট একাউন্টে হোক কিংবা নির্দিষ্ট মেয়াদী সনদে বিনিয়োগ হোক। এমনকি তা করতে গিয়ে যদি তার কিছু সম্পদের লোকসান হয় তবুও— সুদি লেনদেন থেকে পলায়নার্থে এবং আল্লাহ্ তাআলার এই বাণী বাস্তবায়নার্থে: “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং (তোমাদের কাছে) যে বকেয়া সুদ আছে তা ছেড়ে দাও; যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তা না কর তাহলে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে রাখ। আর যদি তোমরা তাওবা কর তাহলে তোমাদের মূলধন তোমাদের থাকবে। (এ ব্যাপারে) তোমরাও জুলুম করবে না এবং তোমাদের উপরও জুলুম করা হবে না।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৭৮, ২৭৯]
এবং জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে লানত করেছেন এবং বলেছেন: তারা সবাই সমান।[সহিহ মুসলিম (১৫৯৮)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব