প্রশ্ন: কেউ যদি কোন নারীকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয় তখন সেই নারীর উপর আত্মরক্ষা করা কি ওয়াজিব? আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করা জায়েয হবে কি?
ধর্ষকের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করা কি ওয়াজিব?
প্রশ্ন: 4017
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
যে নারীর সাথে জোরপূর্বক যেনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে নারীর উপর আত্মরক্ষা করা ফরজ। তিনি কিছুতেই দুর্বৃত্তের কাছে হার মানবেন না। এজন্য যদিদুর্বৃত্তকে হত্যা করে নিজেকে বাঁচাতে হয় সেটা করবেন। এই আত্মরক্ষা ফরজ। ধর্ষণ করতে উদ্যত ব্যক্তিকে হত্যা করার কারণে তিনি দায়ী হবেন না। এর সপক্ষেদলিল হচ্ছে- ইমাম আহমাদ ও ইবনে হিব্বান কর্তৃক সংকলিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস “যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ।”এ হাদিসের ব্যাখ্যায় এসেছে- “যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ” অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী অথবা অন্য কোন নিকটাত্মীয় নারীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল (সে শহীদ)। যদি স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্য লড়াই করা ও ধর্ষকের হাত থেকে স্ত্রীকেবাঁচাতে গিয়ে নিহত হওয়া স্বামীর জন্য বৈধ হয় তাহলে কোননারী নিজের ইজ্জত নিজে রক্ষা করার জন্য প্রাণান্তকর লড়াই করা; এই ধর্ষক, জালিম ও দুর্বৃত্তের হাতে নিজেকে তুলে না দিয়ে নিহত হওয়া সে নারীর জন্য বৈধ হওয়া অধিক যুক্তিপূর্ণ। কেননা তিনি যদি নিহত হন তাহলে তিনি শহীদ। যেমনিভাবে কোন নারীর স্বামী তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে যদি নিহত হন তিনিশহীদ। শহীদি মৃত্যুরমর্যাদাঅনেক বড়। আল্লাহর আনুগত্যের পথে, তাঁর পছন্দনীয় পথে মারা না গেলে এ মর্যাদা লাভ করা যায় না। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা এ ধরনের প্রতিরোধকে তথাকোন ব্যক্তির তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকে এবং কোন নারীরতার নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকেপছন্দ করেন। আর যদি কোন নারী আত্মরক্ষা করতে সমর্থ্ না হন,পাপিষ্ঠ ও দুশ্চরিত্র লোকটি যদি তাকে পরাস্ত করে তার সাথে যেনাতে লিপ্ত হয় তাহলে এ নারীর উপর হদ্দ (যেনার দণ্ড)অথবা এর চেয়ে লঘু কোন শাস্তি কার্যকর করা হবে না। কারণ হদ্দ কায়েম করা হয় সীমালঙ্ঘনকারী, পাপী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির উপর।
ইবনে কুদামা হাম্বলির “মুগনী”নামক গ্রন্থে এসেছে-যে নারীকে কোন পুরুষ ভোগ করতে উদ্যত হয়েছে ইমাম আহমাদ এমন নারীর ব্যাপারে বলেন: আত্মরক্ষা করতে গিয়ে সে নারীযদি তাকে মেরে ফেলে… ইমাম আহমাদ বলেন: যদি সে নারী জানতে পারেন যে, এ ব্যক্তি তাকে উপভোগ করতে চাচ্ছে এবং আত্মরক্ষার্থে তিনি তাকে মেরে ফেলেন তাহলে সে নারীর উপর কোন দায় আসবে না। এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমাদ একটি হাদিস উল্লেখ করেন যে হাদিসটি যুহরি বর্ণনা করেছেন কাসেম বিন মুহাম্মদ থেকে তিনি উবাইদ বিন উমাইর থেকে। তাতে রয়েছে- এক ব্যক্তি হুযাইল গোত্রের কিছু লোককে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করল। সে ব্যক্তি মেহমানদের মধ্য থেকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টাকরেছিল। তখন সে মহিলা তাকে পাথর ছুড়ে মারেন। যার ফলে লোকটি মারা যায়। সে মহিলার ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেন: আল্লাহর শপথ, কখনই পরিশোধ করা হবে না অর্থাৎ কখনোই এই নারীর পক্ষ থেকে দিয়ত (রক্তমূল্য) পরিশোধ করা হবে না। কারণ যদি সম্পদ রক্ষার্থে লড়াই করা জায়েয হয় যে সম্পদ খরচ করা, ব্যবহার করা জায়েয তাহলে কোন নারীর তার আত্মরক্ষার্থে, খারাপ কাজ থেকে নিজেকে হেফাযত করতে গিয়ে, যেনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে- যে গুনাহ কোন অবস্থায় বৈধ নয়- লড়াই করা সম্পদ রক্ষার লড়াই এর চেয়ে অধিক যুক্তিপূর্ণ। এইটুকু যখন সাব্যস্ত হল সুতরাং সে নারীর যদি আত্মরক্ষা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে সেটা করা তার উপর ওয়াজিব। কেননা দুর্বৃত্তকে সুযোগ দেয়া হারাম। এক্ষেত্রে আত্মরক্ষা না করাটাই তো সুযোগ দেয়া।[আল-মুগনি (৮/৩৩১)] আল্লাহ ভাল জানেন।[আল-মুফাসসাল ফি আহকামিল মারআ (৫/৪২-৪৩)]
ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর “আত-তুরুকুলহুকমিয়্যা” গ্রন্থে বলেন: ১৮- (পরিচ্ছেদ) উমর (রাঃ) এর নিকট এক মহিলাকে আনা হল যে মহিলা যেনা করেছে। তিনি তাকে জিজ্ঞসাবাদ করলেন: মহিলাটি দোষ স্বীকার করল। উমর (রাঃ) তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন: এ নারীর কোন ওজর থাকতে পারে। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) মহিলাটিকে বললেন: কেন তুমি যেনা করেছ? মহিলাটি বলল: আমি এক লোকের সাথে একত্রে পশু চরাতাম।তার উটপালে পানি ও দুধ ছিল। আমার উটপালে পানি ও দুধ ছিল না। আমি পিপাসার্ত হয়ে তার কাছে পানি চাইলাম। সে অস্বীকার করে বলল- আমি আমাকে ভোগ করতে দিলে সে পানি দিবে। আমি (তার প্রস্তাব) তিনবার অস্বীকার করলাম।এরপর আমি এত তীব্র পিপাসা অনুভব করলামযেন আমার প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে। তখন আমি সে যা চায় তাকে তা দিলাম। বিনিময়ে সে আমাকে পানি পান করাল। তখন আলী (রাঃ) বললেন: আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)।
فَمَنْ اُضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلا عَادٍ فَلا إثْمَ عَلَيْهِ ، إنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
(অর্থ-অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।)[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৭৩]
সুনানে বাইহাকীতে এসেছে- আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামি হতে বর্ণিত তিনি বলেন: উমর (রাঃ) এর নিকট এক মহিলাকে ধরে আনাহল। সে মহিলা তীব্র পিপাসায় কাতর ছিল এবংএক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মহিলাটি রাখালের কাছে পানি চাইল। রাখাল তাকে পানি দিতে অস্বীকৃতি জানাল- যদি না মহিলারাখালকে জৈবিক চাহিদাপূরণ করার সুযোগ না দেয়। উমর (রাঃ) এ মহিলাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন: এ মহিলা অনন্যোপায় ছিল। আমার অভিমত হল- তাকে খালাস দিন। তখন উমর (রাঃ) মহিলাটিকে খালাস দিলেন। আমি বলব: এই বিধানএখনো চলমানআছে। যদি কোন নারী কোন পুরুষের কাছে থাকা খাবার বা পানীয়ের তীব্র প্রয়োজনের সম্মুখীন হয় এবং সে পুরুষ যেনা করা ছাড়া সেটা দিতে রাজি না হয়,আর সে নারীস্বীয়জীবন নাশের আশংকা করে নিজেকে সে পুরুষের হাতে তুলে দেয় সেক্ষেত্রে সে নারীর উপর শরয়ি হদ্দ (যেনার দণ্ড) কায়েম করা হবে না। কেউ যদি বলেন: এমতাবস্থায় নিজেকে তুলে দেয়া কি জায়েয; নাকি মৃত্যু হলেওধৈর্য রাখাওয়াজিব?উত্তর হচ্ছে: এই নারীর ক্ষেত্রে শরয়ি হুকুম হচ্ছে- জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার নারীর হুকুম। যে নারীকে এই বলেহুমকি দেয়া হয়:‘সুযোগ দিলে দে; না হয় তোকে মেরে ফেলব’। ধর্ষণের শিকার নারীর উপর হদ্দ কায়েম করা হবে না। মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য সে নারী নিজের ইজ্জত বিসর্জন দিতে পারে। তবে যদি কোন নারীধৈর্যধারণ করে মৃত্যুকেবরণ করে নেয় তবে সেটা তার জন্য উত্তম। কিন্তু এক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা তার উপর ফরজ নয়। আল্লাহই ভাল জানেন।
সূত্র:
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ