পবিত্র রমযান মাস এলে মানুষ তারাবীর নামায অভিমুখী হয়। আমার প্রশ্ন হল: কিছু মানুষ এশার নামাযের পরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে ১১ রাকাত নামায পড়েন। আর কিছু মানুষ ২১ রাকাত নামায পড়েন; দশ রাকাত এশার পর, আর দশ রাকাত ফজরের আগে; এরপর বিতির (বেজোড়) নামায পড়েন। এ পদ্ধতির শরয়ি হুকুম কী? উল্লেখ্য, কেউ কেউ মনে করেন: ফজরের নামাযের আগে কিয়ামুল লাইল (রাত্রিকালীন নামায) আদায় বিদআত।
তারাবীর নামায বিদআত নয় এবং তারাবীর নামাযের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই
প্রশ্ন: 38021
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
তারাবীর নামায সুন্নত মর্মে মুসলমানদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। যেমনটি ইমাম নববী "আল-মাজমু" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নামায আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ ধরণের হাদিসের মধ্যে রয়েছে: "যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশা নিয়ে রমযান মাসে কিয়াম পালন করবে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।"[সহিহ বুখারী (৩৭) ও সহিহ মুসলিম (৭৬০)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্বুদ্ধকরণ এবং এ নামায মুস্তাহাব হওয়ার সপক্ষে মুসলমানদের ইজমা সংঘটিত হওয়ার পরেও কিভাবে এটি বিদআত হয়?!
খুব সম্ভব যিনি বিদআত বলেছেন তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, তারাবীর নামায পড়ার জন্য মসজিদে মসজিদে একত্রিত হওয়া বিদআত।
এ কথাও সঠিক নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে একাধিক রাতে এ নামায আদায় করেছেন। এরপর মুসলমানদের ওপর এ নামায ফরয করে দেওয়ার ভয় থেকে তিনি তা ত্যাগ করেছেন। পরবর্তীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মারা গেলেন এবং ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল তখন এ ভয় কেটে যায়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর তো আর ফরয হওয়া সম্ভব নয়। তখন উমর (রাঃ) এ নামায আদায় করার জন্য মুসলমানদেরকে একত্রিত করলেন। আরও জানতে দেখুন: 21740 নং প্রশ্নোত্তর।
তারাবীর নামাযের সময় এশার নামাযের পর থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। আরও জানতে দেখুন: 37768 নং প্রশ্নোত্তর।
তারাবীর নামাযের বিশেষ কোন রাকাত সংখ্যা নেই। বরং সংখ্যায় কম বেশি হওয়া জায়েয। প্রশ্নকারী যে দুটো সংখ্যার কথা জিজ্ঞেস করেছেন উভয়টি জায়েয।
প্রত্যেক মসজিদের মুসল্লিরা যেটাকে তাদের জন্য উপযুক্ত মনে করেন সেটা গ্রহণ করতে পারেন।
উত্তম হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেটা সাব্যস্ত সেটার উপর আমল করা। তিনি কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না; রমযানেও না, অন্য সময়েও না।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) তারাবীর নামাযের রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করার পর বলেন:
এ বিষয়টিতে প্রশস্ততা রয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি ১১ রাকাত পড়ে তাকেও বাধা দেওয়া যাবে না এবং যে ব্যক্তি ২৩ রাকাত পড়ে তাকেও বাধা দেওয়া যাবে না। বরং এক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে; আলহামদু লিল্লাহ।[ফাতাওয়াস শাইখ ইবনে উছাইমীন (১/৪০৭)]
দেখুন: 9036 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ