প্রশ্ন: বিতিরের না পড়ার বিধান কী? বিতিরের নামায আদায় না করলে কী হবে?
বিতিরের নামায আদায়ে অবহেলা করার বিধান
প্রশ্ন: 36793
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
জমহুর আলেমের মতে, বিতির (বেজোড়) নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা (তাগিদপূর্ণ সুন্নত)। কোন কোন ফিকাহবিদ আলেমের মতে, বিতির নামাযকে ওয়াজিব।
বিতির নামায ওয়াজিব না হওয়ার পক্ষে দলিল হচ্ছে সহিহ বুখারী (১৮৯১) ও সহিহ মুসলিম (১১) এর হাদিস: তালহা বিন উবাইদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক লোক রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আল্লাহ্ আমার উপর কী কী নামায ফরয করেছেন আমাকে তা অবহিত করুন। তখন তিনি বললেন: “পাঁচ ওয়াক্ত নামায; তবে আপনি কোন নফল নামায আদায় করতে চাইলে সেটা আলাদা” আর সহিহ মুসলিমের ভাষ্যে এসেছে “দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায। সে বলল: আমার উপর এগুলো ছাড়া আর কিছু আছে? তিনি বললেন: না। তবে, আপনি নফল আদায় করতে পারেন”।
ইমাম নববী বলেন:
এই হাদিসে প্রমাণ রয়েছে যে, বিতির নামায ওয়াজিব নয়।[সমাপ্ত]
হাফেয ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন:
এই হাদিসে প্রমাণ রয়েছে যে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ছাড়া আর কোন নামায ওয়াজিব নয়; এর বিপরীতে কেউ কেউ বিতির নামাযকে ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নতকে ওয়াজিব বলেছেন।[সমাপ্ত]
তবে তা সত্ত্বেও এ নামায সবচেয়ে তাগিদপূর্ণ সুন্নত নামায। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে এ নামায আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সহিহ মুসলিমে (৭৫৪) এসেছে, আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা ভোর হওয়ার আগে বিতির নামায আদায় কর”
সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে এসেছে- আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ওহে আহলে কুরআন, তোমরা বিতির (বেজোড়) নামায আদায় কর। কারণ নিশ্চয় আল্লাহ্ হচ্ছেন- বেজোড়। তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন”।[আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে’ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
তাই নিজ গৃহে অবস্থানকালে কিংবা সফরে থাকাকালেও এ নামায নিয়মিত আদায় করা উচিত; যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদায় করতেন। সহিহ বুখারী (১০০০) ও সহিহ মুসলিমে (৭০০) ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে অবস্থায় বাহনের পিঠে ইশারা করে রাত্রিকালীন নামায আদায় করতেন; বাহন যেই দিকে মুখ করে চলুক না কেন। তবে, ফরয নামায ছাড়া। আর তিনি বাহনের পিঠেই বিতির নামায আদায় করতেন”।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
“বিতিরের নামায ওয়াজিব নয়। এটি মালেক ও শাফেয়ির অভিমত। আবু হানিফা বলেছেন: ওয়াজিব”। এরপর তিনি বলেন: আহমাদ বলেছেন: যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বিতিরের নামায পড়ে না সে একজন খারাপ লোক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হওয়ার কারণে তিনি এর উপর জোর তাগিদ দিতে ও উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন”।[মুগনি (১/৮২৭) পরিমার্জিত ও সমাপ্ত]
স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: বিতিরের নামায কি ওয়াজিব? যে ব্যক্তি একদিন বিতির নামায পড়ে অন্যদিন পড়ে না তাকে কি শাস্তি পেতে হবে?
জবাবে তাঁরা বলেন: বিতিরের নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা। মুমিনের উচিত এ নামায নিয়মিত আদায় করা। যে ব্যক্তি এ নামায একদিন আদায় করে, অন্যদিন আদায় করে না তাকে শাস্তি পেতে হবে না। কিন্তু, তাকে এ নামায নিয়মিত আদায় করার উপদেশ দেয়া হবে। তাছাড়া বিতির বা বেজোড় নামায ছুটে গেলে সে ব্যক্তি এর বদলে দিনের বেলায় জোড় নামায আদায় করে নিতে পারেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে করতেন। যেমনটি আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ঘুমের কারণে কিংবা রোগের কারণে রাতের নামায আদায় করতে না পারতেন তাহলে তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন।[সহিহ মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় রাতের নামায ১১ রাকাত আদায় করতেন। প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাতেন। এবং এক রাকাত বিতির আদায় করতেন। যদি তিনি ঘুমের কারণে কিংবা রোগের কারণে এ নামায আদায় করতে না পারতেন তখন তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন; যেমনটি আয়েশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন। এর ভিত্তিতে বলা যায় কোন ব্যক্তির স্বভাব যদি হয় তিনি প্রতি রাতে ৫ রাকাত নামায আদায় করেন, কিন্তু কোনদিন ঘুমের কারণে কিংবা অন্য কোন ব্যস্ততার কারণে আদায় করতে না পারেন তাহলে দিনের বেলা তার জন্য ৬ রাকাত নামায আদায় করার বিধান রয়েছে। তিনি প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাবেন। অনুরূপভাবে তার অভ্যাস যদি হয় ৩ রাকাত নামায আদায় করা তাহলে তিনি দুই সালামে ৪ রাকাত আদায় করবেন। যদি তার অভ্যাস হয় ৭ রাকাত আদায় করা তাহলে তিনি ৮ রাকাত আদায় করবেন; প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাবেন।[সমাপ্ত]
[ফাতাওয়াল লাজনাহ্ আল-দায়িমা (৭/১৭২)]
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব