এক ব্যবসায়ী লোকের কাছে এক লোক কিছু অর্থ নিয়ে এসেছে যাতে করে এ অর্থ দিয়ে সে ব্যবসা করে। এ অর্থের মালিক ঘুষ ও সুদের লেনদেন করে। এক্ষেত্রে এই ব্যবসায়ীর কি কোন গুনাহ হবে?
যে ব্যক্তি ঘুষ ও সুদী লেনদেন করে তার সাথে যৌথ কারবারে প্রবেশ করা
প্রশ্ন: 48005
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
যে ব্যক্তি বিভিন্ন হারাম উৎস থেকে সম্পদ উপার্জন করে যেমন- সুদ, ঘুষ, চুরি, জালিয়াতি… ইত্যাদি; যদি তার সম্পদ হালাল-হারাম মিশ্রিত হয় তাহলে তার সাথে ক্রয়বিক্রয়, অংশীদারিত্বমূলক আর্থিক লেনদেন মাকরূহ সত্ত্বেও সহিহ হবে। আর যদি জানা যায় যে, ঠিক যে সম্পদটি সে কারবারে খাটাতে চাচ্ছে সেটা হারাম উৎস থেকে উপার্জিত; তাহলে তাকে অংশীদার হিসেবে নেয়া ও তার সাথে লেনদেন করা জায়েয নয়।
ইবনে কুদামা (৪/১৮০) বলেন:
“কেউ যদি এমন কোন ব্যক্তি থেকে ক্রয় করে যার সম্পদে কিছু হালাল ও কিছু হারাম রয়েছে; যেমন- জালিম শাসক, সুদী কারবারী: যদি জানা যায় যে, বিক্রিত পণ্য তার হালাল সম্পদ থেকে তাহলে সেটা হালাল। আর যদি জানা যায় যে, সেটা হারাম সম্পদ তাহলে সেটা হারাম…। আর যদি জানা না যায় যে, এটা কোন শ্রেণীর তাহলে আমরা এমন ক্রয়কে অপছন্দ করি (মাকরুহ বলি); যেহেতু এতে হারাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ক্রয়বিক্রয় বাতিল হবে না; যেহেতু হালাল হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে হারামের পরিমাণ কম হোক কিংবা বেশি হোক। এটি সংশয়পূর্ণ। হারামের অংশ বেশি বা কম হওয়ার অনুপাতে সংশয়ের মাত্রাও কমবেশি হবে।”[সমাপ্ত]
ক্বালয়ুবি ও আমিরা-এর হাশিয়াতে (২/৪১৮) এসেছে:
“মাকরূহ হওয়া সত্ত্বেও অংশীদারিত্ব কারবার সহিহ হয়। যেমন- জিম্মি, সুদখোর কিংবা যার অধিকাংশ সম্পদ হারাম তার সাথে অংশীদারিত্ব কারবার করা।”[সমাপ্ত]
দুসুক্বির হাশিয়াতে (৩/২৭৭) এসেছে:
“জেনে রাখুন, যে ব্যক্তির অধিকাংশ সম্পদ হালাল; আর অল্প কিছু হারাম: নির্ভরযোগ্য অভিমত হল— তার সাথে লেনদেন করা, ঋণ আদানপ্রদান করা, তার সম্পদ থেকে ভক্ষণ করা জায়েয; যেমনটি বলেছেন ইবনুল কাসিম। তবে এর সাথে দ্বিমত করে ‘আসবাগ’ হারাম বলেছেন।
পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তির অধিকাংশ সম্পদ হারাম; অল্প কিছু হালাল: ইবনুল কাসেমের অভিমত হচ্ছে তার সাথে লেনদেন করা; ঋণ আদানপ্রদান করা ও তার সম্পদ থেকে ভক্ষণ করা মাকরুহ। এটাই নির্ভরযোগ্য অভিমত। তবে, এর সাথে দ্বিমত পোষণ করে আসবাগ হারাম বলেছেন।
আর যে ব্যক্তির সম্পূর্ণ সম্পদ হারাম; “সম্পূর্ণ জিম্মা” বলে এটাকেই বুঝানো হয়েছে— তার সাথে লেনদেন করা, ঋণ আদানপ্রদান করা নিষিদ্ধ। আর্থিক লেনদেন ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ।[সমাপ্ত]
দুই:
যে ব্যক্তির অবস্থা এমন তার সাথে যৌথ কারবার করার আগে আপনার কর্তব্য হল: তাকে নসীহত করা। তাকে তওবা করা, জুলুম ছেড়ে দেয়া ও ভাল উপার্জনের প্রতি উৎসাহিত করা। কেননা জান্নাত হচ্ছে ভাল জায়গা; এখানে কেবল ভাল লোকই প্রবেশ করবে। উপর্যুপরি হারাম ভক্ষণ করা থেকে তাকে সাবধান করা। কেননা যে দেহ হারাম খেয়ে গড়ে উঠেছে এমন দেহ আগুনে জ্বলার অধিক উপযুক্ত।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব