0 / 0

মসজিদে নববী যিয়ারতের সময় যেসব ভুল হয়ে থাকে

প্রশ্ন: 36860

প্রশ্ন: আমি মসজিদে নববী যিয়ারত করার সময় লক্ষ্য করেছি কিছু মানুষ নবীজির হুজরার দেয়াল মোছন করেন। কেউ কেউ কবরের সামনে বুকের উপর হাত রেখে এমনভাবে দাঁড়ান যেভাবে নামাযে দাঁড়ায়; তাদের এ আমলগুলো কি সঠিক?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

আলহামদুলিল্লাহ।

ইতিপূর্বে36863 নংপ্রশ্নোত্তরেমসজিদে নববীযিয়ারত করার আদবগুলো উল্লেখ করাহয়েছে। এখনযিয়ারতকারীগণযে ভুলগুলোকরে থাকেন সেগুলোউল্লেখ করব:

এক:

রাসূলকেডাকা,বিপদমুক্তিরজন্য তাঁরকাছে প্রার্থনাকরা, তাঁরসাহায্য চাওয়া।যেমন- কোন কোনলোক বলে থাকে,“হে আল্লাহররাসূল, আমাদেরঅসুস্থ লোককেসুস্থ করেদিন; হেআল্লাহররাসূল, আমারঋণ পরিশোধ করেদিন, হে আমারওসিলা, হেআমারপ্রয়োজনপূর্ণেরদরজা” ইত্যাদিশরিকীউক্তিগুলো; যেউক্তিগুলোবান্দার উপর আল্লাহরএকক অধিকারতাওহীদের পরিপন্থী।

দুই:

কবরেরসামনেনামাযেরসুরতেদাঁড়ানো— ডানহাতবামহাতের উপররেখে বুকেরউপরে কিংবা নীচেরাখা। এটিহারাম কাজ।যেহেতুদাঁড়ানোর এপদ্ধতিটিইবাদত ওহীনতারঅবস্থা। এটিআল্লাহ ছাড়াঅন্য কারোজন্য করানাজায়েয।

তিন:

কবরেরকাছে ঝুঁকেপড়া, সিজদাকরা কিংবা এমনকিছু করা যাআল্লাহ ছাড়াঅন্য কারোজন্য করাজায়েয নয়।আনাস (রাঃ)থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: “কোনমানুষের জন্যমানুষকেসিজদা করাসঙ্গতনয়”[মুসনাদেআহমাদ (৩/১৫৮), আলবানী‘সহিহুততারগীব’গ্রন্থে (১৯৩৬ও ১৯৩৭) ও‘ইরওয়াউলগালিল’গ্রন্থে(১৯৯৮) হাদিসটিকেসহিহ বলেছেন।

চার:

কবরেরনিকটেআল্লাহর কাছেদোয়া করা।অথবা এ বিশ্বাসপোষণ করা যে,কবরের নিকটেদোয়া করলে কবুলহয়। এটি করাহারাম। কারণএটি শিরকেপতিত হওয়ারবাহন। যদিকবরের কাছেদোয়া করাকিংবা নবীজিরকবরের কাছেদোয়া করাউত্তম হত,সঠিক হত কিংবাআল্লাহর কাছেবেশি প্রিয় হততাহলে রাসূলসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামআমাদেরকেসেটা করার প্রতিউদ্বুদ্ধ করেযেতেন। কেননাযা কিছু উম্মতকেজান্নাতেরনৈকট্য হাছিলকরিয়ে দিবেএমন কোন কিছুবর্ণনা করাথেকে তিনি বাদদেননি। যখন তিনিএক্ষেত্রেউম্মতকেউদ্বুদ্ধকরেননি এরথেকে জানা গেলযে, এটিশরিয়তসিদ্ধনয়; হারাম ওনিষিদ্ধ কাজ।আবু ইয়ালা ওহাফেয যিয়া‘আল-মুখতারা’গ্রন্থেবর্ণনাকরেছেন যে,আলী বিন হুসাইন(রাঃ) একব্যক্তিকেদেখলেন যে,তিনি নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামেরকবরের সন্নিকটেএকটি ছিদ্রতেপ্রবেশ করেদোয়া করেন।তখন তিনি তাকেনিষেধ করলেনএবং বললেন:আমি তোমাদেরকেএমন একটিহাদিস বর্ণনাকরব না যা আমিআমার পিতাথেকে তিনিআমার দাদা,তিনি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেবর্ণনা করেনযে, তিনি বলেন:“তোমরা আমার কবরকেঈদ বা উৎসবস্থল(ঈদ বলা হয় এমনস্থানকে যা বারবারপরিদর্শন করাহয়) বানিও নাএবং নিজেদেরঘরগুলোকে কবর বানিওনা। তোমরাআমার উপর দরুদপড়। কেননা তোমরাযেখানেই থাকনা কেন তোমাদেরসালাম আমারনিকট পৌঁছানোহয়”।[সুনানেআবু দাউদ(২০৪২), আলবানীসহিহ আবু দাউদগ্রন্থে(১৭৯৬)হাদিসটিকেসহিহ বলেছেন]

পাঁচ:

যারামদিনাযিয়ারতে আসতেপারেনি তারাকোন কোনযিয়ারতকারীরমাধ্যমেরাসূলের কাছেসালাম প্রেরণকরা এবংযিয়ারতকারীগণএ সালাম পৌঁছানো।এটি বিদাতীকর্ম ও নবউদ্ভাবিতকর্ম। সুতরাংওহে সালামপ্রেরণকারী ওওহে সালামসমর্পনকারী এটিকরা থেকে বিরতথাকুন। নবীসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের এবাণীইআপনাদের জন্যযথেষ্ট: “তোমরাআমার উপর দরুদপড়। তোমরাযেখানেই থাকনা কেন তোমাদেরসালাম আমারনিকট পৌঁছানোহয়।”।

আরযথেষ্ট এবাণীটি:“নিশ্চয়আল্লাহর এমনকিছুবিচরণকারীফেরেশতারয়েছে যারাআমার কাছেআমার উম্মতেরসালাম পৌঁছেদেয়”।[মুসনাদেআহমাদ (১/৪৪১),সুনানে নাসাঈ(১২৮২), আলবানী‘সহিহুল জামে’গ্রন্থে(২১৭০)হাদিসটিকে সহিহবলেছেন]

ষষ্ঠ:

বারবারনবীজির কবরযিয়ারত করা।যেমন- প্রত্যেকফরয নামাযেরপর যিয়ারত করাকিংবা প্রতিদিননির্দিষ্টনামাযের শেষেযিয়ারত করা।এটি নবীসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামেরবাণী: “তোমরাআমার কবরকেউৎসবস্থল(বারবারযিয়ারতস্থল)বানিও না” এর সাথেসাংঘর্ষিক।ইবনে হাজারহাইছামী‘মিশকাত’ এরব্যাখ্যায় বলেন:ঈদ (عيدশব্দটিকেএখানে উৎসবঅনুবাদ করাহয়েছে) একটিউৎসবের নাম।ঈদকে ঈদ বলাহয় যেহেতু এটিঘুরেফিরে করাও পুনপুন করারমাধ্যমেঅভ্যাসে (عادة) পরিণত হয়েগেছে।হাদিসের অর্থহচ্ছে- তোমরা আমারকবরকে এমনস্থান বানিওনা যেখানে বারবার,পুনপুন,বহুবার আসাটাঅভ্যাস। একারণে তিনিবলেছেন:“তোমরা আমারউপর দরুদ পড়।কারণ তোমাদেরসালাম আমার নিকটপৌঁছে দেয়া হয়তোমরাযেখানেই থাকনা কেন”।সুতরাং দরুদপড়াইযথেষ্ট।[সমাপ্ত]

ইবনেরুশদ রচিত‘আল-জামে লিলবায়ান’ নামকগ্রন্থেএসেছে- যেবিদেশীআগন্তুকপ্রতিদিন নবীসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামেরকবরে আসেন তারব্যাপারেইমাম মালেককেজিজ্ঞেস করা হলেতিনি বলেন:বিষয়টি এমনহওয়া ঠিক নয়।এ প্রসঙ্গেতিনি হাদিসটিউল্লেখ করেন:“হে আল্লাহ,আপনি আমার কবরকেপৌত্তলিকতারস্থলে পরিণতকরবেন না; যেখানেপূজাহয়”[আলবানী‘তাহযিরুসসাজিদ মিন ইত্তিখাযিলকুবুরিমাসাজিদ’গ্রন্থে(২৪-২৬) হাদিসটিকেসহিহআখ্যায়িতকরেছেন]

ইবনেরুশদ বলেন:অতএব, বারবারকবরে গিয়েসালাম দেয়া,প্রতিদিনকবরে আসামাকরুহ; যাতেকরে কবরমসজিদের মতহয়ে না যায়;যেখানেনামাযের জন্যপ্রতিদিন আসাহয়। নবীসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজবাণীতে এব্যাপারেনিষেধকরেছেন। তিনিবলেন: “হেআল্লাহ, আমারকবরকেপৌত্তলিকতারস্থলে পরিণতকরবেননা”[দেখুন:ইবনে রুশদ এর ‘আল-বায়ানওয়াত তাহসীল’(১৮/৪৪৪-৪৪৫),সমাপ্ত]

কাযীইয়াযকেমদিনাবাসীএমন কিছুমানুষ সম্পর্কেজিজ্ঞেস করাহয় যারা প্রতিদিনকবরের সামনেএকবার বাএকাধিকবারদণ্ডায়মান হয়,সালাম দেয় ওকিছু সময় দোয়াকরে তখন তিনিবলেন: কোনফকীহ এমন কোনমত দিয়েছেলবলে আমার কাছেতথ্য নেই। এউম্মতের শেষপ্রজন্ম সেসবআমলের মাধ্যমেনেককার হবেযেসব আমলেরমাধ্যমেপ্রথম প্রজন্মনেককারহয়েছিল। আমারকাছে এউম্মতের প্রথমপ্রজন্মেরব্যাপারে এমনকোন তথ্য পৌঁছেনিযে, তারা এটিকরতেন।”[‘আল-শিফাবি তারিফিহুকুকিলমোস্তফা’(২/৬৭৬)]

সপ্তম:

মসজিদেরসকল দিক থেকেকবরেরঅভিমুখি হওয়াকিংবা যখনিমসজিদেপ্রবেশ করবেতখনি কবরেরদিকে মুখ করাকিংবা যখনিনামায শেষকরবে তখনি কবরেরদিকে মুখ করা।সালাম দেয়ারসময় দুইহাতদুইপাশে রেখেমাথা ও থুতনিনোয়ানো।এগুলো বহুল প্রসারিতবিদাত ও ভুল।

আল্লাহরবান্দারা,আল্লাহকে ভয়করুন। সকল বিদাতথেকে সাবধানহোন।কুপ্রবৃত্তিও অন্ধ অনুকরণপরিহার করুন।দলিল-প্রমাণেরভিত্তিতে আমলকরুন। আল্লাহতাআলা বলেন: “যেব্যক্তি তাররব প্রেরিতসুস্পষ্টপ্রমাণের উপরপ্রতিষ্ঠিত,সে কি তারন্যায় যারকাছে নিজেরমন্দ কাজগুলোশোভন করে দেয়াহয়েছে এবং যারানিজখেয়াল-খুশীরঅনুসরণকরেছে?”[সূরামুহাম্মদ,আয়াত: ১৪]

আমরাআল্লাহর কাছেপ্রার্থনাকরছি তিনি যেনআমাদেরকেরাসূলেরসুন্নাহঅনুযায়ীঅন্যদেরকে পথদেখাবারতাওফিক দেন।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android